বলিউডও রেহাই পায়নি করোনা অতিমারি থেকে। একের পর এক তারকার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে পরীক্ষায়।
গত ১ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন ওয়াজিদ খান। সঙ্গীত পরিচালক সাজিদ-ওয়াজিদ জুটির একজন ছিলেন তিনি।
ওয়াজিদের মৃত্যুর কারণ নিয়ে প্রথম থেকেই অস্পষ্টতা ছিল। তিনি দীর্ঘ দিন কিডনির অসুখে আক্রান্ত ছিলেন। শোনা যায়, পরে তিনি কোভিড আক্রান্তও হন। এমনকি, পরে এ-ও শোনা গিয়েছিলে, ওয়াজিদের মায়ের কোভিড পরীক্ষার রিপোর্টও পজিটিভ এসেছে।
‘বিশ্বাত্মা’, ‘পাত্থর কে ফুল’, ‘মুঝসে দোস্তি করোগে’, ‘ধড়কন’-সব বহু ছবির অভিনেতা কিরণ কুমার আক্রান্ত হন কোভিডে। তবে সত্তরোর্ধ্ব এই অভিনেতা জানান, তাঁর মধ্যে মৃদু উপসর্গ দেখা গিয়েছিল।
বাড়িতেই কোয়রান্টিনে ছিলেন তিনি। মে মাসের শেষে তাঁর রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। সুস্থ হওয়ার পরে কিরণ জানান, দীর্ঘ নিভৃতবাসে তাঁর সঙ্গী ছিল কল্পবিজ্ঞানের বই ও সিনেমা।
‘বেবি ডল’ এবং ‘চিট্টিয়া কলাইয়াঁ’ খ্যাত গায়িকা কণিকা কপূর বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলেন মার্চের শেষ সপ্তাহে। সে সময় জানা যায়, তিনি কোভিড পজিটিভ।
তার আগে ১৫ মার্চ লন্ডন থেকে দেশ ফেরেন কণিকা। কিন্তু নিজেকে ১৪ দিন হোম কোয়রান্টিন করে রাখার পরিবর্তে বেশ কয়েকটি পার্টিতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি নেত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া এবং তাঁর পুত্র সাংসদ দুষ্মন্ত সিংহ-ও। বসুন্ধরা-দুষ্মন্ত ছাড়াও ওই পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থানের আরও ৯৬ জন সাংসদ। এঁদের মধ্যে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, প্রাক্তন সেনা প্রধান ভি কে সিংহ, গজেন্দ্র শেখাওয়াত, অর্জুন রাম মেঘাওয়াল, কৈলাস চৌধুরি, সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি, রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌর, হেমা মালিনী, রীতা বহুগুণা, সাক্ষী মহারাজ প্রমুখ।
লখনউয়ের তাজমহল হোটেলে ১৩-১৫ মার্চের মধ্যে একাধিক পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন কণিকা। লন্ডন ভ্রমণের কথা লুকিয়ে যে ভাবে কণিকা পার্টিতে যোগ দিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন, তাতে তাঁর সমালোচনায় সরব হন অনেকেই।তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে লখনউ পুলিশ।
কণিকা কপূরকে নিয়ে বিতর্কের জের কাটতে না কাটতেই শোনা যায় বলিউডে নতুন করোনা আক্রান্তের খবর। এ বার রোগের শিকার হন প্রযোজক করিম মোরানির মেয়ে শাজা।
দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ার ঠিক আগে তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারতে ফেরেন। তাঁর সঙ্গে সঙ্গে প্রায় আক্রান্ত হন শাজার যমজ বোন জোয়া। তিনি রাজস্থান থেকে মুম্বই ফিরেছিলেন।
কয়েক দিনের মধ্যে কোভিড আক্রান্ত হন প্রযোজক করিম মোরানি নিজেও। তাঁর ভাই মহম্মদ মোরানি সংবাদমাধ্যমে জানান, করিমের স্ত্রী ও বাড়ির অন্য সদস্যদের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।
