নিজের থেকে ১১ বছরের ছোট মেয়েকে প্রেম প্রস্তাব! প্রচণ্ড কুণ্ঠা ছিল মনে। প্রথম দেখা থেকেই পছন্দ হয়ে গিয়েছিল, মনে মনে ভালও বেসে ফেলেছিলেন। কিন্তু বলার সাহস আর করে উঠতে পারছিলেন না।
মনে মনে যিনি প্রেম প্রস্তাব গোপনে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন তিনি সচিন পিলগাঁওকর। অভিনেতা এবং পরিচালক। আর যাঁকে দেখে তাঁর মন প্রেমের সমুদ্রে ডুব দিয়েছিল, তিনি সুপ্রিয়া।
খুব বেশি দিন মনের কথা গোপন রাখতে পারেননি তিনি। উল্টো দিক থেকে যে এতটা অকপট স্বীকারোক্তি আসতে চলেছে তা না জেনেই মনের কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন। বর্তমানে ৩৪ বছর একসঙ্গে রয়েছেন তাঁরা। ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সুখী এবং লাভিং দম্পতি।
তবে তাঁদের দেখে বিষয়টা যতটা সহজ মনে হয়, তা কিন্তু আসলে ছিল না। সচিনের সঙ্গে সুপ্রিয়ার প্রথম পরিচয় একটা মরাঠি ফিল্মের সেটে।
সচিন তাঁর দ্বিতীয় মরাঠি ফিল্মের পরিচালনা করছিলেন তখন। ১৯৮৪ সালের সেই ফিল্মেই ডেবিউ করেছিলেন সুপ্রিয়া। মাত্র ১৬ বছর বয়সে। ফিল্মের নাম ছিল ‘নাভরি মিলে নাভরিয়ালা’। এই ছবিতে ১১ বছরের ছোট সুপ্রিয়ার বিপরীতে সচিনই অভিনয় করেছিলেন।
অত্যন্ত দায়িত্বশীল সুপ্রিয়া দ্রুত সব কিছু শিখে নিচ্ছিলেন। তাঁর ভীষণ সাবলীল অভিনয় দেখে প্রথম দিন থেকেই সুপ্রিয়াকে ভাল লেগে গিয়েছিল সচিনের।
তারপর দিন যত গড়িয়েছে, একসঙ্গে দু’জনে যত সময় কাটিয়েছেন, ততই আরও কাছাকাছি এসেছেন একে অপরের। দু’জনেই মনে মনে একে অপরকে পছন্দ করতেন। কিন্তু দু’জনের মনেই কুণ্ঠা ছিল।
পরিচালক যদি নিজের চেয়ে বয়সে এত ছোট সহ অভিনেত্রীকে প্রেম প্রস্তাব দেন, তা হলে ইন্ডাস্ট্রিতে গসিপ শুরু হবে, ভেবেছিলেন সচিন। আর সুপ্রিয়ার কুণ্ঠা ছিল, ইন্ডাস্ট্রিতে পা দেওয়া মাত্রই প্রতিষ্ঠিত পরিচালককে প্রেম নিবেদন করাটা কি ঠিক হবে? তা ছাড়া সুপ্রিয়া প্রথমে ভেবেছিলেন, সচিন বিবাহিত।
ফিল্মের শেষ শুটিংযের দিন সেটে সাহস করে কথাটা বলেই ফেললেন সচিন। যা শুনে ভীষণ বিস্মিত হয়েছিলেন সুপ্রিয়া। তাঁর উত্তর ছিল, ‘মালা ভাতলা তুমহি লগনা কেলা আছে’ যার অর্থ ‘আমি ভেবেছিলাম আপনি বিবাহিত’। সচিন প্রথমে ভেবেছিলেন সুপ্রিয়া মজা করছেন। পরে বুঝতে পারেন তিনিও সিরিয়াস।
দু’জনের প্রেমের সূত্রপাত সেই থেকেই। কিন্তু এটা জানার পর বাড়িতে ঠিক কী প্রতিক্রিয়া হবে তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না সুপ্রিয়া। একে তো তাঁর বয়স তখন ১৬ বছর, আর সচিনের ২৭। তাঁর উপর সচিন তখন ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ নাম করেছেন।
বাড়িতে জানানোর সাহস করতে পারেননি সুপ্রিয়া। এ দিকে স্কুল ফাঁকি দিয়ে সচিনের সঙ্গে জোর প্রেম চলছে তাঁর। বয়সের পার্থক্য কখনও দু’জনের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কিন্তু একদিন স্কুল থেকে সুপ্রিয়ার বাড়িতে চিঠি পৌঁছয়। তখন স্কুল ইউনিফর্ম পরে বেরলেও প্রায়ই স্কুলে যেতেন না। স্কুলের থেকে সেই চিঠি পেয়ে ভীষণ ভেঙে পড়েছিলেন তাঁর বাবা-মা।
কারণটা জিজ্ঞাসা করলে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে সুপ্রিয়া বাবা-মাকে সবটা বলে ফেলেন। বাবা-মা প্রথমে তাঁদের এই সম্পর্ক মেনে নেননি যদিও। কিন্তু পরে সচিনের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের খুব পছন্দ হয়ে গিয়েছিল। ১৭ বছরের সুপ্রিয়ার সঙ্গে সচিনের বিয়ে হয় ১৯৮৫ সালে। দুই বাড়ির সম্মতিতেই।
বিয়ের পরে দু’জনের মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়া হত, অনেকেই সচিনকে বলেছিলেন যে এত বয়সের পার্থক্যে বিয়ে করাটা ঠিক হয়নি, এ বিয়ে বেশি দিন টিকবে না। কিন্তু সুপ্রিয়া জানিয়েছিলেন, এই কথা কাটাকাটির ফলেই একে অপরকে তাঁরা আরও বেশি করে চিনেছেন। একে অপরের পছন্দ-অপছন্দ বুঝেছেন, একে-অপরকে সম্মান দিতে শিখেছেন।
জীবনের ৩৪টা বছর একসঙ্গে কাটিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। প্রেমের উপহার? তাঁদের একমাত্র মেয়ে ৩০ বছরের শ্রিয়া।