কৌশিকী চক্রবর্তী।
একে সুপার সিঙ্গার। তার ওপর জুনিয়র। এনার্জি লেভেল একেবারে হাই। কথা হচ্ছে ‘সুপার সিঙ্গার জুনিয়র’ নিয়ে। ছোটদের সঙ্গীত প্রতিভা খুঁজে বের করার রিয়ালিটি শো-এ উপস্থিত বড়রাও, বিচারক এবং উপস্থাপক হিসেবে। সুপার সিঙ্গার জুনিয়র-এ অংশ নিয়ে কেমন লাগছে?
অন্যতম বিচারক জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, “ভীষণ ভাল লাগছে। বিকজ, বাচ্চারা যেখানে থাকে সেখানে ভাল লাগবে না,এটা হতে পারে না। আর যেদিন যেদিন আমাদের শুট থাকে সে দিনগুলোয় আমরাও বাচ্চা হয়ে যাই। ওদের সঙ্গে থাকতে থাকতে ওদের বদমাইশি, ওদের সরলতা, ওদের সবকিছু... আমরাও কিন্তু কিছু কিছু জিনিস ওদের কাছ থেকে শিখি। কেননা, আজকালকার বাচ্চারা এত ইন্টেলিজেন্ট, এত ডিসিপ্লিনড... এত সুন্দর... আজকালকার বাচ্চা কত ইমপ্রুভ করে গেছে। আমাদের সময় এরকম আমরা করতে পারতাম না... ওরা এত স্টেজ ফ্রি, এত সুন্দর করে গাইছে... ভাবা যায় না!”
অন্যতম প্রতিযোগী প্রাঞ্জল বিশ্বাস (৯), ক্লাস ফোরের শিক্ষার্থী। এসেছে নদিয়া জেলার করিমপুর থেকে। বাউল গানে দক্ষ প্রাঞ্জল জানাল, “খুবই ভাল লাগছে। আমি যেদিন ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ গেয়েছি, ম্যাম বলেছেন, ‘আমি কিছু বলার অবস্থায় নেই’।”
কেন? প্রাঞ্জল বলল, “কেঁদে ফেলেছেন। স্যরেরা বলেছেন, ‘আমরা তো কেঁদে ফেলেছি, যাঁরা দেখবেন তাঁরাও কেঁদে ফেলবেন।’ শানু স্যার জিজ্ঞেস করলেন আমি বড় হয়ে কী হতে চাই। আমি বলেছি, বড় হয়ে ফকির হতে চাই। আমি পড়াশোনাও করবো প্লাস গানও করব, ফকিরি-মহাজনী গান।”
আরও পড়ুন, মহেশ ভট্টের ‘সড়ক ২’-এ যোগ দিলেন যিশু
দুষ্টুমি হয়? যোগ করে প্রাঞ্জল, “আরও যারা গান করতে এসেছে তাদের সঙ্গে গল্প হয়, ব্যাট-বল নিয়ে খেলা হয়, দুষ্টুমি করি মাঝে মাঝে। আজ এখানে ভাল ভাল রান্না হয়েছিল, পোলাও আর মাংস (খুশি)।”
জাজেসদের সঙ্গে কী কথা হচ্ছে? উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ থেকে এসেছে সাবর্ণী রায় (৯)। জানাল, “আমি শানু স্যরকে প্রশ্ন করেছিলাম সমুদ্রের নীচে কোন পাথর দেখা যায় না। স্যর উত্তর দিতে পারেননি। কৌশিকী ম্যাডাম গান শুনে বলেছিলেন, ‘এক্সপ্রেশনটা খুব সুন্দর।’ জিৎ স্যর বলেছিলেন, ‘ভাল হয়েছে। আরও ভাল গাইতে হবে।’ আমি বড় হয়ে সিঙ্গার হতে চাই। তিনটে গান করেছি এখন অব্দি। প্রথম দিনই গেয়েছি ‘তুমি নির্মল কর, মঙ্গল কর’।”
এই শোয়ের তিন বিচারক কুমার শানু, কৌশিকী চক্রবর্তী এবং জিত্ গঙ্গোপাধ্যায়।
আর এক বিচারক কৌশিকী চক্রবর্তী এই প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে জানালেন, “প্রথমত, বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভাল লাগে। দ্বিতীয়ত, তাদের গানবাজনা করার জন্য ইন্সপায়ার করতে আমার ভাল লাগে। এখনও পর্যন্ত যাদের গান শুনেছি তাদের মধ্যে কিছু বাচ্চা আছে খুবই ট্যালেন্টেড। তাদের গান আরও ভাল করে শোনার এবং ভবিষ্যতে তারা যেন আরও ভাল করে গান বুঝতে পারে যদি সেটার চেষ্টা করতে পারি তাহলে আরও ভাল লাগবে।”
সুপার সিঙ্গারদের বিষয়ে কী ভাবছেন জিৎ? তিনি জানালেন, “একটা গাছকে জল দিয়ে, ভাল করে সার দিলে তার পর কুঁড়ি আসে... তো আমাদের এখন সেই স্টেজটা চলছে। আমরা জানি বাংলা হচ্ছে সঙ্গীতের পীঠস্থান। যারা যারা গাইতে আসছে... এরকম সিঙ্গার পাওয়া বাংলা বলেই সম্ভব। বাঙালি হিসেবে আমি খুবই প্রাউড ফিল করি। মুম্বাইতে আমার ২৫ বছর হয়ে গেল। আমি যখন কোনও ডিরেক্টর বা প্রোডিউসারের সামনে গিয়ে দাঁড়াই, যখন বলি আমি বাংলা থেকে এসেছি, তখন সবসময় তাঁরা বলেন, কোনও গান গেয়ে যদি বাংলাতে হাততালি পাওয়া যায় তো জানবো যে পুরো ওয়ার্ল্ড-এ সাকসেসফুল হয়ে গেল। সঙ্গীতকে এখানে এতটাই লোকে পুজো করে... তো আমরা এটাই চেষ্টা করছি... আমরা তিনজন জাজেস আছি... আমি শানুদা (কুমার শানু) আর কৌশিকী... আমরা তো আর ভগবান নই, আমরা জাস্ট পথটা দেখিয়ে দিতে পারব যে এই এই ভাবে গান কর তাহলে ভালো করে শিখতে পারবে। যে বাচ্চারা আজকে গান গাইছে পরে কেউ হয়তো পেন্টার হবে, কেউ মিউজিশিয়ান, কেউ হয়তো ফুটবল প্লেয়ার হবে, কেউ ক্রিকেটার। তো প্রেশার দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু যারা সিঙ্গার হবে তাদের গান নিয়ে সাধনা করতে হবে ডেফিনেটলি। আমাদের কাজ হচ্ছে রাস্তা দেখানো।”
আরও পড়ুন, ৫০ বছর পর কেমন আছে সত্যজিতের ফেলুদা?
কৌশিকী যোগ করলেন, “বাচ্চারা থাকলে বড়দেরও একটু বাচ্চা হতে হয়। সেইজন্য ওদের সঙ্গে গল্প করা বা একটু ধাঁধা বলা বা খেলার ছলে গান শোনা এবং জাজমেন্টটাও সেই ভাবে বলা... সব থেকে বড় কথা হচ্ছে তারা যেখানে থাকে সেখানে পরিবেশটার মধ্যে পজিটিভিটি বেশি রাখতে হয়। কারণ বাচ্চাদের যদি বলা হয়, তুমি এটা পারছ না, এটা হচ্ছে না তাহলে ওদের মনটা খুব তাড়াতাড়ি ভেঙে যায়। তো ওদেরকে ভুলটা বুঝিয়ে দিতে হয়। কিন্তু পজিটিভ অ্যাটিটিউডে বোঝাতে হয়, ক্রিটিসাইজ করার মতো করে বলতে নেই। তো আমরা সকলেই চেষ্টা করছি যাতে ওদের ইন্সপায়ার করা যায়।”
আরও পড়ুন, কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন সুস্মিতা, এখন কেমন আছেন?
কী মজা হল শুট করতে গিয়ে? কৌশিকী বললেন, “শুটের মাঝখানে কিছু ঘটনা আছে যেগুলো সবাই দেখতে পাবে... খুবই বাচ্চাসুলভ আর কী! মানে কাউকে কোলে তুলে নেওয়া হয়েছে, কারও ওজন মাপা হয়েছে এতই রোগা সে, কেউ আবার এমন ধাঁধা জিজ্ঞেস করেছে শানুদাকে... শানুদা বা আমরা কেউ উত্তর দিতে পারি নি... এরকম কিছু ঘটনা যার সঙ্গে কম্পিটিশনের কোনও যোগাযোগ নেই... আমরা চেষ্টা করছি ওদের কমফর্টেবল রাখতে, যাতে গান করতে গিয়ে ভয় না পায়।”
এই প্রোগ্রামের বিশেষত্ব কী? জিৎ ব্যাখ্যা করলেন, “এই প্ল্যাটফর্মটা খুব ইম্পরট্যান্ট। আমরা যেসময় শুরু করেছি, আমরা কিন্তু এরকম বড় প্ল্যাটফর্ম পাইনি... লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি দর্শক। স্টার জলসার এই প্ল্যাটফর্ম সারা ওয়ার্ল্ডে দেখা যাচ্ছে। একটা জায়গায় আমরা খুব কড়া, যে ভাল গাইবে তাকে রাখতে হবে। আমরা বাঙালিরা সবসময় এক নম্বরে থাকি... বোম্বে ইণ্ডাস্ট্রি বল, যেখানেই বল বাঙালি সবসময় এক নম্বরে; সিঙ্গার, কম্পোজার, যাই হোক। তো এই ব্যাপারটা তুলে ধরার আছে। আর যে বাচ্চাগুলো আসছে তাদের সবাই দেখতে পাচ্ছে, তাদের গান সবাই শুনতে পাচ্ছে... তো তাদের ভবিষ্যতের এনকারেজমেন্ট হচ্ছে।”
জোরদার প্রতিযোগিতা চলছে। সকলেই অপেক্ষায়। কে হয় সুপার সিঙ্গার।
(টলিউডের প্রেম, টলিউডের বক্স অফিস, বাংলা সিরিয়ালের মা-বউমার তরজা -বিনোদনের সব খবর আমাদের বিনোদন বিভাগে। )
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।