অভিভাবক হওয়া নাকি মুখের কথা নয়! সময় তো রাখতেই হয় হাতে, তার সঙ্গে বহন করতে হয় অনেক দায়িত্বও। সাধারণত মায়েরাই সন্তানের জন্য বেশি দায়-দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। কিন্তু এমন অনেক বাবাও আছেন, যাঁরা মায়ের পরোয়া না করে একাই শক্ত হাতে দায়িত্ব নিয়েছেন সন্তানদের। বলিউডেও রয়েছে তার ঝুরি ঝুরি প্রমাণ।
এই যেমন ধরুন কর্ণ জোহর। ২০১৭-য় দুই যমজ সন্তানের ‘সিঙ্গল ড্যাড’ হয়ে বলিউডকে বেশ চমকে দিয়েছিলেন কর্ণ। আইভিএফ পদ্ধতিতে একটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি।
ছেলে-মেয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও খুব ভাল। ব্যস্ততার মধ্যেও সন্তানদের দিকে কড়া নজর রয়েছে কর্ণের। মাঝে মাঝেই একসঙ্গে ছুটি কাটানো বা খুনসুটির ছবি পোস্ট করেন নানা সোশ্যাল মিডিয়ায়। রুহি ও যশ তাঁর জীবন পাল্টে দিয়েছেন বলেও বহু বার নানা সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন তিনি।
শুধু কর্ণ জোহরই নন, এই পথে হেঁটেছেন জিতেন্দ্র ও শোভা কপূরের ছেলে তুষার কপূরও। আইভিএফ-এর মাধ্যমে বাবা হয়েছেন তিনিও। কর্ণের চেয়েও আগে, ২০১৬ সালেই তাঁর জীবনে তিনি নিয়ে আসেন পুত্র লক্ষ্য কপূরকে।
নিজের চল্লিশ বছরে নেওয়া এই সিদ্ধান্তকেই জীবনের সেরা পদক্ষেপ বলে মনে করেন তিনি। তাঁদের বাপ-বেটার ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় মাঝে মাঝেই ভাইরাল হয়। ছেলের সব কিছুর দিকেই খেয়াল রাখেন সিঙ্গল ফাদার তুষার।
হৃতিক রোশনের গল্পটা আবার একটু অন্যরকম। সুজান ও হৃতিকের দুই পুত্র। কিন্তু সুজানের সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের পর একেবারে একা হাতেই দুই ছেলের সব দায়িত্ব সামলাচ্ছেন হৃতিক। ‘সিঙ্গল ফাদার’-এর মতোই তাদের দেখাশোনা করেন এই বলিউড তারকা।
কেরিয়ারের বাইরে দুই ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলাই লক্ষ্য হৃতিকের। কখনও ছোট ছোট গল্প ও কমিকস লিখে, আবার কখনও মজা করতে করতে নানা কিছু শেখান সন্তানদের। একসঙ্গে মজা করে, বেড়াতে গিয়ে ও গান শুনেই তাদের সময় কাটে। দুই ছেলেরও বাবার প্রতি কোনও অভিযোগ নেই বলেই মত হৃতিকের ঘনিষ্ঠদের।
রাহুল দেবও এই তালিকায় আছেন। তবে বিবাহবিচ্ছেদ নয়, তাঁর বিষযটি আবার আর একটু আলাদা। ২০০৯ সালে স্ত্রী রিনা দেবের মৃত্যুর পর ছেলের সব দায়িত্ব একার হাতেই তুলে নেন তিনি।
বর্তমানে মুগ্ধা গডসের সঙ্গে লিভ ইন করলেও ছেলের সব কিছুতেই কড়া নজর রয়েছে রাহুলের। মুগ্ধার সঙ্গেও ছেলের সম্পর্ক বেশ ভাল। এমনকি কাজের মধ্যেও একটু ছুটি মিললেই ছেলের সঙ্গে সময় কাটাতেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন রাহুল।
রাহুল বসু আবার অন্য আর এক রকম গল্পের অংশীদার। বরাবরই শিশুদের জন্য নানা সমাজসেবামূলক কাজ করতে পছন্দ করেন ভারতীয় রাগবি দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ও অভিনেতা রাহুল। শিশুদের প্রতি তাঁর ভালবাসার নানা নিদর্শনও তিনি বিভিন্ন কাজে রেখেছেন। সিঙ্গল ফাদার হয়ে ওঠার সিদ্ধান্তও এর প্রমাণ।
আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ছ’জন শিশুকে দত্তকনিয়েছেন রাহুল। তাদের নিয়েই তাঁর মূলত সময় কাটে। প্রত্যেকের পছন্দ-অপছন্দ, শখ, ভালবাসা সবই রাহুলের মুখস্থ। তাদের সঙ্গে রাহুলের বন্ডিংও বেশ ঈর্ষণীয়। সন্তানদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব নিজের কাজকেও তিনি দেন না বলেই মত রাহুলের ঘনিষ্ঠমহলে।
কন্যা আলিয়ার সঙ্গে পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপের সম্পর্ক একেবারে বন্ধুর মতো। অনুরাগের দ্বিতীয় স্ত্রী আরতি বাজাজের সঙ্গে ২০০৯ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাঁর। এর পর থেকেই মেয়ে আলিয়ার সব দায়িত্ব একার কাঁধে নিয়ে নেন অনুরাগ।
আলিয়াও বাবার সঙ্গকে খুব উপভোগ করেন। তাঁদের নানা খুনসুটি ও এক সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার ছবি মাঝে মাঝেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে ওঠে।
মেহর জেসিয়া ও অর্জুন রামপালের দুই মেয়ে মাহিকা ও মায়রা। স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর ইনিও মেয়েদের দায়িত্ব নিতে এগিয়ে এসেছেন। সেই থেকে তাদের খুঁটিনাটি সব দিকেই অর্জুন খেয়াল রাখেন। কাজের ব্যস্ততাও কমিয়ে দিয়েছেন মেয়েদের সময় দেবেন বলে।
গ্যাব্রিয়েলা দেমেত্রিয়াদেসের সঙ্গে অর্জুন লিভ ইন করলেও মেয়েদের বিষয়ে এতটুকু অবহেলা করেন না। শুধু বাবা-ই নয়, তাঁদের প্রিয় বন্ধু হয়ে ওঠাই যে অর্জুনের আসল উদ্দেশ্য, সে কথা বহু বার সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন অর্জুন।