মধুমিতা সরকার।
‘দোষারোপের সময় পুরুষের আঙুল সব সময় নারীর দিকেই ঘুরে যায়।’
‘আ থাউজান্ড স্প্লেনডিড সান’ উপন্যাসে এ কথা লিখেছিলেন আফগান-আমেরিকান লেখক খালেদ হোসেইনি। শনিবার দুপুরে আনন্দবাজার অনলাইনকেও খানিক একই কথা বললেন অভিনেত্রী মধুমিতা সরকার। শুধু পুরুষ নয়, গোটা সমাজ যে কোনও বিষয়ে মেয়েদের গায়ে ‘দোষী’ তকমা সেঁটে দিতে পারলেই খুশি হয় বলে মনে করেন তিনি। ভাবছেন, আচমকা এই প্রসঙ্গে কেন তুলে আনলেন মধুমিতা? তাঁর সাম্প্রতিক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে নজর রাখলেই সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়।
জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘উত্তরণ’ ছবিতে অভিনয় করছেন মধুমিতা। সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বটতলা’ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি এই ছবিতে এক গৃহবধূর চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। মধুমিতার পোস্টে বলা হয়েছে, একটি এমএমএস কী ভাবে একটি মেয়ের জীবন তছনছ করে দেয়, সেই গল্পই বলবে ‘উত্তরণ’।
কাজের ফাঁকে ছবি নিয়ে মধুমিতা বললেন, “একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের যদি কোনও ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রে মেয়েটির দোষ থাকুক বা না থাকুক, সমাজ তাকেই দোষারোপ করবে। মেয়েরাও বোধ হয় সেটা বুঝে গিয়েছে। চিরাচরিত ধারণাকে ভেঙে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার বার্তা দেবে এই ছবি।”
'উত্তরণ'-এ মধুমিতার চরিত্রের নাম পর্ণা। তাঁর স্বামী চরিত্রে অভিনয় করবেন রাজদীপ গুপ্ত। এক ঢাল খোলা চুল, সাদামাঠা শাড়ি, কপালে টিপ, সিঁথি ভরতি সিঁদুর — বড় পর্দায় এই সাজে প্রথম বার দেখা যাবে মধুমিতাকে। এখনও পর্যন্ত যে তিনটি ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন, সেগুলির থেকে পুরোপুরি একটি ভিন্ন ধরনের চরিত্র। তার জন্য কি আলাদা ভাবে কোনও প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ‘চিনি’? খানিক হেসে মধুমিতা বললেন, “আমি যখনই নতুন কোনও চরিত্র করি, আমার আগের করা চরিত্রগুলির ছাপ মানুষের মন থেকে মুছে যায়। যে ধারাবাহিকগুলো করেছি, সেগুলিতেও একটি চরিত্র আরেকটি চরিত্রের থেকে একদম আলাদা ছিল।” ২০১১ সালে ‘সবিনয় নিবেদন’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রেখেছেন মধুমিতা। সেখানে একটি অবাঙালি মেয়ে নয়নার চরিত্রে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এর পর ‘কেয়ার করি না’, ‘বোঝে না সে বোঝে না’, ‘কুসুমদোলা’-র মতো একাধিক ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্রে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় উত্তরণের প্রসঙ্গে টেনে তাঁর ব্যাখ্যা, “ধারাবাহিক থেকে যখন ছবিতে এলাম তখন দর্শক আমাকে ঝাঁ-চকচকে এক অবতারে দেখলেন। এখন তাঁরা ভাবতেই পারেন, আমি গৃহবধূর চরিত্র করতে পারব কি না। কিন্তু সেটাই আমার কাজ।” চরিত্র নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন ঠিকই, কিন্তু কাকে ঘিরে কোন এমএমএস নিয়ে ছবির গল্প আবর্তিত হবে, সে বিষয়ে মুখ খুললেন না মধুমিতা।
অন্য দিকে বাস্তবেও ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের দৌলতে মাঝেমধ্যেই কটাক্ষের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। পর্দা আর জীবন খানিক মিলেমিশে গিয়েছে তাঁর কাছে। তবে কুমন্তব্যকে আগাগোড়াই প্রশ্রয় দেননি তিনি। মধুমিতার কথায়, “আমি জানি, কী ধরনের পোশাক পরি। শালীন-অশালীনের পার্থক্যও বুঝি। যাঁরা আমাকে খারাপ কথা বলেন, তাঁরা নিজেরা কতটা ঠিক বা ভুল সেই দিকটিও তাঁদের ভেবে দেখা উচিত। ‘উত্তরণ’-ও কিন্তু সেই বার্তাই দেবে।”