ক্যামেরার ঝলকানির সামনে আর যাই হোক, প্রেমটা হয় না। শুরুতেই তা বুঝে গিয়েছিলেন রণবীর শোরে এবং কঙ্কনা সেনশর্মা। তাই প্রেম পর্ব থেকে বিয়ে, দীর্ঘ দিনের সম্পর্কে কোথাও পাপারাৎজিদের উঁকিঝুকি মারতে দেননি তাঁরা। একই ভাবে নিভৃতেই একে অপরের জীবন থেকে সরে গিয়েছেন তাঁরা। কাদা ছোড়াছুড়ি তো দূর, একে অপরকে নিয়ে কোনও বিরূপ মন্তব্যও করতে দেখা যায়নি
কঙ্কণা ও রণবীর, দু’জনে সম্পূর্ণ আলাদা পরিবেশে বড় হয়েছেন। বিখ্যাত মায়ের মেয়ে হিসেবে ছোট থেকেই স্টুডিয়ো পাড়ায় আনাগোনা ছিল কঙ্কণার। সেই ছোট্ট বয়সেই অভিনয়ে পদার্পণ তাঁর। তার পর নায়িকা হিসেবেও একের পর এক মাইলস্টোন ছুঁয়ে দেখেছেন।
সেই তুলনায় অভিনেতা হিসেবে শূন্য থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নিতে হয়েছে রণবীরকে। একের পর এক ছবিতে নিজের অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করলেও, বলিউডে তিনি চরিত্রাভিনেতা হয়েই রয়ে গিয়েছেন। এ হেন দুই মানুষের প্রথম সাক্ষাৎ ছবির দৌলতেই।
রজত কপূরের পরিচালনায় ‘মিক্সড ডাবলস’ ছবিতে প্রথম বার এক সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান কঙ্কণা ও রণবীর। চিত্রনাট্য নিয়ে আলোচনা থেকে ছবি শুটিং ফ্লোরে যাওয়ার মধ্যে যেটুকু সময় ছিল, তাতেই একে অপরের কাছাকাছি এসে পড়েন তাঁরা। তাঁদের সম্পর্ককে ‘লভ অ্যাট ফার্স্ট সেট’ বলেও ব্যাখ্যা করেন কেউ কেউ।
‘মিক্সড ডাবলস’-এর সেটেই পরস্পরের প্রেমে পড়েন কঙ্কণা ও রণবীর। তার পর লিভ ইনও শুরু করে দেন তাঁরা। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও সংবাদমাধ্যমকে সম্পর্কের কথা জানতে দেননি তাঁরা। জনসমক্ষে পেশাদার অভিনেতার মতোই আচরণ ছিল তাঁদের।
সময় যত এগোতে থাকে ততই বিভিন্ন পার্টি এবং অনুষ্ঠানে একসঙ্গে দেখা দিতে শুরু করেন কঙ্কণা ও রণবীর। কিন্তু সেইসময় রণবীর শোরের সঙ্গে পূজা ভট্টের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন ছিল। তাই কঙ্কণা ও রণবীরের মধ্যে যে কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে, সে কথা বুঝে উঠতে সময় লেগেছিল সকলের।
পরবর্তী কালে কঙ্কণা ও রণবীর নিজে থেকেই সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন এবং তাঁরা যে গোপনে বাগদানও সেরে নিয়েছেন সে কথা সংবাদমাধ্যমকে জানান। তবে ব্যক্তিগত জীবনটাকে যে তাঁরা লোকচক্ষুর আড়ালেই রাখতে চান, সে কথাও স্পষ্ট জানিয়ে দেন।
প্রায় পাঁচ বছরের সম্পর্কে ২০১০ সালে পরিণতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কঙ্কণা ও রণবীর। সে বছর ৩ সেপ্টেম্বর পাপারাৎজিদের নজরের বাইরে গোরেগাঁওয়ের বাড়িতে ছোট আনুষ্ঠান করে বিয়ে সারেন তাঁরা। পরিবার ও কাছের বন্ধুবান্ধব কেউই সে খবর জানতেন না। শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠান মিটে যাওয়ার পর টুইটার মারফত অনুরাগীদের বিয়ের খবর দেন তাঁরা।
২০১১- র ১৫ মার্চ দক্ষিণ মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে কঙ্কণা ও রণবীরের ছেলে হারুণের জন্ম হয়। স্টার কিডদের নিয়ে মায়ানগরীতে যে মাতামাতি, তা থেকে বরাবরই দূরে হারুণ। ছেলের শৈশবে যাতে কোনও প্রভাব না পড়ে, তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কঙ্কণা ও রণবীর। তবে মাঝে মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেলের ছবি পোস্ট করেন তাঁরা।
বলিউডে সম্পর্কের ভাঙাগড়া লেগেই থাকে। সেখানে কঙ্কণা ও রণবীর ব্যাতিক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু ভিতরে ভিতরে যে তাঁদের সম্পর্কেও ফাটল ধরেছে, তা প্রথম সামনে আসে ২০১৩ সালে। দু’জনে আলাদা থাকতে শুরু করেছেন বলে সেইসময় খবর আসতে শুরু করে।
কিন্তু কঙ্কণা এবং রণবীর, দু’জনের কেউই এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। সেইসময় একটি সাক্ষাৎকারে নিজেকে ‘সিঙ্গল মাদার’ বলে উল্লেখ করেন কঙ্কণা। তা নিয়ে জল্পনা শুরু হলেও, তার পরেও একে অপরের সঙ্গে কাজ করতে দেখা যায় তাঁদের।
২০১৫ সালে প্রথম আলাদা থাকার কথা স্বীকার করেন রণবীর। দাম্পত্য সমস্যার জন্য নিজেকেই দায়ী করেন তিনি। তবে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত যে দু’জনে মিলেই নিয়েছেন, সে কথাও জানিয়ে দেন। তবে এর পরেও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যান কঙ্কণা ও রণবীর। নিয়মিত কাউন্সেলিং করান তাঁরা।
কিন্তু ভাঙা সম্পর্ক আর জোড়া লাগেনি। এ বছরের শুরুতে আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেন কঙ্কণা ও রণবীর। গত ১৩ অগস্ট আইনত বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁদের। তবে বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও, যৌথ ভাবে ছেলে হারুণকে দেখাশোনা করেন কঙ্কণা এবং রণবীর। তাঁরা এখনও একে অপরের বন্ধু।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে রণবীর জানান, তাঁর চেয়ে কঙ্কণা যেহেতু বেশি ব্যস্ত, তাই ছেলের সঙ্গে তিনিই বেশি সময় কাটান। এমনকি, ছেলের জন্য অনেক রান্নাও শিখে ফেলেছেন বলে জানান রণবীর। চিরকাল মহিলারাই সংসারের সমস্ত দায়িত্ব সামলে এসেছেন, পুরুষদেরও এ বার দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার সময় এসেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।