কিম কার্দাশিয়ানের ৭ বছরের তৃতীয় দাম্পত্যও শেষ হয়েছে। আমেরিকান এই মডেল অভিনেত্রী বিচ্ছেদের কথা জানিয়েছেন সম্প্রতি। তাঁর সদ্য প্রাক্তন স্বামী কেনি ওয়েস্ট পেশায় পপ সঙ্গীতশিল্পী। কিম জানিয়েছেন, বিয়ে ভাঙার সিদ্ধান্ত তাঁরা যৌথ ভাবে নিয়েছেন। এই নিয়ে তাঁদের মনে কোনও বিদ্বেষ নেই।
৪ সন্তান নর্থ, সেন্ট, শিকাগো এবং প্যাজমের হেফাজত যৌথ ভাবে দাবি করেছেন কিম এবং কেনি। অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী কিম-কেনির সম্পত্তির পরিমাণ আকাশছোঁয়া। আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের দাবি, তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ ২২০ কোটি ডলারেরও বেশি। সেগুলির মধ্যে আছে ক্যালিফোর্নিয়ায় হিডন হিলস-এ ১৫,৬৬৭ বর্গফুটের প্রাসাদ।
তাঁদের যৌথ মালিকানার সম্পত্তির মধ্যে আছে ১০ কোটি ডলারের রিয়েল এস্টেট এবং ৩৯ লক্ষ ডলারের মহার্ঘ্য গাড়ির সম্ভার। এই বিপুল সম্পত্তির পিছনে কিম এবং কেনি দু’জনেরই অবদান আছে। শিল্পী ছাড়াও কিম এক জন ব্যবসায়ীও। প্রসাধনী ছাড়াও জামাকাপড়ের পসরার মালকিন তিনি।
কিম-কেনের সম্পত্তির অন্যতম হল ক্যালিফোর্নিয়ায় ২ কোটি ডলার দিয়ে কেনা প্রাসাদ। ২০১৪ সালে এই অট্টালিকা কিনেছিলেন তাঁরা। ২০১৮ সাল থেকে এই বাড়িতে বছর চারেক ছিলেনও তাঁরা। বহু সূত্রে দাবি, বাড়িটির দাম আসলে ৬ কোটি ডলার।
তবে এই বাড়িটির মালিকানা প্রথম থেকেই বিতর্কিত। শোনা যায়, ক্যালিফোর্নিয়ায় জমিটি কিনেছিলেন কিম। কিন্তু প্রাসাদোপম বাড়ির মালিক কেনি। তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদের সেটলমেন্টের কেন্দ্রে থাকতে পারে এই বিতর্ক।
এই প্রাসাদের কাছেই ২০১৯ সালে আরও একটি বাড়ি কেনেন এই তারকা দম্পতি। তবে এই বাড়ির দাম কিছুটা কম ছিল। ৪ শয্যার বাড়িটির দাম পড়েছিল ২৯ লক্ষ ডলার। এই দ্বিতীয় বাড়িটি দেড় একর জমির উপর ৩,৯০০ বর্গফুট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। দ্বিতীয় বাড়িটির বিশেষত্ব হল, এখানে ঘোড়সওয়ারি করার বন্দোবস্ত আছে।
এ ছাড়া কিম এবং কেনি ওয়াইয়োমিং এবং বিগ হর্ন এলাকায় দু’টি র্যাঞ্চও কিনেছেন। মায়ামি সৈকতে একটি বিলাসবহুল বাড়ি কিনে কিমকে বড়দিনে উপহার দিয়েছিলেন কেনি।
আমেরিকার বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রাক্তন এই তারকা জুটির বাড়ি। ২০১৩ সালে তাঁরা ৯ হাজার বর্গফুটের বেল এয়ার ম্যানসন কিনেছিলেন ১ কোটি ১০ লক্ষ ডলারের বিনিময়ে। ৪ বছর পরে সেই প্রাসাদ তাঁরা ইউক্রেনের এক ধনকুবেরের কাছে বিক্রি করে দেন।
