সঙ্গীতই জীবন। কিন্তু ভালবাসতেন ক্রিকেটও। সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে ‘ব্যক্তিগত যোগসূত্র’ ছিল লতা মঙ্গেশকরের। কী ভাবে? সে কথা জানিয়েছিলেন খোদ লতাই।
ক্রিকেটের প্রতি লতার ভালবাসার কথা অজানা নয়। সচিনের প্রতি তাঁর টানের কথাও বারবার বলেছেন। সচিনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যে কতখানি আন্তরিক ছিল, তা জানিয়েছিলেন লতা। বলেছিলেন, ‘‘সচিন আমাকে মায়ের মতোই ভালবাসেন। আমিও মায়ের মতোই ওঁর জন্য প্রার্থনা করি। প্রথম যে দিন আমাকে ‘আই’ (মা) বলে ডেকেছিলেন... সে দিনটি কখনও ভুলব না। আমারও মনে হয়েছিল, ওঁর মতো ছেলে পাওয়া সৌভগ্য।’’
পুত্রস্নেহ থাকলেও সচিনের জন্মদিনে তা কখনও উদ্যাপন করা হয়ে ওঠেনি। কারণও জানিয়েছিলেন লতা। এক বার সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছিলেন, ‘‘সচিনের জন্মদিন ২৪ এপ্রিল। সে দিন আমার বাবা (দীননাথ মঙ্গেশকর)-র মৃত্যুবার্ষিকী। ফলে ওই দিনটিতে আমাদের কখনও দেখা হয়নি। এক বার তো আমরা ২৩ এপ্রিল দেখা করেছিলাম।’’ সচিনই যে প্রকৃত অর্থে ‘ভারতরত্ন’— সে কথাও বহু বার বলেছেন তিনি।
রবিবার চিরবিদায় নিয়েছেন লতা। ৯২ বছর বয়সে ইহজগত থেকে বিদায় নিলেও রেখে গিয়েছেন তাঁর সুরেলা জাদু। সুরের জগতের পাশাপাশি তাঁর উৎসাহ ছিল ক্রিকেট-সহ নানা ক্ষেত্রে।
১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর লতার জন্ম এক মরাঠি পরিবারে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারান। মঞ্চাভিনেতা এবং গায়ক দীননাথের মেয়েকে প্রথমে 'হেমা' বলে ডাকা হত। দীননাথের ‘ভাব বন্ধন’ নাটকের ‘লতিকা’ নামের চরিত্রে প্রাণীত হয়ে সে নাম বদলে রাখা হয় 'লতা'।
সেই ছোট্ট হেমাই সুরের জগতের নক্ষত্র হয়ে উঠছিলেন। ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত। জীবিত থাকাকালীন তাঁর নামে পুরস্কার দেওয়া হত।
প্রথম গান রেকর্ড করে লতা আয় করেছিলেন ২৫ টাকা। তবে সেটুকু আয় করতেই বিস্তর বাধা পার হতে হয়েছিল তাঁকে।
কম বয়সে বাবাকে হারানোর পর পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন লতা। আশা, ঊষা, মীনা এবং হৃদয়নাথ— ভাইবোনকে প্রতিপালনের জন্য কম বয়সেই উপার্জনের রাস্তা খুঁজতে হয়েছে তাঁকে।
বাবার মৃত্যুর পর পরিবারিক বন্ধু বিনায়ক দামোদর কর্নাটকির সাহায্য পেয়েছিলেন লতারা। ‘নবযুগ চিত্রপট’ ফিল্ম কোম্পানির মালিক বিনায়কের প্রচেষ্টায় মরাঠি ছবিতে অভিনয় এবং গান গাওয়ার সুযোগও আসে।
উপার্জনের তাগিদেই ছবিতে অভিনয় করেছেন। তখন বয়স মাত্র ১৩। তবে সে জগতে মন বসেনি। তাই অভিনয় করার কথা ভাবেননি। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে নিজের অভিনয় জীবন প্রসঙ্গে প্রায়শই বলতেন লতা।
বলিউডি ছবিতে নেপথ্য-গায়িকা হিসাবে লতার প্রথম ছবি ‘মহল’। সেটা ছিল ১৯৪৯। তবে তারও আগে ১৯৪২ সালে মরাঠি ছবি ‘কিতী হসাল’-এ প্রথম গান রেকর্ড করেন লতা।
প্রথম বার মঞ্চে উঠে গান শোনানোর জন্য লতার উপার্জন ছিল ২৫ টাকা। তবে অশোককুমার-মধুবালা অভিনীত ‘মহল’-ই তাঁর কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ওই ছবির ‘আয়েগা আনেওয়ালা’ গানটি তুমুল জনপ্রিয় হওয়ার পর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি লতাকে।
নেপথ্য-গায়িকা হিসাবে প্রায় সাত দশকে ৩৬টিরও বেশি ভারতীয় ভাষায় গান রেকর্ড করেছেন। তবে যে গানটিতে লতার কণ্ঠ ছাড়া অনেকেই কল্পনা করতে পারেন না, তা হল ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কি লোগোঁ’। ১৯৬৩ সালে ভারত-চিন যুদ্ধের সময় লতার কণ্ঠে সেই গান শুনে অশ্রু বিসর্জন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুও।