বলিউডের অন্যতম ‘সেরা কাপল’ বলা হয় তাঁদের। সুনীল দত্ত এবং নার্গিস। স্বর্ণযুগের দুই তারকার প্রেমও একেবারে সিনেমার মতোই। কীভাবে পরস্পরের কাছে এলেন তাঁরা?
নার্গিস ও সুনীল দত্তের পরিবারের মধ্যে বেড়ে ওঠার খানিকটা ফারাক ছিল। মোহন বাবু ও জদ্দান বাইয়ের মেয়ে ছিলেন নার্গিস আর সুনীলের পরিবার ছিলেন বেশ বৈষয়িক। প্রচুর জমিজমা ছিল তাঁদের।
‘দো বিঘা জমিন’ ছবির সেটে প্রথম আলাপ হয় তাঁদের। সুনীলের তো প্রথম দর্শনে প্রেম হল, কিন্তু নার্গিস তা জানতেও পারলেন না।
নার্গিস সেই সময় প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী, সুনীল তখনও বলিউডে মাটি শক্ত করছেন।
রাজ কপূরের সঙ্গে নার্গিসের গভীর প্রেমের নানা গল্প বলিউডের নানা পত্রিকায় ও সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হতে শুরু করে।
নার্গিস নাকি রাজিও ছিলেন রাজের দ্বিতীয় স্ত্রী হতে, কিন্তু রাজ প্রথম বিয়ে ভাঙতে পারেননি।
ভালবাসার মানুষকে না পেয়ে অবসাদগ্রস্ততায় ভুগতে শুরু করেন নার্গিস। এর পর এল মেহবুব খানের ছবি ‘মাদার ইন্ডিয়া’। সুনীল জানতে পেরে খুশি হলেন, নার্গিসই তাঁর সঙ্গে কাজ করবেন।
যদিও ১৯৫৭ সালের ছবিতে মা ও সন্তানের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন নার্গিস ও সুনীল। এই ছবির সেট থেকেই পরস্পরের কাছে আসেন তাঁরা। ছবির সেটে আগুন ধরে যায়, মারাত্মক আগুনের বলয় থেকে নার্গিসকে কোলে করে বাঁচান সুনীল, কিন্তু নার্গিস খুব একটা জখম না হলেও সুনীল মারাত্মক জখম হন।
সুনীল হাসপাতালে যত দিন ভর্তি ছিলেন, নার্গিসই দিনরাত দেখাশোনা করতেন। সুনীলের প্রেমে পড়তে বাধ্য হন নার্গিস।
পরস্পরকে চিঠি লিখতেন তাঁরা, টেলিগ্রামও করতেন। কিন্তু কাউকে খুব একটা বুঝতে দেননি। টেলিগ্রামেই লুকিয়ে লুকিয়ে মূলত প্রেম করতেন দু’জনে।
নার্গিস বলেছিলেন, ‘‘সুনীল শান্ত। মেয়েদের অত্যন্ত সম্মান করতেন। কিন্তু রাজ কপূর অর্থাৎ তাঁর জীবনের প্রথম বিশেষ বন্ধু ছিলেন একেবারেই উল্টো, বেশ ছটফটে, মেয়েদের সঙ্গে ফ্লার্টও করতেন।’’
১৯৫৮ সালে চুপিসাড়েই বিয়ে করে নেন নার্গিস-সুনীল, পরে একটি জমকালো রিসেপশনের আয়োজন করা হয়।
নার্গিস একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমি জানতাম, সুনীল আমার সব কথাই মন দিয়ে শুনবেন। আমার যত কষ্ট সব সুনীলই বুঝবেন। আমাকে কখনও ছেড়ে চলে যাবেন না।’’
সুনীল বলেছিলেন, ‘রোমান্সের মানে আমি জানি না। তবে নার্গিস আমার জীবনে এসেছেন, এ টুকুই আমি বুঝতাম। ওঁর সততাটা আমার কাছে খুব জরুরি ছিল’
সুনীল ও নার্গিস আজীবন পরস্পরের পাশে ছিলেন। সঞ্জয়, নম্রতা, প্রিয়া-তিন সন্তানও রয়েছে তাঁদের। সুনীল বলেছিলেন, তাঁর অসুস্থ বোনকে নার্গিস হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রোপচার করিয়ে নিয়ে এসেছিলেন, কাউকে ঝক্কি পোহাতেও দেননি, তখনই সুনীল বোঝেন, নার্গিস তাঁর পরিবারকেই চান।
নার্গিসের ক্যানসার ধরা পড়ার পর সবসময় পাশে ছিলেন। আমেরিকায় নিয়ে গিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়েছেন সুনীল। কিন্তু নার্গিস লড়াই করতে পারেননি বেশিদিন। ১৯৮১ সালের ৩ মে মৃত্যু হয় নার্গিসের।
৭ মে সঞ্জয় দত্তের প্রথম ছবি রকির প্রিমিয়ারে নার্গিস যেতে পারেননি, এ আফসোস ছেলে সঞ্জয়ের মতো তাঁর বাবারও ছিল। ২০০৫ সালের ২৫ মে মারা যান সুনীল, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত নার্গিসকেই মনে করেছেন বাবা, সাক্ষাৎকারে জানান ছেলে সঞ্জয়ও।