কোয়েল মল্লিক।
প্রশ্ন: ‘ফ্লাইওভার’-এ আপনি সাংবাদিকের ভূমিকায়। এই পেশায় এখনও সততা আছে বলে মনে করেন?
কোয়েল: সাংবাদিকরা সততার সঙ্গে কাজ করেন। কলমটাই আসল। তাঁদের লেখার মাধ্যমে বিভিন্ন ঘটনা মানুষের সামনে আসে। সে ক্ষেত্রে দায়িত্ববোধ থেকেই যায়।
প্রশ্ন: ছবিতে আপনার চরিত্রেও কি এ রকমই সততা দেখা যাবে?
কোয়েল: আমার চরিত্রের নাম বিদিশা। সাংবাদিক হয়ে বিভিন্ন ধরনের খবর করে সে। কাজের জায়গায় অনেক বাধা বিপত্তি রয়েছে, কিন্তু কোনও খবর করার কথা ভাবলে সে সেটা করেই ছাড়ে। সততার পথে চলতে গিয়েই প্রচুর বিপদের মুখেও পড়ে বিদিশা। আমার মনে হয়, প্রত্যেক মহিলাকে আমার এই চরিত্র উদ্বুদ্ধ করবে।
প্রশ্ন: সাংবাদিকের চরিত্র করতে গিয়ে কোন কোন কথা মাথায় রেখেছিলেন?
কোয়েল: কাজ করতে গিয়ে প্রচুর সাংবাদিকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। কারও কারও সঙ্গে বন্ধুত্বও হয়েছে। এই ধরনের চরিত্র করার সময় তাঁদের কিছুটা প্রভাব তো থাকেই। তার সঙ্গেই পরিচালক চরিত্রটাকে কী ভাবে দেখতে চাইছেন, সে কথাও মাথায় রাখি।
প্রশ্ন: বিদিশাকে যদি নির্বাচন কভার করতে বলা হয়, তা হলে সে কী করবে?
কোয়েল: বিদিশার চরিত্রটা খুবই নির্ভীক। তাই নির্বাচনের সব দিকগুলোই তুলে ধরবে সে। কোনও খুঁত থাকলে, সেগুলোও বাদ দেবে না। কোনও রকম লুকোচুরি ও করবে না। নিরপেক্ষ থেকেই যা লেখার লিখবে। আমি মনে করি, একজন সাংবাদিকের ব্যক্তিগত মতাদর্শ থাকতেই পারে, কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত মতকে সে কখনওই অন্যের উপর চাপিয়ে দেবে না। নিজের পেশার সুযোগও নেবে না।
প্রশ্ন: সাংবাদিক হয়ে যাঁদের সঙ্গে কাজ করলেন, তাঁদের কেমন লাগল?
কোয়েল: প্রথমেই অভিমন্যুর কথা বলব। ও ভীষণই শান্ত প্রকৃতির একজন মানুষ। ও সেটে খুব সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে। যতই টেনশন হোক, সব কিছু ঠান্ডা মাথায় সামলায় অভিমন্যু। গৌরবের সঙ্গেও এটা আমার প্রথম কাজ। খুব বুদ্ধিমান ছেলে ও। ছবি নিয়ে অনেক কিছু জানে। সিনেমা, ওয়েব সিরিজ নিয়ে অনেক আলোচনা চলত ওর সঙ্গে।
স্বামী নিসপাল সিংহ এবং ছেলে কবীরের সঙ্গে কোয়েল।
প্রশ্ন: শোনা যায়, প্রযোজকের সঙ্গে সংসার করতে করতে আপনিও নাকি প্রযোজনার বিষয়ে অনেক কিছু শিখে গিয়েছেন…
কোয়েল: কথাটা ঠিক। সত্যিই এ ক্ষেত্রে রানের খুব পজিটিভ একটা প্রভাব আছে আমার উপর। আগে আমি শুধুই একজন অভিনেত্রীর মতো করে ভাবতাম, কিন্তু এখন রানেদের নানা ধরনের আলোচনা শুনে আরও অনেক কিছু জানতে পারি। অভিনয়ের বাইরে গিয়ে প্রোডাকশনের বিষয়টা বুঝতে পারি।
প্রশ্ন: কী রকম?
কোয়েল: ধরে নিন, একজন অভিনেতা সেটে আধ ঘণ্টা দেরি করে পৌঁছলেন। এতে হয়তো তাঁর কোনও অসুবিধা হবে না। কিন্তু প্রোডাকশনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অন্য রকম। সেখানে কিন্তু প্রত্যেক সেকেন্ডের জন্য টাকা যাচ্ছে। আর সেই ৩০ মিনিট দেরির জন্য হয়তো সেকেন্ড শিফট শুরু করতে হতে পারে। সেটা হলে কিন্তু দ্বিগুণ টাকা খরচ হয়ে যায়। আমার যদিও মনে হয়, অভিনেতারাও এখন এ বিষয়ে অনেক সচেতন। ‘মিতিন মাসি’ করার সময়, অরিন্দমদার (শীল) টিমে অনেকেই নতুন ছিল। তখন অরিন্দমদা মজা করে বলতেন, "কোয়েলই তো আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট।" আসলে আমি মনে করি ছবি তৈরি করাটা একটা টিম ওয়ার্ক। এই বিষয়ে বাবাও আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন।
প্রশ্ন: যেমন?
কোয়েল: বাবা বলেছিলেন, অভিনয় করাটা ছেলেখেলা নয় । গেলাম, সাজলাম, ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালাম, ব্যাপারটা কিন্তু সে রকম নয়। ছবি করা মানে যে বিশাল একটা দায়িত্ব, সেটা আমার প্রথম ছবির সময়ই বাবা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন: নিসপাল ‘ফ্লাইওভার’ দেখেছেন?
কোয়েল: হ্যাঁ, ও ছবিটা দেখেছে।
প্রশ্ন: কী বললেন তিনি?
কোয়েল: রানের ছবিটা বেশ ভালই লেগেছে। বেশ খুশিতেই আছে । কিন্তু আর যা যা বলেছে, সেগুলো বলতে পারব না। (মৃদু হাসি)
প্রশ্ন: কবীর এখনও টেলিভিশনের পর্দায় মা-কে দেখেছে?
কোয়েল: না। ও এখনও দেখেনি। আসলে মোবাইল আর টেলিভিশন থেকে ওকে দূরে রাখি। ঠিক বয়স হলে নিশ্চয়ই দেখবে।
প্রশ্ন: ‘ফ্লাইওভার’-এ মনে ভয় নিয়ে একটা গান আছে। কোয়েল মল্লিকের মনে কী কোনও ভয় আছে?
কোয়েল: (কিছুটা ভেবে) ভয় বললেই দুটো লাইন আমার মনে আসে। 'আমি ভয় করব না ভয় করব না। দু’বেলা মরার আগে মরব না ভাই, মরব না।'