কুমার শানু ও জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
যারা অডিশন দিলেন তাঁদের গান কেমন লাগল?
শানু: খুবই ভাল। বেশ কয়েক জনের গলা রীতিমতো ভাল, খুবই ভাল গেয়েছে। ফাইনাল রাউন্ডে গিয়ে বিচার করার পালা। কিন্তু অডিশনে ভাল গেয়েছে অনেকেই।
রিয়্যালিটি শো-তে কেউ সুযোগ পেলে সে সেলিব্রিটি হয়ে যায়। বাড়ি-গাড়ি হয় তাঁর। কিন্তু তারপর কী?
শানু: রিয়্যালিটি শোতে যেমন গেয়েছে, তা যদি বজায় রাখে এবং ঠিকমতো চর্চা চালিয়ে যায়, তবে ভাল গাওয়াটা চালিয়েও যেতে পারে, সুযোগও আসতে পারে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রিয়্যালিটি শো-তে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরে স্টেজ শো করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে বয়সে ছোট হলে, বাবা মায়েরাও সে দিকে ঠেলে দেন। কারণ স্টেজ শো করার সুযোগ বা রোজগারের অঙ্ক, দুটোই বেশি। তবে এই সব শো বেশি না করে মূল ধারার গানের জগতে ঢোকার ইচ্ছে থাকলে সফল হবে বেশি। কিন্তু তা আর হয় কই? বেশি স্টেজ শো করতে গিয়েই সমস্যা বাড়ে।
জিৎ: উল্টো উদাহরণও আছে। নিজেকে ধরে রাখতে পারলে, ঠিক পথে পরিচালিত করতে পারলে সাফল্য আসে। সোনু নিগমও এসেছিল এক সময়। পঁচিশ-তিরিশ বছর আগে। সুনিধিও তো এসেছে রিয়্যালিটি শো থেকেই। তবে এমন উদাহরণের সংখ্যাটা এত কম যে, বিচারক হিসেবে বার বার আমরা সে কথাটা মনে করিয়ে দিতে থাকি।
শানু: রিয়্যালিটি শো থেকে উঠে এসে যারা স্টেজ শো-তেই বেশি জড়িয়ে পড়বে, তাদের বিষয়ে আমরা গ্যারান্টি দিতে পারি না। কিন্তু যারা শেখাটা চালিয়ে যাবে এবং ঠিক পথে এগোবে, তারা নিশ্চয় মূল ধারায় আসতে পারবে ।
জিৎ: আসলে যারা রিয়্যালিটি শো-র প্রতিযোগী, তারা অনেক বার রিহার্সাল করার পরে শেখা গানগুলো গাইছে। নতুন গান পেলে কী হবে, বা নতুন কম্পোজারের কাছে গেলে কী করবে, সেটাও ভাবা উচিত। রিয়্যালিটি শো-তে আমরা যখন গান শেখাই, তা তাড়াতাড়ি তুলে এক সেকেন্ডে গাইতে হয়। সেটাই শিক্ষা। তার জন্য ঠিকঠাক প্রশিক্ষণ লাগবে না? যদি নতুন গান তুলতে হয়, তা হলে এক বার গানটা শুনেই গেয়ে দেওয়ার ট্রেনিংটা তো থাকতে হবে।
শানের মতো সুরেলা গায়ক একবার আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেছিলেন, ‘স্টুডিও কী বিষয় ভুলে যাচ্ছি।’ তাহলে কী ভাল শিল্পীদের গাওয়ার সুযোগ কমে আসছে?