বাড়ির মতো এই জুটির গাড়ির সংগ্রহও তাক লাগিয়ে দেয়। বিশ্বের মহার্ঘ্য সব বাহনের মালিক তাঁরা। ল্যাম্বরগিনি গ্যালার্ডো, অ্যাস্টন মার্টিন, মার্সিডিজ, এসএলআর স্টার্লিং মস-সহ তাবড় গাড়ি আছে তাঁদের সংগ্রহে।
তাঁদের একটি মহার্ঘ্য গাড়ি একবার একটুর জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যায়। সে সময় গাড়িটি চালাচ্ছিলেন তাঁদের এক কর্মচারী। আবার তাঁদের একটি দুর্মূল্য পোর্শে চুরিও হয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। কেনের পছন্দ সুপারকার। কিম ভালবাসেন বিলাসবহুল গাড়ি। ফলে দু’জনের পছন্দ মেলাতে গিয়ে গাড়ির সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে গিয়েছে।
কিমের সঙ্গে কেনের প্রথম আলাপ ২০০৪ সালে, একটি মিউজিক ভিডিয়ো-র শ্যুটিং উপলক্ষে। সে সময় কিমের দাম্পত্য চলছিল ড্যামন থমাসের সঙ্গে। সে বছরই কিম বিবাহবিচ্ছেদ করেন থমাসকে। শেষ হয় কিমের ৪ বছরের প্রথম দাম্পত্য। অন্য দিকে, কেন তখন ডেট করছিলেন অ্যালেক্সিস ফিফারের সঙ্গে।
প্রথম আলাপের সময়ে কিমকে চিনতেন না কেন। এমনকি, তিনি নাকি জানতেন না তাঁর নামও। ক্রমে আলাপ গাঢ় হয়। সেখান থেকেই প্রেম। তবে এই সম্পর্কের মাঝেই কিম ২০১১ সালে বিয়ে করেন ক্রিস হাম্ফ্রিজকে। তবে গায়িকার দ্বিতীয় পক্ষের সেই বিয়ে স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ২ বছর।
আলাপের ৮ বছর পরে দু’জনে স্বীকার করেন সম্পর্কের কথা। ২০১২ সালের জুনে কিম জানান, কেনি ও তিনি একে অন্যের প্রণয়ী। সে বছরই ডিসেম্বরে জানা যায় কিম সন্তানসম্ভবা। পরের বছর জুনে জন্ম হয় কিম ও কেনির প্রথম সন্তানের। মেয়ের নাম তাঁরা রাখেন নর্থ।
মেয়ের জন্মের ৫ মাস পরে দুর্মূল্য ১৫ ক্যারাট হিরে লোরেন স্কোয়ার্টজের আংটি দিয়ে কিমকে বিয়ের প্রস্তাব দেন কেনি। ২০১৪ সালে ইটালির ফ্লোরেন্সে নবজাগরণের সমসাময়িক এক দুর্গে বিয়ের বন্ধনে বাঁধা পড়েন দু’জনে। পরের বছর জন্ম হয় তাঁদের প্রথম পুত্রসন্তান সেন্টের।
২০১৮ সালে সারোগেসির মাধ্যমে তৃতীয় বার মা হন কিম। মেয়ের নাম রাখেন ‘শিকাগো’। প্রথম দু’টি সন্তানের জন্মের পরে তাঁর কিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দিয়েছিল। ফলে তৃতীয় বার মা হওয়ার জন্য তাঁদের সারোগেসির শরণাপন্ন হতেই হয়েছিল।
পরের বছর তাঁদের সংসারে আসে চতুর্থ সন্তান। আরও এক বার সারোগেসির মাধ্যমে মা হন কিম। ছেলের নাম তাঁরা রাথেন ‘প্যাজম’।
২০২০ সালের অক্টোবরেও কিমের জন্মদিন পালনের জন্য রাজকীয় আয়োজন করেছিলেন কেনি। কিন্তু তার কয়েক মাস পরেই প্রকাশ্যে আসতে থাকে তাঁদের সম্পর্কে দ্বন্দ্বের খবর। শেষ অবধি অনুরাগীদের আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে বিচ্ছেদের পথেই পা রাখলেন দুই তারকা।