vyjyathimala

পরিণতি পায়নি বলিউডের দুই সেরা নায়কের সঙ্গে প্রেম, বিয়ের পর অভিনয় ছেড়ে দেন বৈজয়ন্তীমালা

‘‘এত কম ভাড়ায় মাথার উপরে অন্য ভাড়াটেই নাচবে, এই টাকায় তো আর বৈজয়ন্তীমালাকে আনতে পারব না!’’

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:১৬
Share:
০১ ১৮

ষাট-সত্তরের দশকে পুরুষহৃদয়ে হিল্লোল আর নারীমনে চমক মেশানো সম্ভ্রম। এই দুই মানদণ্ড দিয়েই যদি নাম ভাবতে হয়, তবে যে ক’টা নাম মজুত রেখেছে রুপোলি দুনিয়া, তার মধ্যে অন্যতম এই মাদ্রাজি কন্যে। মুম্বইকে দেওয়া দক্ষিণ ভারতের এই ‘গিফটেড গার্ল’-কে নিয়ে এখনও নস্টালজিয়া তুঙ্গে।

০২ ১৮

তবে শুধু অভিনয় দিয়ে বিচার করলে তা ভুল হবে। নাচের তালে, সুরের বিভঙ্গে বলিউডকে মাতিয়ে রাখা এই অভিনেত্রীর রক্তেই ছিল অভিনয়। মায়ের অভিনয়ের জিন তাঁকে তাড়া করে বেড়িয়েছে আজীবন। নাচ ও অভিনয়ও তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে অনেক। খ্যাতি, যশ, অর্থ যেমন এসেছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে জমেছে মুগ্ধতার মৌতাত।

Advertisement
০৩ ১৮

সে মুগ্ধতার রেশ এমনই যে, প্রচলিত বাংলা রসিকতাতেও উঠে এসেছে তার নাম। জনৈক বাড়িওয়ালার প্রতি ভাড়াটের নানা অভিযোগের উত্তরে বাড়িওয়ালার সপাট জবাব, ‘‘এত কম ভাড়ায় মাথার উপরে অন্য ভাড়াটেই নাচবে, এই টাকায় তো আর বৈজয়ন্তীমালাকে আনতে পারব না!’’

০৪ ১৮

হ্যাঁ, বৈজয়ন্তীমালা বালির কথাই হচ্ছে। যাঁর গুণমুগ্ধ ছিলেন উতত্ম কুমারও। ভরতনাট্যমের গুণী শিল্পী, কর্নাটকি গায়িকা, চলচ্চিত্রাভিনেত্রী, নৃত্য নির্দেশিকা, ও সংসদ সদস্য। জীবন তাঁকে নানা পরিচয়েই পরিচিত করেছে। ১৯৩৬-এর ১৩ অগস্ট মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ত্রিপলিক্যান এলাকায় এক তামিল পরিবারে জন্ম হয় বৈজয়ন্তীমালার। বাবা এম ডি রমন ও মা বসুন্ধরা দেবী।

০৫ ১৮

ছোটবেলা থেকেই নাচের প্রতি ছিল তাঁর অদম্য টান। মাত্র চার বছর বয়সেই ভরতনাট্যমে এমনই দড় হয়ে ওঠেন তিনি যে, ১৯৪০ সালে ভ্যাটিকান সিটিতে ধ্রুপদী নৃত্য পরিবেশনের জন্য মনোনীত হন। সঙ্গে পড়াশোনাও চালিয়ে যান চেন্নাইয়ের চার্চ পার্কের সেক্রেড হার্ট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

০৬ ১৮

মাত্র ১৩ বছর বয়সে তামিল চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন তিনি। পরিচিত হতে শুরু করেন তার পরের বছর (১৯৫০) তেলুগু চলচ্চিত্র ‘জিভিথাম’-এ অভিনয় করে। এই সময় বলিউড ও তামিল ইন্ডাস্ট্রির নানা ছবিতেই নাচ ও অভিনয় করেন বৈজয়ন্তীমালা। নৃত্য সহযোগে অভিনয়ের কারণে বলিউড তাঁকে ‘টুইঙ্কল টোজ’ নামে ডাকতে শুরু করে।

০৭ ১৮

১৯৫৪ সালে ‘নাগিন’ বলিউডের বক্স অফিস হিট করল আর বৈজয়ন্তীমালাও নিজের নামটিকে তৎকালীন বলিউডের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী হিসেবে খোদাই করে ফেললেন। এর পর তাঁকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। শুধু বলিউডি নয়, তামিল, তেলুগু সব ইন্ডাস্ট্রির প্রযোজকই তাঁর ডেট পেতে অপেক্ষা করতেন তখন।

০৮ ১৮

‘দেবদাস’-এ ‘চন্দ্রমুখী’র ভূমিকায় তাঁর অভিনয় নাড়া দেয় সকলের মন। তবে এই ছবি কিছু বিতর্কেরও জন্ম দেয়। চন্দ্রমুখীর ভূমিকায় অভিনয় করে বৈজয়ন্তীমালা সেরা সহ-অভিনেত্রীর পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলে তিনি সেই পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেন। তাঁর যুক্তি, তিনি কোনও সহকারী অভিনেত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেননি। নায়িকার ভূমিকাতেই করেছেন।

