ঠিক একটা খোলা বইয়ের মতো জীবন কঙ্গনার। কঙ্গনার ব্যক্তিগত জীবনে কী ঘটছে, তা কখনও ধামাচাপা থাকে না। প্রেম-বিতর্ক সব কিছু সামলেই কঙ্গনা আজ বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তাঁর জীবনে বারবারই প্রেম এসেছে আর গিয়েছে।
তা নিয়ে নানা বিতর্কও উঠে এসেছে। তবে অনেকেই জানেন না, হৃতিক এবং আদিত্য পাঞ্চোলী ছাড়াও শেখর সুমনের ছেলে অধ্যয়ন সুমনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল কঙ্গনার। এবং সেই সম্পর্ক নিয়ে বহু বিতর্কও তৈরি হয়েছিল। গালিগালাজ-মারধর থেকে ‘কালাজাদু’র অভিযোগ, সবই নাকি প্রেমিকের উপর প্রয়োগ করেছিলেন কঙ্গনা।
অধ্যয়ন সুমন ছিলেন তাঁর সহ-অভিনেতা। ‘রাজ-দ্য মিস্ট্রি কন্টিনিউ’-য়ে একসঙ্গে কাজ করেছেন তাঁরা।
কঙ্গনার কেরিয়ারের একবারে শুরুর সময় সেটা। কঙ্গনার কোনও ফিল্ম ব্যাকগ্রাউন্ডও ছিল না। আর অধ্যয়ন সুমনের বাবা শেখর সুমন ছিলেন জনপ্রিয় মুখ। সে দিক থেকে কেরিয়ারে প্রথম থেকে কিছুটা এগিয়েই ছিলেন অধ্যয়ন।
এই ফিল্মের সেট থেকেই তাঁদের সম্পর্কের সূত্রপাত। তার পর তাঁদের মাঝে মধ্যেই একসঙ্গে দেখা যেতে শুরু করে। কিন্তু এই সম্পর্কের ভাগ্যে অন্য কিছুই লেখা ছিল। তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিক্ততা ছড়িয়ে পড়ে সম্পর্কে। আর সেই তিক্ততার বোঝা আজও বয়ে চলেছেন অধ্যয়ন।
কঙ্গনা-অধ্যয়নের সম্পর্ক শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। ‘রাজ...’ ফিল্মের গান শুট করার সময় তাঁরা একে অপরের কাছাকাছি আসে। তারপর লং ড্রাইভ এবং ডিনারে প্রায়ই একসঙ্গে যেতেন।
এ রকমই এক বার তাজ-এ ডিনারে গিয়ে প্রথম খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল অধ্যয়নের। সে দিন নিজেদের প্রাক্তন প্রেমিকা-প্রেমিকা নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা হচ্ছিল। এই আলোচনা করতে করতেই কঙ্গনা হঠাত্ প্রচণ্ড রেগে যান। বলেন, রেস্ট রুমে যাচ্ছি। এক সাক্ষাত্কারে সেই পর্ব জানান অধ্যয়ন নিজেই।
অধ্যয়ন অনেক ক্ষণ কঙ্গনার জন্য সেখানেই বসে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু ঘণ্টা খানেক পর ফোন করলে জানতে পারেন, কঙ্গনা রেস্ট রুমে যাবেন বলে নিজের বাড়ি চলে গিয়েছেন। খুব অবাক হয়েছিলেন অধ্যয়ন। কিন্তু বয়স কম হওয়ায় কঙ্গনার এই খামখেয়ালি আচরণ সে ভাবে বুঝতে পারেননি বলে দাবি করেন অধ্যয়ন।
পর দিন সকালে কঙ্গনার রাগ ভাঙানোর জন্য অধ্যয়ন তাঁর লোখণ্ডবালার বাড়ি যান ফুলের তোড়া নিয়ে। কিন্তু কঙ্গনা তাঁকে ভিতরে ঢুকতে দেননি। উপরন্তু খুব খারাপ আচরণ করেন। তার পরেও প্রায় পাঁচ ঘণ্টা তাঁর বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন অধ্যয়ন।
সেই সময় তাঁর বাবা শেখর সুমনও ফোন করেছিলেন কঙ্গনাকে। কিন্তু কঙ্গনা কোনও কথাই শুনতে চাননি। তার পর অবশ্য তাঁদের সম্পর্ক আবার ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কঙ্গনা ভীষণ ভাবে অধ্যয়নকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন।
অধ্যয়নের পোশাক, চুলের স্টাইল কেমন হবে- সমস্ত কিছু কঙ্গনা ঠিক করতে শুরু করেন। রাস্তাঘাটে চলার সময়ও কঙ্গনার পিছনে হেঁটে যেত হত অধ্যয়নকে। যেন প্রেমিকের বদলে কঙ্গনার বডিগার্ড তিনি।
এমনকি কখনও পরিচালকরা যদি ফোন করে অধ্যয়নের কাজের প্রশংসা করতেন, কঙ্গনা সেটাও নাকি ভাল ভাবে মেনে নিতে পারতেন না। গালিগালাজও করতে শুরু করেন বলে দাবি অধ্যয়নের।
এক বার পুরস্কারের মঞ্চে উঠে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের সময় সকলের নাম নিলেও সব সময় পাশে থাকা অধ্যয়নের নাম নেননি কঙ্গনা। এই ঘটনায় খুব কষ্ট পেয়েছিলেন অধ্যয়ন। এ ভাবেই ক্রমে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব শুরু হয়।
এমনকি কঙ্গনা নাকি তাঁকে মারধরও করতেন। তাঁর উপর ‘কালাজাদু’ও করেছিলেন কঙ্গনা, ওই সাক্ষাত্কারে জানান অধ্যয়ন। এর পর আর খুব বেশি দিন এগোয়নি তাঁদের সম্পর্ক। তবে ব্রেক আপের পরও কঙ্গনা নাকি তাঁর পিছু ছাড়েননি।
অধ্যয়নের দাবি, তিনি যখন অবসাদে ভুগছিলেন, তখন সম্পর্ক ভাঙার সমস্ত দোষ অধ্যয়নের উপর চাপিয়ে মিডিয়ার আকর্ষণে ছিলেন কঙ্গনা।
পরে অবশ্য অধ্যয়ন নাকি বুঝতে পেরেছিলেন, মিডিয়ার নজরে আসার জন্যই এত কিছু করেছেন কঙ্গনা। ফিল্ম ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া মুম্বইয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে খুবই স্ট্রাগল করতে হয়। কঙ্গনা তাই অধ্যয়নকে তাঁর সিঁড়ি বানিয়ে নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
এখন অবশ্য নিজের ভালবাসা খুঁজে পেয়েছেন অধ্যয়ন। অভিনেত্রী মাইরা মিশ্রর সঙ্গে তিনি সম্পর্কে খুশি বলেই জানিয়েছেন শেখর সুমনের পুত্র। তবে কঙ্গনা এখনও মনের মানুষকে খুঁজে পাননি।