মধুমিতা সরকার।
একটা এমএমএস ফাঁস। তাতেই সংসার তছনছ! যতই বিয়ের পর স্বামী বলুন, শরীর নয় তাঁর স্ত্রী-র মন পাওয়াটাই আসল। তিনিও তত ক্ষণে বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠিয়ে ঘাড় থেকে স্ত্রীকে নামিয়ে ফেলতে ব্যস্ত। পেশা, দুনিয়া সব ওলোট-পালট একটা ভিডিয়ো ঝলকে। কেউ আর তাকে কাজ দিতে চায় না। মেয়েটির গায়ে যে ‘নোংরা মেয়েছেলে’র তকমা লেগে গিয়েছে! হয়তো কখনও ভালবাসতে গিয়ে অতি বিশ্বাস করে ফেলেছিল প্রেমিককে। ভাবতেই পারেনি, সেই ভালবাসার গোপন মুহূর্তও ফাঁস হয়ে যেতে পারে।
মেয়েটির বাবাও তাকে মেনে নেননি। মুখের উপরে দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। মাকেও আটকিয়েছেন। রাস্তায় বেরোলে হাজার হাজার লোভী চোখ তার শরীর চেটেপুটে খেতে চায়!
এ বার একার লড়াই শুরু সেই মেয়ে, পর্ণার। প্রশ্ন তুলেছে, সে কী এখন বহু ভোগ্যা? একই প্রশ্ন তুলেছেন মধুমিতা সরকারও। হইচই প্ল্যাটফর্মের আগামী সিরিজ ‘উত্তরণ’-এর ‘পর্ণা’ তিনিই। আনন্দবাজার অনলাইনকে স্পষ্ট ভাষায় বললেন, ‘‘চরিত্রটি করতে করতে কোথাও যেন আমি আর ‘পর্ণা’ একাকার। আমাকেও তো এখনও খোলামেলা ছবি বা ছোট পোশাকে দেখলে তথাকথিত অনুরাগীরা মন্তব্য লেখেন, ‘পাখি’ কেন এ ভাবে! আপনাকে সালোয়ার-কামিজেই বেশি ভাল লাগে। সনাতনী সাজে আপনি বেশি সুন্দরী!’
সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বটতলা’ অবলম্বনে জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের নতুন সিরিজ। সেখানে বলা পর্ণার গল্প যদিও নতুন নয়। শহর, শহরতলিতে বহু মেয়ে এমন আছেন। তাঁরা সবার বিরুদ্ধে গিয়ে একা লড়াই লড়তে পারেন না। হয় তাঁরা আত্মসমর্পণ করে বহু ভোগ্যা হতে হতে নিষিদ্ধ এলাকায় ঠাঁই পান। নয়তো আত্মহত্যা করে সম্মান বাঁচানোর চেষ্টা করেন! একুশ শতকেও মেয়েরা শুধুই রক্ত-মাংসের তাল?
উত্তর দিতে গিয়ে আক্ষেপ ঝরেছে অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘বিশ্বাস করতে না চাইলেও এটাই সত্যি। বিদেশ বা মুম্বই তুলনায় বদলেছে। পাশ্চাত্য নিজের শরীর নিজের দায়িত্ব, এই নীতিবোধে বিশ্বাসী। ফলে, কে কার শরীর দেখল, তাকে প্রকাশ্যে আনল, তা নিয়ে কেউ মাথাই ঘামায় না! বলিউডের নায়িকারাও যথেষ্ট সাহসী। তাঁদের অনেকেরই এমএমএস ফাঁস হয়েছে। তার পরেও তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই কাজ করে চলেছেন। ব্যতিক্রম বাংলা, নীতিবাগীশ! শরীর সামান্য বে-আব্রু হলেই গেল গেল রব। এখনও আমাদের রাজ্যে, শহরে, শহরতলিতে মেয়েদের শরীরের খোঁজই সবাই রাখেন। মনের খোঁজ কেউ নেন না। সেই আশা করাও যেন অন্যায়।’’
পর্দায় ‘পর্ণা’কে জীবন্ত করতে গিয়ে মধুমিতার চোখ ভিজেছে? মধুমিতার দাবি, চোখ না ভিজলেও মন ভিজেছে। অভিনয় শেষে চরিত্র থেকে হয়তো বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। কিন্তু অনেক দিন তাঁর মনে থেকে যাবে ‘পর্ণা’কে।