মঙ্গলবার কলকাতার নজরুল মঞ্চে এক অনুষ্ঠানের শেষে মৃত্যু হয়েছে গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নথ ওরফে কেকে-র। তাঁর মৃত্যুর পর পুরনো একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে কেকে তাঁর শখের কথা জানিয়েছিলেন।
ওই সাক্ষৎকারে কেকে জানিয়েছিলেন, ছোটবেলা থেকেই গাড়ির প্রতি তাঁর একটা ভালবাসা ছিল। তাঁদের একটা মারুতি গাড়ি ছিল। কেকে বলেছিলেন, “প্রবল ইচ্ছা থাকলেও বাবা আমাকে কোনও দিন ওই গাড়ি চালাতে দেয়নি।”
কেকে আরও জানিয়েছিলেন, প্রেমিকাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা জানালেও তাঁকে গাড়ি দেওয়া হয়নি। তাই সাবানের মধ্যে গাড়ির চাবির ছাপ নিয়ে নকল চাবি বানিয়ে নিয়েছিলেন।
কেকের কাছে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ি ছিল।
বেশ কয়েটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, কেকের সংগ্রহে ছিল জিপ চেরোকি, মার্সিডিজ বেন্জ এ ক্লাসের মতো গাড়ি। সম্প্রতি অডি আরএস৫ গাড়ি কেনেন তিনি।
কেকে তাঁর গানের জন্য গোটা দেশে জনপ্রিয় হলেও তাঁর গাড়ির শখ সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানতেন। কিন্তু এক সাক্ষাৎকারে তাঁর এই শখ সম্পর্কে বলেছিলেন কেকে।
কেকের সংগ্রহে জিপ, মার্সিডিজের মতো গাড়ি থাকলেও, তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ছিল অডি আরএস ৫।
চলতি বছরের জানুয়ারিতেই স্ম্যাশিং মেটালিক রেড পেন্ট অডি আরএস ৫ গাড়ি কিনেছিলেন কেকে। ইনস্টাগ্রামে সেই ছবি শেয়ারও করেছিলেন তিনি। অডি আরএস ৫-এর এক্স শোরুম দাম এক কোটি চার লক্ষ টাকা। ০-১০০ কিলোমিটার গতিতে পৌঁছতে মাত্র ৩.৯ সেকেন্ড লাগে এই গাড়ির।
কেকের সংগ্রহে যে জিপ চেরোকি গাড়িটি ছিল তার দাম ৭৫ লক্ষ টাকা (এক্স শোরুম)। মার্ডিডিজ বেন্জ এ ক্লাসিক গাড়ির দাম প্রায় ৪ কোটি টাকা। কিন্তু সংস্থা এই গাড়ির উৎপাদন বন্ধ করে দেয় ২০১৯ সালে।
মঙ্গলবার আচমকাই মৃত্যু হয়েছে কেকের। তাঁর জনপ্রিয় ২০টি গান গেয়েছিলেন কলকাতার নজরুল মঞ্চে। তার পরই অসুস্থ বোধ করায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা কেকে-কে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
কেকে-র মৃত্যুতে ইতিমধ্যেই নিউ মার্কেট থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কেকে-র মৃত্যু অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা নিয়ে বহু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
পাঁচশোরও বেশি হিন্দি গান এবং তেলুগু, বাংলা, কন্নড় এবং মালয়ালম ভাষায় দু’শোর বেশি গান গেয়েছেন কেকে।
এক সাক্ষাৎকারে কেকে বলেছিলেন, “তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য স্ত্রী জ্যোতির বড় ভূমিকা রয়েছে। অন্য আর একটি সাক্ষাৎকারে কেকে বলেছিলেন, “সঙ্গীতকে আমার পেশা হিসাবে বেছে নেওয়ার নেপথ্যে ছিল আর এক গায়ক হরিহরণ। উনিই আমার অনুপ্রেরণা।”
দিল্লি থেকে মুম্বইয়ে আসার পর চার বছরে ১১টি ভাষায় সাড়ে তিন হাজার জিঙ্গল গেয়েছিলেন কেকে। প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ কাল্লুরি সালে এবং হ্যালো ডক্টর গানে।
বলিউডের ‘মাচিস’ ছবিতে ‘ছোড় আয়ে হাম’ গানের একটা অংশ গেয়েছিলেন তিনি। তবে ১৯৯৯ সালে ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ ছবিতে ‘তড়প তড়প’ গান গেয়ে মন জয় করে ছিলেন শ্রোতাদের।
শুধু ভারতই নয়, পাকিস্তানেও তাঁর জনপ্রিয়তার ছাপ রেখেছেন কেকে। পাকিস্তানের একটি টিভি শো-তে ‘তনহা চলা’ গান গেয়ে মন কেড়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক অ্যালবাম ‘রাইজ আপ কালার্স অব পিস’-এ ‘রোজ অব মাই হার্ট’ গানটি গেয়েছিলেন কেকে।
কেকের দুই ছেলেমেয়ে। ছেলের নাম নকুল কৃষ্ণ কুন্নথ এবং মেয়ের নাম তামারা কুন্নথ। রণবীর সংহ এবং দীপিক পাড়ুকোন অভিনীত ‘৮৩’ ছবিতে ‘ইয়ে হসলে’ গানটি গেয়েছিলেন কেকে।