স্বজনপোষণের শিকার হতে হয়েছে বার বার। তাতেও নিষ্কৃতি নেই। নিজের অভিযোগ বলার পরেই ইন্ডাস্ট্রিতে কোণঠাসা করা হয়েছে। বলিউডে এমন কুশীলবের সংখ্যা কম নয়।
সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অকালমৃত্যুতে সেই তারকাদের পুরনো ক্ষত নতুন করে দগদগে হয়েছে। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।
সম্প্রতি রবিনা টুইট বার্তায় বলেছেন, কেরিয়ারে তিনিও এর কম দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। তিনি জানেন কতটা যন্ত্রণা হয় ভুক্তভোগীর।
নাম না করে রবিনা কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন তাঁর আমলের ‘গার্লস গ্যাং’-কে। অর্থাৎ কোনও এক নায়িকা এবং তাঁর সহযোগীরা। তাঁরা তাঁর কেরিয়ার শেষ করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ‘মস্ত মস্ত নায়িকার’।
নাম না করলেও এ কথা বলি মহলের অনেকেই জানেন, নব্বইয়ের দশকে নিজের কেরিয়ারের শিখরে থাকার সময়ে রবিনার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন করিশ্মা কপূর। অভিযোগ, নিজের ক্ষমতা, প্রভাবের দাপটে করিশ্মা কোণঠাসা করে দিয়েছিলেন রবিনাকে।
ষড়যন্ত্রে নাকি করিশ্মা নিজের পাশে পেয়েছিলেন তাঁর সে সময়কার প্রেমিককেও। একাধিক সাক্ষাৎকারে রবিনা অভিযোগ করেছেন, করিশ্মার প্রভাবে চারটি ছবি থেকে বাদ পড়েছিলেন রবিনা।
অবস্থা এমনও হয়েছিল যে, ইন্ডাস্ট্রি থেকে বহু দিন বিরতি নেন রবিনা। তাঁকে ফিরে আসতে সাহায্য করেছিলেন সুনীল শেট্টি। কিন্তু রবিনার অভিযোগ, প্রতিদ্বন্দ্বীর রোষ তাঁকে বরাবরই একঘরে করে রেখেছিল বলিউডে।
বিবেক ওবেরয়কে এক সময় হিন্দি ছবির ভবিষ্যৎ বলা হচ্ছিল। প্রতিশ্রুতিমান বিবেকের একের পর এক ছবি সুপারহিট হচ্ছিল। ‘কোম্পানি’, ‘সাথিয়া’ ছবির সাহায্যে বলিউডে নিজের জায়গা মজবুত করে নিয়েছিলেন সুরেশ ওবেরয়ের ছেলে।
কিন্তু অভিনেতা বাবার ছেলে হয়েও পিছিয়ে পড়তে হয়েছে বিবেককে। তার কারণ নাকি সলমন খান। সলমনের সঙ্গে প্রেম ভেঙে যাওয়ার পরে বিবেকের ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন ঐশ্বর্যা রাই। সে সময় রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে সলমনের বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন বিবেক। সলমন-ঐশ্বর্যার সম্পর্কের তিক্ততার রেশ পড়েছিল তাঁর বক্তব্যে।
এই সাংবাদিক বৈঠকের মাশুল দিতে হয়েছিল বিবেককে। তার পর থেকে বিবেকের কেরিয়ার সেই যে মুখ থুবড়ে পড়ল, আর কোনও দিন উঠলই না।
কেরিয়ার হল না। বিবেক-ঐশ্বর্যা প্রেমও ভেঙে গেল। নিজের ভুল বুঝতে পেরে বিবেক প্রকাশ্যে ক্ষমা চান সলমনের কাছে। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। শুরুর সময়ে আর ফিরে যেতে পারেনি বিবেকের কেরিয়ার।
অভিযোগ, সলমন এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের চাপে একের পর এক ছবি থেকে বাদ পড়েন বিবেক। শেষের দিকে তাঁকে কোনও ছবি অফারও করা হত না।
প্রতিভাবান গায়ক অরিজিৎ সিংহও রেহাই পাননি সলমনের রোষ থেকে। তাঁর ভুল হয়েছিল কোনও এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মঞ্চে সাধারণ পোশাক পরে যাওয়া।
সলমন তখন অরিজিৎকে প্রশ্ন করেছিলেন, “ঘুমিয়ে পড়েছিলে না কি?” উত্তরে অরিজিৎ বলেছিলেন, “কী করব! আপনারা ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছেন তো।” এই ঘটনার তখন সলমনের দিক থেকে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া মেলেনি। কিন্তু তিক্ততা অপেক্ষা করেছিল অরিজিতের জন্য।
অভিযোগ, এর পর সলমনের রোষে একের পর এক গানের সুযোগ চলে যেতে থাকে অরিজিতের কাছ থেকে। প্রথমে তাঁর কথা ভাবা হলেও শেষে সুযোগ চলে যায় অন্য শিল্পীর কাছে। দলাদলির শিকার হয়ে অরিজিৎ নিজে একটা পোস্ট করেন সলমনের বিরুদ্ধে। সেটা ভাইরালও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরে নিজের পোস্ট মুছে দেন অরিজিৎ।
সলমন-অরিজিৎ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। দুই তারকার সম্পর্ক নাকি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। বাংলার ছেলে নাকি এখনও ভাইজানের নেকনজরে নেই।
ইন্ডাস্ট্রিতে স্পষ্টবক্তা বলে সুনাম ও দুর্নাম, দুই-ই আছে কঙ্গনা রানাউতের। তিনি প্রকাশ্যে বিষোদগার করেছেন আদিত্য পাঞ্চোলি, মহেশ ভট্ট, হৃতিক রোশন ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে। টক শো-এ মুখের উপর কর্ণ জোহরকে ‘মুভি মাফিয়া’ বলেছেন। এর ফলে তাঁকেও ইন্ডাস্ট্রিতে বয়কটের শিকার হতে হয়েছে বলে কঙ্গনার অভিযোগ।
কঙ্গনার ছবি ‘জাজমেন্টাল হ্যায় ক্যয়া’ এবং ‘মণিকর্ণিকা’ নিয়ে বলিউডে প্রায় আলোচনাই হয়নি। দু’টি ছবি নিয়ে টুইট করেননি প্রায় কোনও তারকাই। পর্দার ঝাঁসির রানির অভিযোগ, স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন বলেই তাঁর এই দুর্দশা হয়েছে।
গোবিন্দর মতো তারকাও শিকার হয়েছেন টিনসেল টাউনের দলাদলির। নব্বইয়ের দশকে খান, কপূর এবং কুমার, সব পদবির নায়ককে টেক্কা দিয়েছিলেন তিনি। এমন সময়ও গিয়েছে, বছরে দশটা ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। বক্স অফিসে ভিড় টানতে পারার ক্ষমতা রাখা এই নায়ককেও সম্প্রতি কোণঠাসা করা হয়েছে বলে তাঁর নিজের অভিযোগ।
গোবিন্দ সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, তাঁর ছবি ‘রঙ্গিলা রাজা’ যাতে মুক্তি না পায়, তার জন্য বহু চেষ্টা করা হয়েছিল। শেষে ছবিটি মুক্তি পায় ২০১৯-এর জানুয়ারি মাসে। গোবিন্দ প্রকাশ্যে প্রশ্ন করেন, তিনি কী ভুল করেছেন, যে তাঁকে মঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না?
তার আগেও গোবিন্দ ষড়যন্ত্রের কোপে পড়েছিলেন বলে শোনা যায়। তাঁর নামে অভিযোগ ছিল, তিনি সেটে দেরি করে পৌঁছন। শেষে সেটে ঠিক সময়ে পৌঁছতে শুরু করেন গোবিন্দ। কিন্তু তাতেও রেহাই পাননি। এর পরেও একাধিক ছবিতে তাঁর অভিনীত অংশ কেটে ছোট করে দেওয়া হয়।
সুশান্ত সিংহ রাজপুতের রহস্যমৃত্যু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল লাইট সাউন্ড ক্যামেরার আড়ালে দীর্ঘ দিন ধরেই আছে অন্ধকারের নিকষ ছায়া। শুধু প্রতিভোর জোরে কোনও নবাগত প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলেই সেই ছায়া গ্রাস করে তাঁকে।