ভারতে যত জন পপ সিঙ্গারের কথা মনে আসে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। নয়ের দশকে যেখানে ফিল্মে শিল্পা শেট্টি এবং সুনীল শেট্টির রমরমা ছিল, সে সময় গানে ঝড় তুলেছিলেন আর এক শেট্টি। তিনি শ্বেতা শেট্টি।
ইংরেজিকে মুছে ফেলে হিন্দির হাত ধরেছিলেন তিনি। অথচ একটি ঘটনায় পুরোপুরি বদলে যায় তাঁর জীবন। পপ সিঙ্গার থেকে গৃহবধু এবং তারপর একজন যোগ প্রশিক্ষক হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।
শ্বেতার জন্ম মুম্বইয়ে এক দক্ষিণ ভারতীয় পরিবারে। মা ছিলেন ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতে প্রশিক্ষিত। ছোট থেকে তাই সুরের সঙ্গেই বড় হয়ে উঠেছেন তিনি।
মায়ের সঙ্গে ক্লাসিক্যাল গানে প্রশিক্ষণ নিলেও তাঁর ঝোঁক ছিল ইংরেজি গানে। কলেজে এক গানের প্রতিযোগিতায় তাঁর গান নজর কাড়ে কোরিওগ্রাফার শামক দাভরের। তাঁর এক অনুষ্ঠানে শ্বেতাকে পারফর্মের সুযোগ দেন তিনি।
দ্বিধায় পড়ে যান শ্বেতা। এক দিকে কলেজের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা, অন্য দিকে কেরিয়ার শুরু করার সুবর্ণ সুযোগ। এই সুযোগ হাতছাড়া করাটা ঠিক হবে না বুঝেছিলেন। তাই কলেজে ৩ বছরের পরিশ্রমকে জলাঞ্জলি দিয়ে শামকের প্রস্তাব গ্রহণ করে নেন।
ওই প্রজেক্টে তাঁকে গোয়ায় লাইভ পারফর্ম করতে হয়েছিল। ইংরেজি গানেই পারফর্ম করেছিলেন তিনি। তাঁর কণ্ঠস্বর, তাঁর স্টাইল পছন্দ হয়ে যায় বলি ইন্ডাস্ট্রির। তাঁকে হিন্দি অ্যালবামের অফার দেওয়া হয়। ইংরেজিতে গান গাইতে অভ্যস্ত শ্বেতা প্রথমে হিন্দি গান গাওয়া নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।
তাঁর প্রথম হিন্দি অ্যালবাম ‘জনি জোকার’ সাফল্য পাওয়ায় হিন্দিতেও সমান আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। তারপর ‘রোজা’, ‘রঙ্গিলা’-র মতো ফিল্মে তাঁর গান ভীষণ পছন্দ করেন দর্শকেরা। পপ কালচারের পাশাপাশি বলিউড গানেও সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করতে শুরু করেন তিনি।
১৯৯৭ সালে তিনি কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গিয়েছিলেন। সেখানে ক্রিশ্চিয়ান ব্যান্ডিট নামে এক জার্মান ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তাঁকে বিয়ে করে জার্মানিতে চলে যান শ্বেতা।
বলিউড থেকে বিদায় নিয়েছিলেন, আর জার্মানিতে গান নিয়ে খুব একটা জায়গা করে উঠতে পারেননি। বিয়ের পর থেকেই তাই পুরোদস্তুর গৃহবধূ হয়ে যান।
এর মধ্যেই তাঁর জীবনে আসে এক দুর্ঘটনা। বড়সড় গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে তাঁর। হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল অনেকদিন। এত কিছু একসঙ্গে তাঁর জীবনে চলছিল যে ক্রমে অবসাদে ডুবে যেতে থাকেন তিনি।
স্বামীর সঙ্গে অশান্তিও লেগে থাকত নানা বিষয়ে। বিয়ের ৫ বছরের মধ্যেই তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তারপর এক জার্মান বন্ধুর পরামর্শে তিনি সেখানে যোগ প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন।
পারিবারিক সূত্রে ছোটবেলা থেকে গানের পাশাপাশি যোগেও প্রশিক্ষিত ছিলেন তিনি। সেটাকেই উপার্জনের রাস্তা হিসাবে বেছে নেন। পাশাপাশি বলিউডেও কামব্যাকের চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এটা জেনে অবাক হয়েছিলেন যে বলিউডের রাস্তা তাঁর জন্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বলিউডে তাঁর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ‘বলি মাফিয়া’রা।
বলিউডে মাফিয়া-রাজের কথা অজানা নয়। নয়ের দশকে দাঁড়িয়ে সেই মাফিয়া-রাজের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন তিনি। তাই শ্বেতা যাতে এখানে কোনও কাজ না পান তার হুমকিও দিয়ে রেখেছিল তারা।
কে বা কারা তাঁকে কাজ করতে দিচ্ছিলেন না তা নিয়ে শ্বেতা কখনও মুখ খোলেননি। কখনও প্রকাশ্যে তাঁদের নামও বলেননি। কিন্তু সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর পর তিনি তাঁর উপর হওয়া অত্যাচারের কথা প্রকাশ করেছিলেন। যদিও তখনও কারও নাম নেননি।
এক জন মহিলা হয়েও বলি ইন্ডাস্ট্রির এই মাফিয়া রাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সাজা আজও ভুগছেন তিনি। পপ সিঙ্গার থেকে একজন যোগ প্রশিক্ষক হয়েই জীবন কাটাচ্ছেন।