Mimi Chakraborty

Look Back 2021: একটাই ভয়, আমার কাছের মানুষগুলো যেন হারিয়ে না যায়

সে এক রাত গিয়েছে। শহর জুড়ে অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ। কত মানুষ যে হারিয়ে গেলেন ২০২১-এ।

Advertisement

মিমি চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ১৩:২৬
Share:

নতুন বছরের অপেক্ষায় মিমি।

২০২১ আমাদের ভাল রেখো। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এ রকম একটা ভাবনা ছিল আমার। কিন্তু সেই ভাল থাকার আশায় ২০২১ আরও বড় ঝড় সামনে এনে দিল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। রোজ ঘুম ভেঙে মৃত্যুর খবর। সে এক রাত গিয়েছে। শহর জুড়ে অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ। কী করুণ সুর। থেকে থেকে মনে হত এই বুঝি কিছু হল! সকলের মতো আমিও কাছের আত্মীয় পরিজনদের হারিয়েছি। আমার দিদিমা চলে গেলেন। আরও কত মানুষ!

Advertisement

এই অন্ধকারের মাঝেই আলোর পথ তৈরি হল। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন। মাঠে নামলাম আমরা। সে সময়ে রব উঠেছিল মিমি চক্রবর্তী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেবেন। এই একই খবর বার বার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আমি নিজেও পড়তাম! শেষে আমাদের দল জিতল। তখন অর্ধেকের বেশি মানুষ ধরে নিয়েছিল তৃণমূল আর ক্ষমতায় আসবে না। কিন্তু আমার বিশ্বাস না!, দল জিতবেই। আমরা মাঠে নেমে কাজ করেছিলাম। ঠান্ডা ঘরে বসে তো আর কথা বলি না আমরা। মানুষগুলোকে চিনি। জানি। তাই তাদের সমর্থন যে পাব, এটা আন্দাজ করতে পারি। দল জিতে অনেকের মুখে ঝামা ঘষে দিল। আমার বিশ্বাস, দলের বিশ্বাস কোথাও মিশে গিয়েছিল। মিমি চক্রবর্তী যে বদলে যায় না, তার প্রমাণ হয়ে গেল।

Advertisement

প্রচারে মিমি।

নিজের প্রতিও আমি এখন অনেক বেশি বিশ্বস্ত। সেই বিশ্বাসই আমায় নিজেকে ঘিরে ভাবতে শিখিয়েছে। বাইরের পৃথিবীর যখন যেমন প্রয়োজন, আমি সেখানে আছি। কিন্তু বাকিটা আমার। তাই পার্টি করা বা নিয়মিত বাইরের জগতের সঙ্গে নিজেকে জুড়ে রাখার চেয়ে আমি গান গাইতে, বই পড়তে, লিখতে বেশি ভালবাসি।

দীর্ঘ দিন একা থেকেছি। নিজে সব করেছি। রাজনীতি বা সিনেমায় আমার কোনও জোরালো খুঁটি ছিল না। আজও নেই। তাই ধাক্কা খেতে খেতে সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।

তবে এ বছর আমার প্রাণ আমার থেকে চলে গিয়েছে। 'বোঝে না সে বোঝে না'-র পর থেকে চিকু আমার সঙ্গে। আমি কাজ সেরে বাড়ি ফিরব আর ও সারা ক্ষণ আমার গায়ে গায়ে। সেই চিকু-ই আমায় ছেড়ে চলে গেল। আজও মানতে পারি না। বেশি বলতেও পারি না ওকে নিয়ে। ও চলে যাওয়ার পরে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছি মন সামলাতে। সেই থেরাপি আজও চলছে।

চিকুর সঙ্গে মিমি।

এই চলে যাওয়া, ফুরিয়ে ফেলা আর নতুন কিছু গড়ার মধ্যেই জীবন চলতে থাকে। আজকাল জীবন নিয়ে বড় দার্শনিক হয়ে উঠেছি। ওই যে, একা থাকি। একা থাকলে অনেক কিছু শেখা যায়। মা আমার কথা শুনে মাঝে মাঝে বিস্ময়ে বলে 'এই সেই মেয়ে! যাকে আমি জন্ম দিয়েছিলাম!"

আসলে আমার লড়াই আমার সঙ্গে। যে দিন নিজের পুরোটা দেব না, আমি জানি সে দিন আর আমায় কেউ মনে রাখবে না। তাই কাজের দিকে তাকিয়ে থাকি। মৈনাক ( ভৌমিক) আমাকে নিয়ে ছবি করল এ বছর। আমি ভাবতেই পারিনি ও আমার কথা ভেবে তিতলির মতো একটা চরিত্র তৈরি করবে। ওই ছবি মুক্তির দিকে তাকিয়ে আছি। ঠিক যেমন অরিন্দম শীলের 'খেলা যখন' ছবির জন্যও অপেক্ষা করছি। খুব ভাল দুটো কাজ করলাম এ বছর।

কাজ, ব্যস্ততা নিয়ে খুশি মিমি।

এই খারাপ-ভাল মিশিয়ে কেটে গেল বছর। আমি খুশি, আমি সুস্থ আছি। নিজের মতো জীবন কাটাতে পারছি। থালায় খাবার আছে আমার। যদি কাউকে অনিচ্ছায় দুঃখ দিয়ে থাকি, নতুন বছরে চেষ্টা করব সেই দুঃখ না দেওয়ার। নতুন বছর এসে দাঁড়ানো মানেই সময় ফুরিয়ে যাওয়া। মা চায় আমি বিয়ে করি। আমিও বিয়ে করতে চাই। তবে তার জন্য সময়ের অপেক্ষা। চোখের সামনে এত সম্পর্ক ভাঙতে দেখি! জানি না...।

আমার কাজ আমাকে এত দিয়েছে যে, সম্পর্কের দিকে মনোযোগ দিই না আমি। মনে হয় আরও ভাল কাজ করি। মানুষের ভাল লাগা পাব। ভালবাসা পাব। আমায় এক জন বলেছিল, 'তুমি যা তার, তার চেয়ে বেশি তোমার মানুষকে দেওয়া উচিত। কারণ তুমি সেই মানুষগুলোর থেকেই পাও।' আমি এই ভাবনায় চলার চেষ্টা করি।

বছরটা শেষ হয়ে আসছে...
একটাই ভয়। আমার কাছের মানুষগুলো যেন হারিয়ে না যায়। ভালবাসার মানুষের বড্ড অভাব যে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement