পরিবারে অভিনয়ের ধারা থাকলেও অনেক স্টারকিড ইন্ডাস্ট্রি থেকে হারিয়ে গিয়েছেন অকালে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম কুমার গৌরব। তবে বলিউডে তাঁর যাত্রার সূত্রপাত দেখে কেউ ভাবতেও পারেননি অভিনয়জীবন এত তাড়াতাড়ি পর্দার আড়ালে চলে যাবে।
বিগত দশকের সুপারস্টার রাজেন্দ্রকুমারের ছেলে কুমার গৌরবের জন্মগত নাম মনোজ তুলি। তাঁর জন্ম ১৯৫৬ সালের ১১ জুলাই। মামাবাড়ির দিক দিয়েও বলিউড-সংযোগ ছিল। দুই পরিবারের স্রোতে গা ভাসিয়ে মনোজেরও আশৈশব স্বপ্ন ছিল অভিনেতা হওয়ার।
মনোজের পড়াশোনা সিমলার বিশপ কটন স্কুলে। অভিনয়ের টানে হাই স্কুলের পরেই পড়াশোনায় ইতি। ছেলেকে লঞ্চ করার জন্য রাজেন্দ্রকুমার কম চেষ্টা করেননি। তাঁর প্রযোজনাতেই ১৯৮১ সালে মুক্তি পায় ‘লভ স্টোরি’।
বাবার প্রযোজনায় ‘লভ স্টোরি’ দিয়েই ইন্ডাস্ট্রিতে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ মনোজের। অভিনয়জীবনে পা রেখে তাঁর নতুন নাম হয় কুমার গৌরব। প্রথম ছবিতে তাঁর বিপরীতে নায়িকা ছিলেন বিজেয়তা পণ্ডিত। দু’জনেরই এটা প্রথম ছবি ছিল।
রাহুল দেববর্মনের পরিচালনায় ‘লভ স্টোরি’-র গানও ছিল সুপারহিট। প্রথম ছবিতে ব্লকবাস্টার পারফরম্যান্সের পরে কুমার গৌরবের কাছে সুযোগ আসতে দেরি হয়নি।
১৯৮২ সালে মুক্তি পায় ‘তেরি কসম’। এই ছবিতে কুমার গৌরবের নায়িকা ছিলেন পুনম ধিলোঁ। সে বছরই তাঁর ‘স্টার’ ছবিও সফল হয়েছিল বক্স অফিসে।
১৯৮৫ সালে মহেশ ভট্টের পরিচালনায় টেলিছবি ‘জনম’-কে কুমার গৌরবের সেরা কাজ বলে মনে করা হয়। পরের বছর মহেশের পরিচালনায় ‘নাম’ ছবিটিও বক্স অফিসে সফল হয়েছিল। এই ছবিরও প্রযোজক ছিলেন রাজেন্দ্র কুমার।
কিন্তু বার বার বাবার সাহায্যেও শেষরক্ষা হল না। বক্স অফিসে পর পর ফ্লপ করতে লাগল কুমার গৌরবের ছবি। প্রথম ছবির ‘প্রেমিক’ ভাবমূর্তি থেকে বেরিয়েও আসতে পারেননি তিনি।
তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য বাকি নাম হল ‘রোমান্স’, ‘হম হ্যায় লাজবাব’, ‘অল রাউন্ডার’, ‘জনম’, ‘বেগানা’, ‘নাম’, ‘দিল তুঝকো দিয়া’, ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’, ‘ইন্দ্রজিৎ’ এবং ‘হাঁ মেরি জান’।
নব্বইয়ের দশকে ছেলেকে আবার বলিউডের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন রাজেন্দ্রকুমার। ১৯৯৩ সালে রাজেন্দ্রকুমারের প্রযোজনায় মুক্তি পেয়েছিল ‘ফুল’। ছবিতে কুমার গৌরবের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন মাধুরী দীক্ষিত। কিন্তু মাধুরী ম্যাজিকেও এই ছবির লক্ষ্মীলাভ হয়নি।
২০০২ সালে বলিউডে কুমার গৌরবের শেষ ছবি ‘কাঁটে’ মুক্তি পেয়েছিল। সঞ্জয় গুপ্তের পরিচালনায় এই ক্রাইম থ্রিলারে তিনি অভিনয় করেছিলেন। কুমার গৌরবের অন্যান্য ছবির তুলনায় ‘কাঁটে’ বক্স অফিসে কিছুটা সফল হয়েছিল।
এর পর ‘গায়ানা ১৮৩৮’ নামে একটি মার্কিন ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু বলিউডের মূল স্রোতে আর ফিরে আসতে পারেননি। বড় পর্দার পাশাপাশি তাঁকে দেখা গিয়েছে বেশ কিছু টেলিভিশন সিরিজেও। কিন্তু সেখানেও সাফল্য তাঁর থেকে দূরেই রয়ে গিয়েছে।
রাজেন্দ্রকুমারের সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে মেয়ে রিমার সঙ্গে কুমার গৌরবের বিয়ে দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন রাজ কপূর। কিন্তু সে সময় বিজেয়তার সঙ্গে কুমার গৌরবের প্রেমের গুঞ্জন ইন্ডাস্ট্রিতে বহুচর্চিত।
বাগদান হওয়ার পরেও ভেঙে যায় কুমার গৌরবের সঙ্গে রিমার বিয়ে। রাজ কপূরের পরিবর্তে কুমার গৌরব পরবর্তী সময়ে সুনীল দত্তের জামাই হন। দুই বছরের প্রেমপর্বের পরে ১৯৮৪ সালে তিনি বিয়ে করেন সুনীল দত্ত-নার্গিসের মেয়ে, সঞ্জয় দত্তের বোন নম্রতাকে। অন্যদিকে, পরিবারের আপত্তিতে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি কুমার গৌরব এবং বিজেয়তার প্রেম।
কুমার গৌরব ও নম্রতার দুই মেয়ে। বড় নেয়ে সাচীর বিয়ে হয়েছে প্রযোজক কমল আমরোহীর ছেলে বিলালের সঙ্গে। ছোট মেয়ে সিয়াও বিবাহিত। স্বামীর নাম আদিত্য। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। ফিল্ম জগতের কেউ নন।
অভিনয়ের পাশাপাশি কুমার গৌরবের নেশা বেড়াতে যাওয়া। সেই প্যাশনকেই নিজের পেশা করে নিয়েছেন তিনি। এখন একটি পর্যটন সংস্থার মালিক তিনি। নিজের ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত অতীতের সুপারহিট রোমান্টিক নায়ক। আর ফিরতে চান না অভিনয়ে।