এক মাসের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’, ‘দিলওয়ালে’, ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ছবির প্রযোজক করিম মোরানি ও তাঁর দুই মেয়ে।
অতিমারির প্রভাব থেকে রেহাই পাননি ছোট পর্দার তারকারাও। নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় শো ‘হিপ হিপ হুররে’-এর অভিনেতা পুরব এখন লন্ডনবাসী। এপ্রিল মাসে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন ‘রক অন টু’ ছবির এই অভিনেতা।
তিনি জানান, প্রথমে তাঁর মেয়ে ইনায়া মৃদু সর্দিকাশিতে আক্রান্ত হয়। তার পর উপসর্গ ধরা পড়ে তাঁর স্ত্রী লুসির মধ্যে। এর পর পুরব নিজে এবং সবার শেষে আক্রান্ত হয় তাঁর ছেলে ওসিয়ান। পরে পুরব টুইট করে তাঁদের সবার সুস্থ হয়ে ওঠার খবরও জানান।
টেলিভিশন তারকা মোহিনা কুমারী কোভিড আক্রান্ত হওয়ার খবর জানান জুনের প্রথম সপ্তাহে। ‘ইয়ে রিশতা ক্যায়া কহেলতা হ্যায়’-এর এই তারকা-ই শুধু নন, আক্রান্ত হন তাঁর স্বামী উত্তরাখণ্ডের পর্যটনমন্ত্রীর ছেলে সুয়েশ রাওয়তও। সংক্রমণ থেকে রেহাই পাননি মোহিনার শাশুড়ি এবং ননদও। তাঁদের সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফেরেন।
টিনসেল টাউনের জন্য সবথেকে বড় আঘাত অপেক্ষা করে ছিল শনিবার। এ দিন রাতে অনুরাগীদের হৃদয়ে কাঁপন ধরিয়ে দেয় অমিতাভ বচ্চনের টুইট।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিগ বি-র বার্তা ছিল, ‘‘আমার করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ এসেছে। হাসপাতালে ভর্তি হলাম। হাসপাতালের তরফেই প্রশাসনকে জানানো হচ্ছে। পরিবারের বাকিরা এবং বাড়ির পরিচারকদের পরীক্ষা করানো হয়েছে। ফল এখনও জানা যায়নি। গত দশ দিনে যাঁরা আমার সান্নিধ্যে এসেছেন, প্রত্যেকে পরীক্ষা করিয়ে নিন!’’
বাবার সঙ্গে করোনা আক্রান্ত অভিষেক বচ্চনও। শনিবার রাতে টুইট করে নিজেই এ কথা জানান অভিষেক। তিনি লেখেন, “আজ সকালে আমার এবং বাবার কোভিড টেস্ট হয়। আমাদের মৃদু উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। রিপোর্টে আমাদের করোনা পজিটিভ এসেছে।”
জয়া ও ঐশ্বর্যার রিপোর্ট প্রথমে নেগেটিভ এলেও পরে রবিবার ঐশ্বর্যার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তাঁর মেয়ে আরাধ্যারও কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।
শনিবার সন্ধ্যায় মুম্বইয়ের নানাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অমিতাভকে। রাত বাড়তে নিজেই টুইট করে করোনা পজিটিভ হওয়ার খবর জানান, অমিতাভ। কিছু ক্ষণ পর অভিষেক জানান, তিনিও কোভিড পজিটিভ। আপাতত তাঁদের দু’জনের চিকিৎসা চলছে নানাবতীতে।
করোনা আক্রান্ত অভিনেত্রী র্যাচেল হোয়াইটও। ইন্দো-মার্কিন এই অভিনেত্রী নিজেই টুইট করে সে খবর জানিয়েছেন। এখন তিনি হোম কোয়রান্টিনে আছেন।
ইমরান হাশমীর বিপরীতে ‘উঙ্গলি’ ছবিতে অভিনয় করে র্যাচেলের আত্মপ্রকাশ বলিউডে। তিনি অভিনয় করেছেন দু’টি বাংলা ছবিতেও। তাঁর অসুস্থতার খবরে উদ্বিগ্ন টলিউড।