‘লভ আজ কাল’ দেখেছেন? তা হলে নিশ্চয়ই আপনার হরলিন কউরকে মনে আছে। কলকাতার রাস্তায় যাঁর বাড়ির উল্টো দিকের চায়ের দোকানে বসে তাঁকে এক ঝলক দেখার জন্য অপেক্ষা করতেন বীর সিংহ পানেসর নামের যুবক। সেই হরলীন! ইমতিয়াজ আলির রোম্যান্টিক-ড্রামা ফিল্মে পঞ্জাবি মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করলেও তিনি কিন্তু ভারতীয় নন। তবে কে তিনি? এখন কী করছেন এই সুন্দরী?
‘লভ আজ কাল’-এ ঋষি কপূরের কম বয়সের ভূমিকায় ছিলেন সইফ আলি খান। আর হরলিন হয়েছিলেন জিজেলি মন্তেইরো। আদতে ব্রাজিলীয় হলেও পঞ্জাবি মেয়ের ভূমিকায় একেবারে মানানসই চেহারা।
কে এই জিজেলি মন্তেইরো? বলিউডি পর্দায় যে সব বিদেশি মুখ দেখিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে জিজেলির নাম রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিলের এসপিরিতো সান্তো স্টেটে জন্ম তাঁর।
তবে ফিল্ম নয়, বরং মডেলিং দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেন জিজেলি। তা-ও মাত্র ১৬ বছর বয়সে। সেই কিশোরী বয়সেই মডেল হিসাবে ঘুরেছেন দুনিয়ার নানা প্রান্তে। ইতালি, জার্মানি, গ্রিস, হংকং, সিঙ্গাপুর, তাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স— মডেলিং করতে ওই বয়সেই গিয়েছিলেন এতগুলো দেশে।
মডেলিং করতেই জিজেলি এ দেশে এসেছিলেন ২০০৮ সালে। বলিউডি ফিল্মে অভিনয়ের সুযোগ পাবেন, তেমনটা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেননি। তা-ও আবার ইমতিয়াজ আলির মতো নামজাদা পরিচালকের ফিল্মে। এবং অবশ্যই সইফ আলি, দীপিকা পাড়ুকোন ও ঋষি কপূরদের মতো স্টারেদের পাশাপাশি অভিনয়ের সুযোগ!
কী ভাবে ‘লভ আজ কাল’-এ সুযোগ পেলেন জিজেলি? ‘বিইং সাইরাস’, ‘রাবতা’, ‘ককটেল’, ‘ফাইন্ডিং ফ্যানি’-র মতো ফিল্মের পরিচালক হোমি আদাজানিয়ার স্ত্রী অনিতা শ্রফ আদাজানিয়ার সুপারিশে সে সুযোগ হয় তাঁর। ইমতিয়াজ সে সময় তাঁর ফিল্মের জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন। পেশায় ডিজাইনার অনিতাই ইমতিয়াজের সঙ্গে জিজেলির দেখা করিয়ে দেন।
জিজেলির অডিশন দেখে তাঁকে প্রথমে দীপিকা পাড়ুকোনের রোলের জন্য বাছাই করেন ইমতিয়াজ। তবে স্ত্রীর অনুরোধে শেষমেশ হরলীনের রোলে তাঁকে নেন। ‘লভ আজ কাল’ রিলিজের সময় এ কথা জানিয়েছিলেন ইমতিয়াজ। তিনি আরও বলেছিলেন, হরলিনের রোলে সারা দেশ থেকেই অভিনেত্রীদের অডিশন নেন তিনি। শেষে ২১ বছরের জিজেলির কাছেই ফিল্মের অফারটা যায়।
২০০৯-এ ‘লভ আজ কাল’-এ অভিনয়ের পর এ দেশে বেশ কয়েকটি নামীদামি ব্র্যান্ডের হয়ে মডেলিং করেন জিজেলি। বিভিন্ন ম্যাগাজিনের কভারেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। হরলিনের রোলটা ছোট হলেও সে সময় জিজেলির অভিনয় নাম কুড়িয়েছিল। সেরা নতুন মুখ হিসাবে দু’টো অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীতও হয়েছিলেন।
‘লভ আজ কাল’-এর পর জিজেলির কাছে সুযোগ আসে শাহরুখ খানের প্রযোজনা সংস্থার ফিল্মে কাজ করার। রোশন আব্বাসের সেই ফিল্মের নাম ‘অলওয়েজ কভি কভি’। আলি ফয়জলের সঙ্গে এক ঝাঁক নতুন মুখ। ছিলেন জিজেলিও। তবে ২০১১-র সেই ফিল্ম তেমন সাড়া ফেলেনি।
ফিল্মের পাশাপাশি এ দেশেও মডেলিং করছিলেন জিজেলি। বেশ কয়েকটা নামী ব্র্যান্ডের অ্যাম্বাসাডর হয়েছিলেন। সঙ্গে রীতু কুমার, রোহিত বাল বা রানা গিলের মতো নামজাদা ডিজাইনারের জন্য র্যাম্প-এ হেঁটেছেন তিনি।
ফিল্ম ও মডেলিং ছেড়ে ২০১১-তে আচমকা বলিউড ছেড়ে চলে যান জিজেলি। ২০১৪-তে মডেলিং জগৎ থেকেও বিদায় নেন। তিনি বলেছিলেন, মডেলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ম করলেও ভবিষ্যতে অভিনয়কেই পেশা হিসাবে বাছবেন, এমন ইচ্ছে ছিল না। বরং দেশে ফিরে স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনা করবেন, তেমনটাই ভেবেছিলেন।
দেশে ফিরে পড়াশোনাতেই ডুবে যান জিজেলি। সে সময় তিনটে ফিল্মের অফার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনাতেই তাঁর ঝোঁক ছিল বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এসপিরিতো সান্তো স্টেটের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে আর্কিটেক্ট ও আরবান প্ল্যানার হিসাবে কাজ করছেন জিজেলি।