১৯৬৪ সালে পরিচালক সত্যেন বসু ‘দোস্তি’ নামে একটি ছবি করেছিলেন। সাদা-কালো এই হিন্দি ছবি সে সময় প্রশংসা কুড়িয়েছিল দর্শকদের।
অন্ধ এবং বিশেষ ভাবে সক্ষম দুই বন্ধুর কাহিনি নিয়েই গড়ে উঠেছিল ছবির চিত্রনাট্য। অন্তত ছ’টি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল এই ছবি। যার মালয়লম ভাষাতে রিমেকও হয়েছিল ১৯৭৭ সালে।
সে সময়েও এই ছবি ২ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল ভারতে। আর সারা বিশ্বে ৪ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। টাকার পরিমাণ দেখে সাফল্যের অনুমান সহজ।
ছবিতে দুই বন্ধুর ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল সুশীল কুমার এবং সুধীর কুমারকে। কিন্তু বিস্মিত হতে হয় এটা ভেবে যে, এত সফল ছবির দুই মুখ্য চরিত্র ছবি মুক্তির পর পরই কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন।
হঠাৎ করেই ইন্ডাস্ট্রি থেকে হারিয়ে যাওয়ার কারণে তাঁদের নিয়ে নানা সময়ে নানা কথা শোনা যেতে শুরু করেছিল।
কখনও শোনা গিযেছিল, তাঁরা নাকি মুম্বইয়ের গ্যাংস্টারদের হাতে খুন হয়ে গিয়েছিলেন। আবার কখনও শোনা গিয়েছিল, ভয়ঙ্কর গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন দু’জনে।
সে সময়ের সুপারস্টার ছিলেন দিলীপ কুমার। তাঁর কড়া প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিলেন এই দু’জনে। অনেকে তাই এমনও মনে করেছিলেন, তাঁদের দু’জনকেই খুন করা হয়েছিল এবং সেই খুনের পিছনে নাকি সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তী অভিনেতা দিলীপ কুমারের হাত ছিল!
বাইরে যখন এ সমস্ত ভুয়ো খবরের ছড়াছড়ি সুধীর এবং সুশীল কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি থেকে বহু দূরে নিজেদের জীবন অন্য ভাবে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
এর অনেক পরে জানা যায় সুধীর এবং সুশীলকে নিয়ে ছড়িয়ে পড়া সমস্ত খবরই আসলে ভুয়ো ছিল। তাঁরা দু’জনে অত্যন্ত সুস্থ ভাবেই জীবন কাটাচ্ছিলেন তখন।
১৯৯৩ সালে সুধীর কুমারের মৃত্যুর খবর জানা যায়। সুশীল জীবিত কি না, তা এখনও ধোঁয়াশাতেই। শেষবারের মতো ২০০৩ সালে সুশীলের খবর পেয়েছিলেন অনুগামীরা। কী হয়েছিল তাঁদের?
‘দোস্তি’ ছবির সাফল্যের পর সুধীর কয়েকটি ছবি করেছিলেন কিন্তু একটি ভুল সিদ্ধান্তের জন্য সুশীলের কেরিয়ার পুরোপুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তিনি আর কোনও ছবিতে সুযোগই পাননি।
লালবাগের একটি মরাঠি পরিবারে জন্ম হয়েছিল সুধীরের। ‘দোস্তি’ কিন্তু তাঁর প্রথম ছবি ছিল না। ওই বছরই ‘দোস্তি’র আগে তাঁর আরও একটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। সেই ছবিটি তেমন সাফল্য পায়নি।
‘দোস্তি’র পর ১৯৬৬-র ছবি ‘লাডলা’, ১৯৬৮-র ছবি ‘ঘর ছি রানি’ এবং ১৯৬৯-এর ছবি ‘জিনে কি রাহ’ এবং বেশ কিছু মরাঠি ছবিতে দেখা গিয়েছিল সুধীরকে। কিন্তু ছয়ের দশক শেষ হতে না হতেই সুধীরের কেরিয়ারও শেষ হয়ে যায় পুরোপুরি। ক্রমে ইন্ডাস্ট্রি থেকে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যান তিনি।
অন্য দিকে, গুজরাতি ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম নেওয়া সুশীল ‘দোস্তি’ ছবির পর রাজশ্রী প্রোডাকশনের সঙ্গে চুক্তি ছিন্ন করে দেন। রাজশ্রী প্রোডাকশনেরই ছবি ছিল ‘দোস্তি’। সুশীল দক্ষিণী ছবির প্রস্তাব পেয়ে চলে যান। কিন্তু যে প্রত্যাশা নিয়ে তিনি দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে গিয়েছিলেন, তা পূর্ণ হয়নি। এ দিকে বলিউডেও তাঁর জন্য দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
দীর্ঘ সময় অনুগামীদের কাছে তাঁদের জীবন রহস্যাবৃতই থেকে গিয়েছিল। খবরের শিরোনামে নানা সময়ে নানা ভুয়ো খবর প্রকাশিত হলেও কখনও তাঁরা বা তাঁদের পরিবারের কেউ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্যও করতেন না।
সুধীরের সত্য সামনে আসে ১৯৯৩ সালে। তখন তাঁর পরিবারের এক সদস্য সুধীরের মৃত্যুর খবর সামনে আনেন। ১৯৯৩ সালের ১২ জানুয়ারি মৃত্যু হয়েছিল সুধীরের।
জানা যায়, এত বছর ইন্ডাস্ট্রি থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে পরিবারের সঙ্গেই সুস্থ জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি। জীবনের শেষ দিকে ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং মারা গিয়েছিলেন।
অন্য দিকে, সুশীলের খবর মিলেছিল ১৯৭১ সালে। তিনি তখন এয়ার ইন্ডিয়ার কেবিন ক্রু পদে কাজে যোগ দিয়েছিলেন।
জানা যায়, বহু চেষ্টার পর সুযোগ না পেয়ে শেষে মুম্বইয়ে থেকে নিজের পড়াশোনাতেই ডুবে গিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার কেবিন ক্র হয়ে কাজে যোগ দেন। ২০০৩ সাল পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়াতেই কাজ করেছেন তিনি। তারপর অবসর নিয়ে নেন।
১৯৭৩ সালে ‘হিরা পান্না’ নামে দেবানন্দের একটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। ওই ছবিতে বিমানের একটি দৃশ্যে সুশীলকে দেখাও গিয়েছিল। ২০০৩ সালে অবসরের পর থেকে অবশ্য আর খোঁজ নেই সুশীলের।