কৌশিকের ছবি দেখার জন্য আগ্রহী কুণাল।
আগামী বছর মৃণাল সেনের শতবর্ষ। কিংবদন্তি পরিচালকের কথা উঠলেই তাঁর একাধিক ছবির নাম, প্রসঙ্গ চর্চায় উঠে আসে। বিশেষত ১৯৮২ সালের ‘খারিজ’। এই ছবিতে উঠে এসেছে এক মধ্যবিত্ত পরিবার। সেখানে কাজ করত শিশু ভৃত্য ‘পালান’। সারা দিন খাটনির পরে পালান রান্নাঘরে। সেখানেই এক শীতের রাতে চুল্লি জ্বলছিল। আস্তে আস্তে ঘর ভরে ওঠে কার্বন ডাই অক্সাইডে। অক্সিজেনের অভাবে ঘুমের মধ্যেই মারা যায় সে। পরে ময়নাতদন্তে ফাঁস হয় আসল ঘটনা। ‘পালান’ তখন সতর্কতার আরও এক নাম হয়ে উঠেছিল বঙ্গ সমাজে।
সাল ২০২২। মানুষ অনেক সজাগ হয়েছে। এখন হয়তো শীতের রাতে কোনও মধ্যবিত্ত বাড়ির রান্নাঘরে চুল্লি জ্বলে না। কিন্তু এখনও পুরসভা ‘বিপজ্জনক বাড়ি’র তকমা সেঁটে দেওয়ার পরেও সেখানে অবলীলায় বাস করেন কিছু নিরুপায় মানুষ। যাঁদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। বাসা বদলানোর আর্থিক সঙ্গতিও নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছু দিনের জন্য তাঁরা ঠাঁই নেন স্থানীয় পুরসভার কমিউনিটি হল বা বিদ্যালয়ে। দুর্যোগ কমলে ফের যথাস্থানে। এবং বাড়ি ভেঙে যখন তাঁরা মারা যান? সঠিক সময়ে তাঁদের দাহকার্যও হয় না!
কলকাতা কি আদৌ বদলেছে? কতটা উন্নত নিম্নবিত্ত মানুষদের জীবন? এই দুটো প্রশ্ন একুশ শতকেও সমান প্রাসঙ্গিক। তারই জবাব খুঁজবেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর আগামী ছবি ‘পালান’-এ। নতুন ছবিতে এই চরিত্রকে আর দেখা যাবে না। কিন্তু ‘পালান’ মৃণালের ‘খারিজ’-এর মতোই উপস্থিত থাকবে ছবিজুড়ে। ছবির ভাবনায়। সে কথা সদ্য জানতে পেরেছেন মৃণাল-পুত্র কুণাল সেন। কৌশিকের এই পদক্ষেপে যারপরনাই খুশি তিনি। সেই আনন্দ শনিবার ছড়িয়ে দিয়েছেন ফেসবুক পোস্টে। তাঁর বক্তব্য, ৪০ বছর পর তিনি জানতে পেরেছেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ‘পালান’ নামে একটি ছবি তৈরির কথা ঘোষণা করেছেন। তাঁর বাবার ছবির মৃত ভৃত্য বালকের নামে। যা আজকের বিশ্বেও সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
নিজের আনন্দ ভাগ করে নিতে গিয়ে স্মৃতিকাতর কুণাল, ‘‘খারিজ’ গুরুত্বপূর্ণ ভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছিল।’ পরিচালক-পুত্রের কথায়, ‘নতুন ছবিটির প্লট সম্পর্কে আর বেশি কিছু জানি না। তবে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছি। আগামী বছর ছবি মুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে। যে বছর আমার বাবার ১০০ বছর হবে।’
কৌশিকের নতুন ছবিতে অভিনয় করবেন মমতা শঙ্কর, যিশু সেনগুপ্ত, অঞ্জন দত্ত, শ্রীলা মজুমদার এবং পাওলি দাম। ২৫ মার্চ থেকে ছবিটির শ্যুট শুরু। প্রমোদ ফিল্মস এবং বিগ ডে-র নিবেদনে এই ছবির সঙ্গীত পরিচালক নীল দত্ত। শিল্প নির্দেশনা এবং চিত্রগ্রহণের দায়িত্বে যথাক্রমে তন্ময় চক্রবর্তী এবং আপ্পু প্রভাকর।