পরিবারে কয়েক প্রজন্ম ধরে খেলাধুলোর চর্চা। তিনিও চেয়েছিলেন বাবার মতো ব্যাডমিন্টন খেলবেন। স্কুলজীবনে হাতে ধরেছিলেন র্যাকেট। খেলেছিলেন জাতীয় স্তর অবধি। খেলতেন বেসবলও। কিন্তু দশম শ্রেণি থেকে মন দিলেন মডেলিংয়ে। সেই শুরু। কয়েক দশক পরে তিনি-ই হয়ে উঠলেন দীপিকা পাড়ুকোন।
বিশ্বখ্য়াত ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় প্রকাশ পাড়ুকোন এবং তাঁর ট্র্যাভেল এজেন্ট স্ত্রী উজ্জ্বলার বড় মেয়ে দীপিকার জন্ম ১৯৮৬ সালের ৫ জানুয়ারি। ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে।
এক বছর বয়স থেকে দীপিকা তাঁর পরিবারের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন বেঙ্গালুরুতে। তাঁর বোন অনীশা একজন গল্ফার। দীপিকার ঠাকুর্দা রমেশ ছিলেন মাইসুরু ব্য়াডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি। সোফিয়া হাই স্কুলের পরে দীপিকার পড়াশোনা মাউন্ট কারমেল কলেজে।
পরে এক সাক্ষাৎকারে দীপিকা বলেছিলেন শৈশবে তিনি ছিলেন লাজুক। বন্ধুবান্ধবও ছিল না বিশেষ। সকাল-বিকেল শরীরচর্চা ও ব্যাডমিন্টন প্রশিক্ষণের সঙ্গে স্কুল আর হোমওয়ার্ক। এই ছিল দীপিকার রুটিন।
দশম শ্রেণি থেকে দীপিকার মন জুড়ে বসে মডেলিং। তিনি অনুভব করেন,ব্য়াডমিন্টন তিনি খেলছিলেন পরিবারের ঐতিহ্য়ের কথা ভেবে। মন ছিল না এই খেলায়। সে সময়েই ঠিক করেন, তিনি এ বার থেকে মডেলিং-ই করবেন।
ক্রমশ বেশ কিছু পণ্যের বিজ্ঞাপনে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন দীপিকা। কিংফিশার ক্যালেন্ডার শুটিংয়েও তিনি ছিলেন অন্যতম মুখ। মডেলিং থেকে অভিনয়ে সুযোগ পেতে দেরি হল না। ২০০৬ সালে মুক্তি পেল দীপিকার প্রথম ছবি। কন্নড় ভাষার ছবি ‘ঐশ্বর্যা’-য় তাঁকে দেখা গেল নায়িকার ভূমিকায়।
বলিউডে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ পরের বছরই। মুক্তি পেল ‘ওম শান্তি ওম’। বক্স অফিসে সুপারহিট হয়েছিল দীপিকার প্রথম হিন্দি ছবি। এরপর ‘বচনা অ্যায় হাসিনো’, ‘চাঁদনিচক টু চায়না’, ‘বিল্লু বার্বার’, ‘লভ আজ কাল’, ‘কার্তিক কলিং কার্তিক’, ‘হাউসফুল’, ‘দম মারো দম’, ‘আরক্ষণ’-সহ একের পর এক সুপারহিট ছবির নায়িকা ছিলেন তিনি।
করিনা কপূর, প্রিয়ঙ্কা চোপড়াকে পিছনে ফেলে ইন্ডাস্ট্রির এক নম্বর নায়িকা হতে সময় লাগেনি দীপিকার। ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’, ‘ফাইন্ডিং ফ্য়ানি’,‘হ্য়াপি নিউ ইয়ার’, ‘পিকু’, ‘বাজিরাও মস্তানি’ এবং ‘পদ্মাবত’। দীপিকার নামের পাশে ক্রমশ দীর্ঘ হয়েছে সুপারহিট ছবির তালিকা।
এ বছরের গোড়ায় দীপিকার প্রযোজিত প্রথম ছবি ‘ছপাক’ মুক্তি পেয়েছে। মেঘনা গুলজারের পরিচালনায় দীপিকা এ ছবির নায়িকাও। তিনি পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন অ্যাসিড আক্রান্ত লক্ষ্মী আগরওয়ালের জীবনযুদ্ধ।
সম্পর্কও দীপিকার জীবনে আছড়ে পড়েছে ঢেউয়ের মতো। সেলেব্রিটি হওয়ার বহু আগে দীপিকার বিশেষ বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল নীহার পাণ্ড্যর সঙ্গে । দু’জনে একটি প্রতিষ্ঠানে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নিতেন। তবে সেই প্রেম দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
নীহারের মতো উপেন পটেল এবং মুজাম্মিল ইব্রাহিমের সঙ্গেও দীপিকার সম্পর্ক ভেঙে যায় খুব দ্রুত। এরপর দীপিকার জীবনে আসেন যুবরাজ সিংহ। তাঁদের প্রেমকে সংক্ষিপ্ত করে দেয় যুবরাজের আকস্মিক অসুস্থতা। যুবির ঘনিষ্ঠ মহলের অভিযোগ ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুবির লড়াইয়ে তাঁর পাশে ছিলেন না দীপিকা।
শিল্পপতি বিজয় মাল্যর ছেলে সিদ্ধার্থের সঙ্গেও দীপিকার ঘনিষ্ঠতা ছিল টক অব দ্য টাউন। অনেক জায়গায় একসঙ্গে দেখা গিয়েছে দু’জনকে। রণবীর কপূরের জন্য সম্ভবত ভেঙে যায় সিদ্ধার্থ-দীপিকা সম্পর্ক।
রণবীর কপূরের সঙ্গে সম্পর্কের কথা দীপিকা স্বীকার করেছিলেন। ‘বচনা অ্যায় হাসিনো’ ছবির শুটিং থেকে দু’জনের আলাপ। অনুরাগীরা অপেক্ষায় ছিলেন ‘লিভ ইন’ থেকে তাঁদের সম্পর্ক বিয়ে অবধি পৌঁছনো দেখতে।
কিন্তু অনুরাগীদের হতাশ করে বিচ্ছেদ হয়ে যায় দীপিকা-রণবীরের। বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে রণবীরকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন দীপিকা। তাঁর অভিযোগ, রণবীর তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার সময়েও রণবীরের সঙ্গে অন্য কারও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। অভিযোগ দীপিকার।
তিনি নাম না করলেও ইন্ডাস্ট্রিতে গুঞ্জন এই ‘অন্য কেউ’ হলেন ক্যাটরিনা কইফ। দীপিকা জানান, তিনি প্রথম বার রণবীরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
কিন্তু তার পরেও রণবীর তাঁর কাছে ধরা পড়ে যান। তখন দীপিকা সিদ্ধান্ত নেন সরে আসার। তবে বিচ্ছেদের পরেও প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রেখেছেন দীপিকা।
বিচ্ছেদের পরে তিনি মানসিক ভাবে অত্যন্ত ভেঙে পড়েন। জানিয়েছেন দীপিকা। শোনা যায়, শুধু প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গে নামের সাদৃশ্য আছে বলে রণবীর সিংহের ঘনিষ্ঠ হন দীপিকা। ক্রমে সেই ঘনিষ্ঠতা থেকে প্রেম এবং তারপর বিয়ে।
মাদককাণ্ডে জড়িয়ে সম্প্রতি জীবনের কঠিন সময়ের মুখোমুখি দীপিকা। দুঃসময়ে স্ত্রীকে আগলে রেখেছেন রণবীর। মাদক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় স্ত্রীর পাশে থাকতে চান রণবীর সিংহ।
এনসিবি-র কাছে লিখিত ভাবে সেই আর্জি জানিয়েছেন নায়ক। তাঁর বক্তব্য, দীপিকা মাঝে মাঝেই অ্যাংজাইটিতে ভোগেন। পরিস্থিতি বিশেষে ঘন ঘন প্যানিক অ্যাটাকও হয় তাঁর। সেইজন্যই তিনি জেরার সময় স্ত্রী-র পাশে থাকতে চান। এনসিবি এখনও রণবীরের আবেদনের কোনও উত্তর দেয়নি।
দিন কয়েক আগে পরিচালক শকুন বাত্রার শ্যুটের জন্য গোয়া গিয়েছিলেন দীপিকা। শ্যুট চলছিলও জোরকদমে। কিন্তু আচমকা বছর তিনেকের পুরনো এক হোয়াটস্অ্যাপ চ্যাট এনসিবি-র হাতে আসায় সমস্ত পরিকল্পনা ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। চ্যাটে দেখা যায়, ‘ডি’ এবং ‘কে’ নামে দুই ব্যক্তির মধ্যে মাদক প্রসঙ্গে একাধিক বার কথা চালাচালি হয়েছে।
কখনও ‘ডি’ প্রশ্ন করছেন ‘কে’-কে, ‘মাল’ আছে কি না। কথা হচ্ছে গাঁজা এবং ‘হ্যাশ’ নিয়েও। এনসিবি-র অনুমান, ‘ডি’ হলেন দীপিকা। ‘কে’ দীপিকার ম্যানেজার করিশ্মা। সে কারণেই তাঁদের জেরার জন্য সমন পাঠানো।
প্রসঙ্গত, জানুয়ারিতে জেএন ইউ-এ ছাত্রদের একাংশের উপর হামলার প্রতিবাদে সেখানে গিয়ে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন দীপিকা। তখন থেকেই বিজেপি তাঁর ‘ঘোষিত বিরোধী’। পাশাপাশিই, এক সাক্ষাৎকারে দীপিকা সরাসরি জানিয়েছিলেন, তিনি রাহুল গাঁধীকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর হিসেবে দেখতে চান। সেই কারণে এই তলব ‘রাজনৈতিক’ কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।