শান্ত স্বভাবের মেয়েটি কখনও হিন্দু-মুসলিমকে আলাদা ভাবে দেখেননি। এই বৈশিষ্ট্য তাঁর রক্তে রয়েছে। তাঁর পরিবারও নিজেদের থেকে হিন্দুদের স্বতন্ত্র ভাবে না। কিন্তু সেই মেয়েকেই এক সময় নিজের ভাবনার বাইরে বার হতে হয়েছিল। মুসলিম হওয়ার জন্য চূড়ান্ত অপমান করা হয়েছিল তাঁকে।
জোরজবরদস্তি তাঁর নাম বদলে ফেলা হয়েছিল। কেরিয়ারের তাগিদে একপ্রকার বাধ্য হয়ে তাতে রাজিও হতে হয়েছিল তাঁকে। অনেক বছর পর নিজের প্রকৃত পরিচয় ফিরে পান তিনি।
আপাত শান্ত স্বভাবের এই নায়িকাকে প্রথমে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা তৈরি করার জন্য নিজের পরিচয় বিসর্জন দিতে হয়েছিল। তার পর তাঁকে কেরিয়ারও বিসর্জন দিতে হয় আর এক চাপে। এ বার অবশ্য বাধ্যবাধকতা এসেছে অন্য দিক থেকে। একমাত্র সন্তানের জন্মের পর স্বেচ্ছায় অভিনয় থেকে বিরতি নেন তিনি।
তাঁর প্রকৃত নাম শাবানা রাজা। ১৯৭৫ সালে মহারাষ্ট্রের সোলাপুরে এক অভিজাত মুসলিম পরিবারে জন্ম। তিনি একাধারে অভিনেত্রী এবং প্রযোজক। তবে ইন্ডাস্ট্রির কাছে তিনি নেহা হিসাবে পরিচিতি পান প্রথমে।
তাঁর অবশ্য আরও একটি পরিচয় রয়েছে। তিনি ‘ফ্যামিলি ম্যান’ মনোজ বাজপেয়ীর স্ত্রী। নেহার প্রথম ছবি মুক্তি পায় ১৯৯৮ সালে। ববি দেওলের বিপরীতে ‘করীব’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
এর পরের বছরই ‘হোগি প্যায়ার কি জিত’ নামে আরও একটি ছবি মুক্তি পায় তাঁর। তাঁর ছবি বক্স অফিসে প্রথম থেকেই যে সফল হচ্ছিল তা নয়, তবে তাঁকে দর্শক পছন্দ করতে শুরু করেছিলেন।
কিন্তু মন থেকে সেই খ্যাতি পেয়ে খুশি হতে পারছিলেন না তিনি। কারণ দর্শকদের কাছে তিনি ছিলেন নেহা।
২০০০ সালে হৃতিক রোশনের সঙ্গে ‘ফিজা’, ২০০১ সালে ‘রাহুল’ এবং ‘আত্মা’ নামে দু’টি ছবি করেন ওই নেহা নামেই।
তিনি বারবারই অনুরোধ করতেন তাঁকে নিজের প্রকৃত পরিচয় ব্যবহার করতে দেওয়ার জন্য। কিন্তু কেউই তাঁর অনুরোধে কান দিতেন না, দাবি শাবানার।
তাঁর স্বামী মনোজও তখন ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন। তিনিও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য পরিশ্রম করছেন। ‘করীব’ ছবির পর পরই তাঁদের আলাপ। ২০০৫ সালে তাঁরা বিয়ে করেন।
বিয়ের পর ২০১০ সালে প্রথম নিজের নামে অভিনয় করতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু লড়ে নিজের পরিচয় ফিরে পাওয়া সেই নায়িকা এ বার আরও এক দ্বিধার সম্মুখীন হয়। কেরিয়ার না সন্তান- কাকে বেছে নেবেন? সিদ্ধান্ত নিতে খুব বেশি সময় লাগেনি তাঁর।
২০১১ সালে তাঁদের একমাত্র মেয়ের জন্মের পরই ফের অভিনয়, খ্যাতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন তিনি। এখন এক জন মায়ের পরিচয়েই জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।
তবে স্বামী মনোজ পুরোদস্তুর ‘ফ্যামিলি ম্যান’। স্ত্রীর এই আত্মত্যাগকে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সম্মান দিয়ে চলেন তিনি। সমস্ত রকম সাংসারিক চাপ কাটিয়ে উঠে স্ত্রী ফের নিজের অভিনয় জগতে ফিরে আসুন, চান তিনি। স্ত্রীর সঙ্গে একই ছবিতে অভিনয়ও করতে চান মনোজ।