সানি লিওনি। বলিউডের এই অভিনেত্রীর নামেই নাকি উষ্ণতা, এমনই বলে থাকেন অনেকে। তাঁর পেশাগত জীবন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে স্বামী, তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে সানি সুখী গৃহিণী।
স্বামী ড্যানিয়েল ওয়েবের আর তিন সন্তানকে নিয়ে দিব্যি কেরিয়ার সামলাচ্ছেন তিনি। নিশা, আয়ার, নোয়া তিন সন্তানের প্রতিই অত্যন্ত যত্নশীল সানি। স্বামীও ভাগ করে নিয়েছেন দায়িত্ব। কিন্তু ড্যানিয়েলের সঙ্গে সানির আলাপ কী ভাবে হল?
ড্যানিয়েল গত জন্মদিনেও সানিকে বলেছিলেন, “আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর মানুষ তুমি। সারা জীবন নিজের জন্য নয়, অন্যের জন্য ভাবতে দেখেছি তোমাকে। এই জার্নিতে আমি তোমার পাশে রয়েছি।” কিন্তু তাঁদের এমন প্রেমের সূত্রপাতই বা কী ভাবে।
আইটেম নম্বর দিয়ে বলিউডি জার্নি শুরু করেছিলেন সানি লিওনি। তার আগে তাঁর পর্ন কেরিয়ারের কথা অনেকেই জানেন। ধীরে ধীরে ফিচার ফিল্মে জায়গা করে নেন তিনি। বহু বছর ধরে চলা ইন্ডাস্ট্রির বদ্ধমূল ধারণা ধীরে ধীরে ভাঙতে চেয়েছেন। কখনও সফল হয়েছেন। কখনও ব্যর্থতা এসেছে। কিন্তু লড়াইটা প্রথম থেকেই বেশ কঠিন ছিল। তেমনই এক সময়ে আলাপ ড্যানিয়েলের সঙ্গে।
ড্যানিয়েলের ব্যান্ডের এক সতীর্থের মাধ্যমে লাস ভেগাসে আলাপ দু’জনের। সুদর্শন ড্যানিয়েলকে দেখে প্রথমে ভাল লাগলেও মনে হয়েছিল মানুষটি সম্পূর্ণ তার বিপরীত।
সানি বলেন, ড্যানিয়েলের সঙ্গে পরিচয় হতেই ভুল ভাঙে তাঁর। ড্যানিয়েলও বলেন, তাঁর জন্য সানি কিন্তু ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’। কিন্তু সানির জন্য নয়। অল্পই কথা হয়েছিল প্রথম দিন।
কথা কম হলেও সানির ফোন নম্বর এবং ই-মেল আইডি জোগাড় করে ফেলেছিলেন ড্যানিয়েল। কিন্তু ফোন করেননি। বরং ই-মেল করে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, সানির সঙ্গে কী ভাবে কথা বলতে পারেন তিনি। এটা সানির খুব ভাল লেগেছিল।
ড্যানিয়েলের বা়ড়ি নিউ ইয়র্কে। প্রথম ডেটে সানির পৌঁছাতে একটু দেরি হয়েছিল। কিন্তু ড্যানিয়েল অপেক্ষা করেছিলেন। ধৈর্য হারাননি।
“সারা রেস্তরাঁ তখন ফাঁকা কেউ নেই, শুধু আমরা দু’জন। মনে হচ্ছিল যেন পিছনে কেউ বেহালা বাজাচ্ছে,’’— প্রথম ডেটের প্রসঙ্গে তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে এমনটাই জানিয়েছিলেন সানি।
৩ ঘণ্টা কথা বলার পর সানির মনে হয়েছিল, বহু বছর ধরে যেন চেনেন ড্যানিয়েলকে। কোনও খাবার অর্ডার করতেও নাকি ভুলে গিয়েছিলেন তাঁরা। শুধু ওয়াইন পান করেছিলেন দু’জনে। প্রথমে পরস্পরকে চিনতে চেয়েছিলেন তাঁরা।
কাজের সূত্রে এক বার ওমানে ছিলেন সানি। তখন একটা সিডি মিক্স করে সঙ্গে ফুল পাঠিয়েছিলেন ড্যানিয়েল। এর পর সারা ক্ষণ ফোনে কথা হত তাঁদের। সানি পর্ন ছবিতে অভিনয় করতেন সেই সময়। এর পর ড্যানিয়েলও তাঁর সঙ্গে কাজ শুরু করেন। নিজেদের সংস্থা তৈরি করেন তাঁরা। সানির পাশে সবসময় ছিলেন তিনি, কখনও অসম্মান করেনি, এমনই বলেন বলিউডের ‘বেবি ডল’।
ডেটিংয়ের কয়েক মাসের মধ্যে সানির মা মারা যান। সানি ভেবেছিলেন, হয়তো ড্যানিয়েল সেই সময় আবেগ বুঝতে পারবেন না। কিন্তু সানিকে আগলে রেখেছিলেন তিনি। সানির পরিবারেরও সেটা অসম্ভব ভাল লেগেছিল।
সানির আক্ষেপ, ৩ বছর ড্যানিয়েলের সঙ্গে লিভ-ইন রিলেশন কাটানোর পর বিয়ে করেছিলেন। এতটা সময় যে কোনও মহিলার জীবনে বিশাল সময় বলে মনে করেন সানি। বিশেষ করে যখন তাঁরা নাকি জানতেন একে অপরকে বিয়ে করা ছাড়া গতি নেই।
এক দিন ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে সানি একটা বাক্স খুঁজছিলেন, হাতে আংটি খুলে রাখবেন বলে। তখন ড্যানিয়েল তার দিকে একটা বাক্স এগিয়ে দেন। মেহগনি কাঠের বাক্সটা ড্যানিয়েলের নিজেরই তৈরি।
বাক্সের মধ্যে লেখা ছিল, ভালবাসা-সহ ড্যানিয়েল। সেই সময় ড্যানিয়েল জানান, সানির জন্য তাঁর কাছে একটা আংটিও রয়েছে। তার পরই সানির অনামিকায় আংটি পরিয়ে দেন ড্যানিয়েল। বলিউডের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশ, সানি বলেছেন, এই গোটা ঘটনাটাই নাকি ঘটেছিল তাঁদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে।
হ্যাঁ, বলে নাকি চিত্কার করে উঠেছিলেন সানি। কারণ তিনি চেয়েছিলেন, ড্যানিয়েলের সঙ্গেই থাকতে। একদম সহজ সরল বিয়ের প্রস্তাব ছিল, সানিও সেটাই চেয়েছিলেন।
বিয়ের ৯ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। তবুও তাঁদের প্রেমে কোথাও খামতি ঘটেনি। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে পাশে পেয়েছেন ড্যানিয়েলকে। তবে সানি বলেন, তাঁর সবচেয়ে ভাল লাগে বাচ্চারা এবং তাঁরা দু’জন এক সঙ্গে যখন ব্রেকফাস্ট তৈরি করেন সেই সময়টা। এখনও এই বেঁচে থাকাটাকে স্বপ্ন বলেই মনে হয় সানির।
সানি আর ড্যানিয়েলের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বেশ ভাল। দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে নিজেদের মতো করেই দিন কাটান তাঁরা। লকডাউনেও এর অন্যথা নেই। কখনও মাস্ক বানিয়ে, কখনও ওয়ার্কআউট আবার কখনও বা ছেলেমেয়ের সঙ্গে খুনসুটি করে দিন কাটছে ড্যানিয়েল এবং সানি লিওনের।