জিৎ: শান খুবই ভাল গায়, সেটা আমরা সকলে জানি। স্টুডিওতে যাওয়া, গান করা- এটা যে কোনও ভাবেই হতে পারে। কাজ না থাকলেও স্টুডিওতে যাই আমরা অনেকেই।
শানু: উনি একটা অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে বলছেন।
জিৎ: সেটাই আমি বলছি। একজন শিল্পী খুব মুডি তো। কোন একটা মুডে শান হয়তো কথাটা বলে দিয়েছে। স্টুডিওতে তো আমরা যে কোনও সময়েই যেতে পারি। গান রিলিজ হবে, সেই গান হিট হবে, সে সব তো আছেই। তবে তার চেয়েও বড় কথা হল সঙ্গীতের সঙ্গে থাকা।
রও পড়ুন: ঐন্দ্রিলার সঙ্গে জয়ের আচরণ বরদাস্ত করা হবে না, বলছে টেলিপাড়া
একটা সময় আপনার গান সব সময় শোনা যেত...
শানু: এখন শুনতে পান না তাই তো? এই প্রশ্ন সব জায়গায়।
এখন শোনা যায় না। সময় পাল্টে গেল বলেই...
শানু: বদল তো আসবেই। তার দরকারও আছে।
জিৎ: শানুদার হয়ে আমি একটা কথা বলছি। শিল্পী কিন্তু সবসময় শিল্পীই থাকে। শিল্পীর কোনও পরিবর্তন হয় না। গানের জগতে কী বদল আসছে, দুনিয়ায় কী হচ্ছে- হোক না। আমরা শিল্পী তো। আমরা গান নিয়েই থাকব। শানুদা যা গান গেয়েছেন, গানের জগতকে বা শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন- অনেক... অনেক... রাশি রাশি গান। দশ হাজারের বেশি গান।
শানু: হা হা হা...
জিৎ: ভাবা যায়? এখনকার যুগের সঙ্গে তুলনা না করাই ভাল। আজকাল কী গান হচ্ছে, বা আর কী হচ্ছে? উনি (শানু) যা গেয়ে দিচ্ছেন, খালি গলাতেও যা শোনাচ্ছেন, সেটাই আমাদের কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি।
আরও পড়ুন: দার্জিলিঙের ঠান্ডায় অঙ্কুশের ‘স্যাড সং’
বাংলা সিনেমার গান বিষয়ে অভিযোগ নতুন কিছু পাওয়া যাচ্ছে না...
জিৎ: মানুষ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় শুনেছে, মান্না দে শুনেছে। এঁদের গান যুগ যুগ ধরে শুনছে। যে গান ভাল হয়, সে গান অমর হয়ে বেঁচে থাকে। মাঝারি মানের গান হারিয়ে যায়। একটা কথা বলি, যারা আমাদের পরের প্রজন্মও কিন্তু ভাল ভাল কাজ করছে। ভাল কাজ হচ্ছে না, এমন নয়। গানকে সময় দিতে হবে। গান মানে সৃষ্টি তো- ভাল খারাপ সব রকমই হবে। আজকাল শুধু সিনেমা নয়, তার বাইরেও প্রচুর গান হচ্ছে। আজকাল কেউ ইউটিউব চ্যানেল খুলে তাতে গাইলে, সারা বিশ্ব জানতে পারছে।
শানু: রোজই কিন্তু গান রিলিজ হয়। প্রত্যেক সপ্তাহে একটা, দুটো করে।
জিৎ: হ্যাঁ। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম কিন্তু অনেক বড় মাধ্যম। আমারও হিন্দি ও বাংলা ছবির গান আসছে ইউটিউবে।
রিয়্যালিটি শোয়ের ভবিষ্যৎ কী?
জিৎ: ভবিষ্যৎ দারুণ। আমাদের সময়ে আমরা এরকম প্ল্যাটফর্ম পেয়েছি? পাইনি তো। তখন এ সব ছিল না। রিয়ালিটি শো-এর এত বড় প্ল্যাটফর্ম সারা বিশ্বের লোক দেখছে। পরিচিতি বেড়ে যাচ্ছে অনায়াসেই।
শানু: ভবিষ্যৎ ভাল। নতুন গায়কদের জন্য তো উপযোগী তো বটেই।