তারকা হয়ে যাওয়ার পরেও বাড়ির ঠাকুরদালানে বসে সন্ধিপুজোর পদ্মফুল ফোটানোর কাজে মিশে যাওয়াই ছিল তাঁর কাছে আনন্দের। স্টারডমের তুলনায় বনেদিয়ানা আর আভিজাত্য তাঁর তুরুপের তাস। চেনা স্রোতে গা না ভাসিয়ে নিজস্বতা ধরে রাখাই পছন্দ কোয়েল মল্লিকের।
অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক ও তাঁর স্ত্রী দীপার একমাত্র মেয়ের জন্ম ১৯৮২ সালের ২৮ এপ্রিল। মডার্ন হাই স্কুল থেকে পাশ করার পরে কোয়েল সাইকোলজিতে অনার্স নিয়ে স্নাতক হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পড়তেন গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস কলেজে।
২০০৩ সালে টালিগঞ্জে আত্মপ্রকাশ কোয়েলের। প্রথম ছবি ‘নাটের গুরু’-তে কোয়েলের বিপরীতে নায়ক ছিলেন জিৎ। ‘বিখ্যাত বাবার মেয়ে’ এই পরিচয় থেকে বেরিয়ে এসে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা করে নেন কোয়েল।
তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘শুধু তুমি’, ‘যুদ্ধ’, ‘মানিক’, ‘শুভদৃষ্টি’, ‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’, ‘হিরো’, ‘এমএলএ ফাটাকেষ্ট’, ‘মন মানে না’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘পাগলু’, ‘জ্যাকপট’, ‘হিটলিস্ট’, ‘দুই পৃথিবী’, ‘হেমলক সোসাইটি’, ‘অরুন্ধতী’, ‘ককপিট’, ‘ঘরে বাইরে’ এবং ‘মিতিন মাসি’।
অভিজাত অথচ ঘরোয়া লুক-ই বরাবর কোয়েলের পরিচয়। তিনি বাংলার পাশাপাশি অভিনয় করেছেন ওড়িয়া ছবিতেও। দেখা গিয়েছে বিভিন্ন রিয়েলিটি শো-এও।
দীর্ঘ কয়েক দশক টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রি শাসন করেছেন নায়িকা কোয়েল। জিৎ-কোয়েল ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় জুটি। পর্দার বাইরেও তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শোনা গিয়েছে। কিন্তু জিৎ বা কোয়েল, দু’জনের কেউ এই সম্পর্ক স্বীকার করেননি।
২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রযোজক নিসপাল সিংহ রানেকে বিয়ে করেন কোয়েল। তাঁদের প্রথম দেখা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। রঞ্জিত মল্লিকের সঙ্গে ছবির বিষয়ে কথা বলতে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন নিসপাল। সেখানেই প্রথম দেখা কোয়েলের সঙ্গে। কিন্তু তখনও নিসপাল-কোয়েলের মধ্যে কোনও সম্পর্ক দানা বাঁধেনি।
২০০৫ সালে কোয়েলকে ছবিতে অভিনয়ের অফার দেন নিসপাল। কাকতালীয় ভাবে ছবির নাম হওয়ার কথা ছিল ‘আই লাভ ইউ’। কিন্তু সে ছবি কোনওদিন আদপে তৈরি-ই হয়নি। কিন্তু শেষ অবধি ছবি না হলেও নিসপাল আর কোয়েলের মধ্যে সুন্দর বন্ধুত্ব তৈরি হয়।
অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব থেকেই প্রেমে পড়েন দু’জনে। একসঙ্গে বন্ধুত্বের পথ হাঁটতে হাঁটতেই একদিন নিয়ে নেন বিয়ের সিদ্ধান্ত। তার আগে প্রেমপর্ব ছিল একান্ত ব্যক্তিগত।
বিয়ের আসরেও সেই নিভৃত ছোঁয়া বজায় রেখেছিলেন কোয়েল আর নিসপাল। জাঁকজমক থেকে দূরে বিয়ে হয়েছিল কাছের লোকদের মাঝে, ঘরোয়া পরিবেশে।
প্রথমে শোনা গিয়েছিল, বিয়ের পরে কোয়েল আর অভিনয় করবেন না। কিন্তু নিসপাল জানিয়েছিলেন তাঁর ইচ্ছে, কোয়েল কাজ করে যান।
তবে কোয়েল বিয়ের পরে অভিনয় অনেকটাই কমিয়ে দেন। সামঞ্জস্য রক্ষা করেন সংসার আর কেরিয়ারের মধ্যে।
নিসপাল সিংহের পরিবারও কলকাতার পুরনো বাসিন্দা। তিনি এবং কোয়েল দু’জনেই কলকাতাকে খুব ভালবাসেন।
২০১৯-এ সুচিত্রা ভট্টাচার্যর গোয়েন্দা চরিত্র ‘মিতিন মাসি’র ভূমিকায় অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করে নেন কোয়েল।
চলতি বছর মিতিন মাসির আরও একটি ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা। এ ছাড়া মাল্টিপ্লেক্সে আসার কথা ‘বনি’, ‘রক্ত রহস্য’, ‘ফ্লাই ওভার’-এরও।
ফেব্রুয়ারি মাসে নিজের বিবাহবার্ষিকীতে সুখবর জানান কোয়েল—তিনি মা হতে চলেছেন। পার্ক স্ট্রিটের এক বেসরকারি হাসপাতালে মঙ্গলবার ভোরে ভূমিষ্ঠ হল তাঁর পুত্রসন্তান। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সদ্যোজাত এবং মা, দু’জনেই সুস্থ আছেন।
কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন ধরনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কোয়েল। এ বার তিনি পর্দার বাইরে বাস্তব জীবনেও পা রাখলেন নতুন ভূমিকায়। (ছবি: সোশ্য়াল ভূমিকা)