প্রথাগত তালিম ছাড়াই হয়ে উঠেছিলেন বলিউডের অন্যতম প্রতিষ্ঠান। ‘বিস্ময়’ শব্দটা তাঁর জীবনেরই সমার্থক। তিনি কিশোর কুমার। ৩৩ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে সেই কিংবদন্তির জীবনের কিছু জানা-অজানা তথ্যে এক ঝলক ফিরে দেখা।
অভিনয়ের বদলে প্রথমে কেরিয়ার শুরু করলেন বম্বে টকিজ-এর কোরাস শিল্পী হিসেবে। বিনোদন দুনিয়ায় পা রেখে তিনিও দুই দাদার মতো নিজের নাম পরিবর্তন করলেন। আভাসকুমার গঙ্গোপাধ্যায় থেকে হলেন কিশোর কুমার।
শুধু অমিতকুমার এবং সুমিত নয়। অরূপ আর রুমা গুহঠাকুরতার মেয়ে শ্রমণা চক্রবর্তীকে নিজের মেয়ের মতোই ভালবাসতেন কিশোর কুমার। শ্রমণা যেমন বললেন, “আমি কিশোর কুমারকে ‘বাপি’ বলে ডাকতাম। মা মুম্বইতে শ্যুট করতে গিয়ে আলাদা থাকলেও আমি কিন্তু বাপির বাড়িতেই থাকতাম। এমনকি আমার বাবাও কাজে মুম্বই গেলে বাপির কাছেই উঠত। বাবা আর বাপির কোনও দিন কোনও তিক্ত সম্পর্ক দেখিনি!”
কিশোর কুমারের প্রথম স্ত্রী ছিলেন রুমা গুহ ঠাকুরতা ( তখন রুমা দেবী)। ১৯৫০-৫৮, আট বছর স্থায়ী হয়েছিল তাঁদের দাম্পত্য। ১৯৫২ সালে জন্ম হয় তাঁদের একমাত্র সন্তান, অমিতের।
আদ্যপান্ত প্রাণখোলা মানুষ ছিলেন কিশোর কুমার। ইন্ডাস্ট্রির সকলকে বাড়িতে ডেকে পার্টি করার মানুষ তিনি ছিলেন না।
শ্রমণা বললেন, “নিজের স্পেসে থাকতে পছন্দ করত বাপি। দাদাভাই (অমিত কুমার) ‘লাভ স্টোরি’র জন্য পুরস্কার পাওয়ায় একবার মুম্বইয়ের বাড়িতে ড্রিঙ্কস সার্ভ করা হয়েছিল। বাপি মাছের নানা প্রিপেরেশন, বাঙালি সবজি খেতে খুব ভালবাসত।”
খামখেয়ালি আচরণ ছিল কিশোর কুমারের বর্ণময় জীবনের অঙ্গ। তাঁর বাড়ির সামনে বোর্ড লাগানো ছিল। যেখানে ইংরেজিতে যা লেখা থাকত, তার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, ‘কিশোর কুমার হইতে সাবধান’। বাড়িতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অনেকেই আজব ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন।
কে এল সায়গল এবং পাকিস্তানি শিল্পী আহমেদ রুশদির প্রভাব ছিল কিশোর কুমারের উপর। এক ঘরোয়া আড্ডায় এস ডি বর্মন তাঁকে পরামর্শ দেন নিজস্ব গায়কি তৈরি করতে। এর পর কিশোর তাঁর গায়কিতে পাশ্চাত্য প্রভাব আনেন। মার্কিন শিল্পী জিমি রজার্স এবং নিউজিল্যান্ডের গায়ক টেক্স মর্টনের গান শুনে নিজের গায়কিরও সঙ্গী করে নেন ইয়োডলিংকে।
শ্রমণা বললেন, “বাপি বলতেন গলা ছেড়ে স্পস্ট উচ্চারণে গান গাইতে। এমনকি, দুঃখের গানেও গলা ছেড়ে গান গাওয়ার ওপর জোর দিতেন। বলতেন গান এমন ভাব গাওয়া হবে যাতে শ্রোতার চোখের পাতা ভিজে যায়।’’
ক্রমে ইন্ডাস্ট্রিতে রাজেশ খন্না, জিতেন্দ্র, দেব আনন্দ, অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠ হয়ে ওঠেন কিশোর কুমার। সলিল চৌধুরীর সঙ্গীত পরিচালনায় ‘হাফ টিকিট’ ছবিতে নারী ও পুরুষ, দ্বৈত ভূমিকার কণ্ঠে তাঁর গান বাজিমাত করে।
জীবনকেই সেলিব্রেট করে গেছেন তিনি। শ্রমণা যেমন বললেন, “বাপি কোনওদিন মৃত্যু নিয়ে ভয় পাননি। একটাই আফসোস, আমার বিয়েতে মুম্বই থেকে একটা ট্রেন ভাড়া করে বাপি কলকাতা আসবে বলেছিল! সেটা আর হল না।’’