সিঙ্গল পেরেন্ট হিসেবে মাত্র ২১ বছর বয়সে দত্তক দুই কন্যাসন্তানকে। শাশুড়ি হয়ে গিয়েছেন ৩৭ বছর বয়সেই। বলিউডের ‘মস্ত গার্ল’ রবিনা টন্ডনের এই ছক ভাঙা দিক অনেকেরই অজানা।
রবিনার জন্ম ১৯৭৪-এর ২৬ অক্টোবর। বলিউডের পরিচালক-প্রযোজক রবি টন্ডনের মেয়ে হয়েও প্রথম দিকে অভিনয়ে আসার ইচ্ছে বিশেষ ছিল না রবিনার। যমুনাবাই স্কুল থেকে পাশ করে তিনি স্নাতক কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন মিঠিবাই কলেজে। কিন্তু স্নাতক না হয়ে মাঝপথেই ছেড়ে দেন কলেজ।
চাকরি শুরু করেন একটি বিজ্ঞাপনের সংস্থায়। তত দিনে আসতে শুরু করেছে ছবির অফার। কিন্তু প্রথম দিকে সুযোগ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। শেষে মন পরিবর্তন হয়। ১৯৯১ সালে প্রথম অভিনয় করেন সলমনের বিপীতে ‘পাত্থর কে ফুল’ ছবিতে। তবে ছবিটি সে ভাবে সফল হয়নি।
প্রথম ছবি ব্যর্থ হলেও আত্মপ্রকাশের পরে বেশ কয়েকটি বক্সঅফিস সফল ছবির নায়িকা হন তিনি। ‘লাডলা’, ‘দিলওয়ালে’, ‘মোহরা’, ‘খিলাড়িয়োঁ কা খিলাড়ি’-র মতো ছবির পরে রবিনাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
বাবার নাম ‘রবি’ এবং মায়ের নাম ‘বীণা’ মিলিয়েই তাঁর নাম রাখা হয় রবিনা। মায়ের সঙ্গে তিনি প্রায়ই যেতেন অনাথাশ্রমে। ১৯৯৫ সালে রবিনার এক আত্মীয়া দুই কন্যাসন্তানকে রেখে প্রয়াত হন।
মাতৃহীন দুই কন্যা, পূজা ও ছায়াকে দত্তক নেন রবিনা। বলেই দিয়েছিলেন, তাঁকে যিনি বিয়ে করবেন, তাঁকে রবিনার দুই পালিত কন্যা ও পোষ্য কুকুরদের নিয়েই বিয়ে করতে হবে। তাদের ছাড়া তিনি শ্বশুরবাড়িতে পা রাখবেন না।
এর মাঝেই অন স্ত্রিনের মতো জমে উঠল অক্ষয়-রবিনার অফ স্ক্রিন প্রেমও। কিন্তু তিন বছর পরে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। শোনা যায়, অক্ষয়ের ক্যাসানোভা ইমেজ মেনে নিতে পারেননি রবিনা। প্রেম ভেঙে যাওয়ার পরে রবিনা সাময়িক ভাবে চরম অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন।
১৯৯১-১৯৯৯ ছিল রবিনার কেরিয়ারের সেরা সময়। ‘আন্দাজ অপনা অপনা’, ‘জিদ্দি’, ‘গুলাম-এ-মুস্তাফা’, ‘বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা’— রবিনার সফল ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম। বড় পর্দার পাশাপাশি কাজ করেছেন টেলিভিশন শো-তেও।
২০০১ সালে কল্পনা লজমির ‘দামন: এ ভিক্টিম অব ম্যারিটাল ভায়োলেন্স’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয় এনে দেয় সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার। ২০১৫ সালে অনুরাগ কশ্যপের ‘বম্বে ভেলভেট’ ছবিতে রবিনার চমকপ্রদ প্রত্যাবর্তন ঘটে।
২০০৩ সালে ‘স্টাম্পড’ ছবির সময় রবিনার সঙ্গে আলাপ ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটর অনিল থাড়ানির সঙ্গে। ২০০৪-এর ২২ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেন দু’জনে। ২০০৫ সালে জন্ম তাঁদের মেয়ে ‘রাশা’ এবং ২০০৮ সালে জন্ম ছেলে, রণবীরবর্ধনের।
বলিউডের খলনায়ক ম্যাক মোহন এবং অভিনেত্রী কিরণ রাঠৌরের আত্মীয় রবিনার ছুটি কাটানোর প্রিয় জায়গা সুইৎজারল্যান্ড। প্রিয় খাবার তন্দুরি চিকেন, ধোকলা আর তন্দুরি পনীর।
অবসরে ভালবাসেন ছবি দেখতে। পছন্দের ছবি ‘চলতি কা নাম গাড়ি’, ‘জানে ভি দো ইয়ারো’ এবং ‘পড়োসন’। প্রিয় অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত, গোবিন্দ, ঋষি কপূর এবং জ্যাকি শ্রফ। পছন্দের অভিনেত্রী নীতু সিংহ।
আছে নিত্যনতুন ঘড়ি আর গাড়ির শখও। গ্যারাজে অডি আর বেন্টলি থাকলেও রবিনার পছন্দের বাহন পাজেরো।
২০১১ সালে পালিত বড় মেয়ের বিয়ে দেন রবিনা। ছোট দত্তককন্যার বিয়ে হয় ২০১৬ সালে। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দেন ‘মা’ রবিনা। তাঁর পরামর্শ, সাতপাঁচ ভাববেন না। ইচ্ছে হলে তাড়াতাড়ি দত্তক নিন অনাথ শিশুদের।