লোপামুদ্রা মিত্র।
তিনি গান করেন। আবার রাখঢাক না করে স্পষ্ট কথাও বলে দেন। লোপামুদ্রা মিত্র। একাধারে গায়িকা এবং ‘প্রথা’ নামে এক বস্ত্র বিপণির কর্ণধার। প্রথম পরিচয় তাঁকে খ্যাতি ও প্রশংসা এনে দিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় পরিচয় ঘিরে কটাক্ষের মুখে গায়িকা।
নিজের বস্ত্র বিপণিকে নিয়ে লেখা একটি খবর সম্প্রতি ফেসবুকের দেওয়ালে পোস্ট করেছিলেন লোপামুদ্রা। তাতেই আপত্তি জানিয়ে বসে নেটাগরিকদের একাংশ। ‘গায়িকা হয়ে ব্যবসা করেন?’, ‘জীবনমুখী গান করেও শাড়ি বিক্রি করেন’-জাতীয় একাধিক মন্তব্য ধেয়ে আসতে থাকে তাঁর দিকে। গান গাওয়ার পাশাপাশি নিজস্ব বুটিক চালিয়ে যেন মস্ত অন্যায় করে ফেলেছেন গায়িকা!
চুপ করে থাকেননি লোপামুদ্রা। রবিবার দুপুরে ফেসবুকে দীর্ঘ একটি পোস্ট লিখেছেন তিনি। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় উত্তর দিয়েছেন যাবতীয় ট্রোল-কটাক্ষের। মানুষকে আরও বেশি সংবেদনশীল হওয়ার বার্তা দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আপনি উপরের আলো দেখছেন, যেটা ঈশ্বর প্রদত্ত। আলোর ভিতরের মানুষ আর আপনি এক রক্তমাংসের মানুষ। তাই আঘাত করলে দু’বার ভাবুন। একটু ভাবুন।’
খ্যাতনামী-ট্রোলিং প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে লোপামুদ্রা বললেন, “যাঁরা এ ধরনের কাজ করেন, তাঁরা আসলে নিজেকে নিয়ে খুব অখুশি। অনেকেই জীবনে অনেক কিছু করতে চান, কিন্তু না করতে পারলে তখন ট্রোল করেন।” তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘ পেশাগত জীবনে এমন অভিজ্ঞতা প্রথম নয়। মঞ্চে উঠেও একাধিক বার এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন লোপামুদ্রা। প্রতিবাদও করছেন মঞ্চ থেকেই। “স্টেজে ওঠার পর কেউ সিটি মারলে আমি সেখান থেকেই বলতাম, এক চড় মেরে সিটি মারা বার করে দেব”, হেসে উঠলেন গায়িকা।
সে সব দিন এখন যদিও অতীত। করোনা অতিমারির জেরে স্টেজ শো প্রায় বন্ধ। দিন গুনছেন শিল্পীরা। অপেক্ষা করে রয়েছেন সব কিছু আগের মতো হওয়ার। ব্যতিক্রম নন লোপামুদ্রাও। গায়িকার কথায়, “আমরা স্টেজ শো না করতে পারলেও আরও অনেক কিছু পারি। আমি একা নই, আমার মতো অনেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আমরা যদি ব্যবসা করি, অসুবিধা কোথায়? গান গেয়ে ব্যবসা করলে আপত্তি কিসের?”
নিজের পোস্টে ব্যঙ্গ করে নেটমাধ্যমকে এক ধরনের ‘খোপ’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন লোপামুদ্রা মিত্র। যেখানে সব ধরনের মানুষের একসঙ্গে বসবাস। লিখেছেন, ‘আজ সমাজমাধ্যমে আমি, আপনি, আমরা সবাই এক খোপে।’ আর এই খোপে খ্যাতনামীদের নিশানা করাই সব চেয়ে সহজ বলে মনে করেন গায়িকা। তিনি বললেন, “গান বাজনায় নাম করাটা ঈশ্বরের আশীর্বাদ। আমি গান করে নাম করে ফেলেছি, তাতে আমার কিছু করার নেই।” একটু থেমে তাঁর প্রশ্ন, “শিল্পী বলে আমি অন্য কিছু করব না, তা কী হয়? কই টাটা-বিড়লা, অম্বানীদের তো কেউ প্রশ্ন করে না। শিল্পীরা অন্য কোনও কাজ করলে এত সমস্যা কেন?”
দীর্ঘ পোস্ট লিখে কটাক্ষের উত্তর দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু মনে রাগ বা ক্ষোভ জমিয়ে রাখেননি। মঞ্চে সোজাসাপ্টা কথা বলার অভ্যাসটাই নাকি খানিক ঝালিয়ে নিয়েছেন নেটমাধ্যমে । ‘‘জয় বকাবকি করে আমি এত প্রতিবাদ করি বলে, কিন্তু কী করব! আমি তো এই রকমই,” হেসে উঠলেন লোপামুদ্রা।