০৯ ১৮

তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। এর পর ‘নিউ দিল্লি’, ‘সাধনা’, ‘নয়া দৌড়’, ‘মধুমতী’, ‘আশা’— একের পর এক ব্লকব্লাস্টার উপহার দেন বৈজয়ন্তীমালা। এ বার ১৯৫৯-এ সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার হাতে আসে তাঁর।

১০ ১৮

বলিউডের পাশাপাশি তামিল ছবিতেও এই সময় তুঙ্গ সাফল্য পেতে শুরু করেন তিনি। ১৯৬১ সালে দিলীপ কুমারের সঙ্গে ‘গঙ্গা যমুনা’ ছবিতে ভোজপুরী সংলাপের অংশে সিনেমাপ্রেমীদের মন নতুন করে জিতে নেন বৈজয়ন্তীমালা। কেরিয়ারের শেষের দিকে তপন সিংহের পরিচালনায় বাংলা ছবি ‘হাটে বাজারে’-তেও অভিনয় করে প্রশংসা অর্জন করেন তিনি।

১১ ১৮

রাজেন্দ্র কুমারের সঙ্গেও প্রেম ঘন হয় বৈজয়ন্তীমালারও। এমনকি, বৈজয়ন্তীমালাকে বিয়ের প্রস্তুতি নিলে রাজেন্দ্রের স্ত্রী তাঁদের সন্তান-সহ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। রাজেন্দ্র বাধ্য হন বৈজয়ন্তীমালাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসতে।

১২ ১৮

১৯৫০-’৬০— এই দুই দশক ধরে বিভিন্ন ছবিতে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল, নাচের জেরে বিক্রি হয়ে যেত তাঁর ফিল্মের বেশির ভাগ টিকিট। বক্স অফিস ধরে রাখার এই ক্ষমতার জন্য তাঁকে ‘নুমেরো ইউনো অভিনেত্রী’ বা সেরা বর্ণাঢ্যময় অভিনেত্রী হিসেবেও মনে করা হত।

১৩ ১৮

দিলীপ ও রাজেন্দ্র দু’জনে নায়কের সঙ্গে উত্তাল প্রেম থাকলেও কোনও প্রেমই পরিণতি পায় না। অবশেষে ১৯৬৮ সালে চিকিৎসক চমনলাল বালিকে বিয়ে করেন বৈজয়ন্তীমালা। ছেড়ে দেন চলচ্চিত্রজীবন। বরং বেশি সময়টা কাটাতে থাকেন নাচ ও পছন্দের গলফ খেলা নিয়ে। সংসার ও তাঁদের সন্তান সুচিন্দ্র বালিকে সময় দিতেই ব্যস্ত থাকেন তখন।

১৪ ১৮

চলচ্চিত্র জীবন শেষ হওয়ার পরেও ভরতনাট্যম নিয়ে তাঁর ভাবনা কমেনি। ১৯৮২ সালে শিল্পকলায় অসামান্য অবদান রাখার জন্য সর্বোচ্চ ‘ভারতীয় সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি’ পুরস্কার লাভ করেন।

১৫ ১৮

অভিনেতা দেব আনন্দের সঙ্গে বৈজয়ন্তীমালার সম্পর্ক একেবারে পারিবারিক ছিল। তাঁকে ‘পাপা’ বলে ডাকতেন দেব আনন্দ। ‘পাপা’ অর্থে প্রিয় বন্ধু বা পরিজন। দেব আনন্দের মৃত্যুতে সেই স্মৃতিচারণার কথাই সংবাদ মাধ্যমকে জানান অভিনেত্রী।

১৬ ১৮

আশির দশকের মাঝামাঝি বৈজয়ন্তীমালার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৮৪-তে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের মনোনীত প্রার্থীরূপে তামিলনাড়ু সাধারণ নির্বাচনে দক্ষিণ চেন্নাই সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তার প্রতিপক্ষ ছিলেন জনতা পার্টির নেতা ইরা সেজিয়ান। মোট ভোটের ৫১.৯২ শতাংশ পেয়ে সেজিয়ানকে হেলায় হারান তিনি।

১৭ ১৮

লোকসভায় প্রথমবারের মতো অভিষেক ঘটার পর ১৯৮৫ সালে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষে সরাসরি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৮৯-তেও তামিলনাড়ু সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে মনোমালিন্য ও অন্যান্য নানা কারণে ১৯৯৯-এ কংগ্রেস ছাড়েন তিনি। সে বছরই যোগ দেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে।

১৮ ১৮

নানা বিতর্ক, প্রেম, সুখী সংসার, নাচ, অভিনয়, রাজনীতি সব কিছু নিয়েই বৈজয়ন্তীমালা আজও তৎকালীন তরুণদের ‘হার্টথ্রব’ হয়েই রয়েছেন। পুরস্কারের দ্যুতি, প্রশংসার স্বীকৃতি ছাড়িয়ে সে মুগ্ধতা আজও উজ্জ্বলতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement