কাঞ্চন।
প্র: আপনি আর শুধু অভিনেতা নন, রাজনৈতিক নেতাও। নতুন ভূমিকা নিয়ে কতটা আশাবাদী?
উ: অভিনেতা হওয়ার পাশাপাশি জননেতা হিসেবেও সফল হতে চাই। তার জন্য এলাকাবাসীকে আমার প্রতি ভরসা রাখতে বলেছি। যাঁদের জোরে আমি নেতা হয়েছি, তাঁরা পাশে থাকলে সমস্ত বাধা অনায়াসে পেরিয়ে বাংলার উন্নয়নের স্বপ্ন সফল করতে পারব।
প্র: বিধায়ক হয়ে কী কী দায়িত্ব পালন করবেন?
উ: একটা গোটা অঞ্চলের দায়িত্ব আমার কাঁধে। এত মানুষের ভাল-মন্দের ভার এখন আমার।
প্র: জয়ের আনন্দ কার সঙ্গে ভাগ করে নিলেন?
উ: এই জয় উত্তরপাড়াবাসীকেই উৎসর্গ করেছি। সকলের শুভ কামনায়, ভালবাসায় আমি বিধায়ক। আলাদা করে বিজয়মিছিল বা আনন্দ উৎসব করার সময় নয় এখন। তবে দল জিতলেও আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্রের ফলাফলটা মনে এখনও গভীর ক্ষত হিসেবে রয়েছে। তা ছাড়া কোভিড পরিস্থিতি সামলানোও জরুরি। আমার পাঁঠার মাংস পছন্দ হলেও ভালমন্দ খাওয়ার দিন পড়ে রয়েছে। এখন মানুষের পাশ থেকে সরে এসে খাওয়াদাওয়া করে আনন্দ করতে পারছি না।
প্র: আপনার প্রথম কাজ কী হবে?
উ: করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়াই হবে প্রথম কাজ। আগে মানুষগুলোকে বাঁচাতে হবে, সংক্রমণ আটকাতে হবে। নিজের এলাকাবাসীর মুখে হাসি ফোটাতে চাই। কিছু জায়গায় পানীয় জলের ব্যবস্থা, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন... এই সমস্যাগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা রয়েছে। কিন্তু এগুলো করব কাদের জন্য? জরুরি এখন মানুষকে সুস্থ রাখা। তাই করোনা সংক্রমণ রুখতে সেফ হাউস খুলেছি, রোগীর বাড়ি গিয়েও যাতে টেস্ট করানো যায়, তার ব্যবস্থা করেছি। সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করানো, মাস্ক বিলি, ভ্যাক্সিনেশনের কাজ জোরকদমে চলছে। কিছুটা বাড়িতে বসে করছি। আর দরকার পড়লেই উত্তরপাড়ায় ছুটতে হচ্ছে।
প্র: নির্বাচনী প্রচার করোনার বাড়বাড়ন্তের জন্য অনেকটাই দায়ী, এটা নিশ্চয়ই মানবেন?
উ: প্রচারের কারণে করোনার প্রভাব খানিকটা বেড়েছে, এটা ঠিক। জনসমাগম বেড়েছিল। বিজেপির সমাবেশের জন্য বাইরে থেকে লোক নিয়েও আসা হয়েছিল। সংক্রমণ সেখান থেকেও ছড়িয়েছে।
প্র: নির্বাচনের পর থেকেই বাংলায় আগুন জ্বলছে। সন্ত্রাস বন্ধ করতে কোনও পদক্ষেপ করেছেন?
উ: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে উত্তরপাড়া বিধানসভার প্রতিটি এলাকায় সচেতনবার্তা পৌঁছে দিয়েছি। কোথাও নিজে গিয়ে, কোথাও আমার রেকর্ডেড ভয়েস, ভিডিয়ো বাইট পাঠিয়ে কর্মীদের বলে দিয়েছি, কোনও রকম প্ররোচনায় পা না দিতে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আবেদন করেছি। আমি চাই এই সন্ত্রাস বন্ধ হোক। মানুষের জীবন রাজনীতির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
প্র: রাজনীতিতে আসার আগে মানুষের পাশে কী ভাবে ছিলেন?
উ: এত বছর ধরে গ্রুপ থিয়েটার করেছি। সেটাও কি এক অর্থে মানুষের পাশে থাকা নয়? আবার অভিনয়ের মধ্য দিয়ে যে বিনোদন জুগিয়েছি, সেটাকেও কি তাঁদের পাশে থাকা বলে না? আমাকে একজন অভিনেতা হিসেবে প্রচুর ভালবাসা দিয়েছেন মানুষ। রাজনীতিতে পা দেওয়ার পরেও জানতাম, এখানেও সফল হতে গেলে সকলের ভালবাসা ও আশীর্বাদের প্রয়োজন। আমি ভাগ্যবান যে, জনতা আমাকে ফেরাননি। নানা ভাবে মানুষের পাশে থেকেছি সব সময়ে। সমাজকল্যাণমূলক কী কী কাজ করেছি, সেগুলোর ফিরিস্তি আর না-ই বা দিলাম।
প্র: প্রচারে বেরিয়ে ‘খেলা হবে’ গানের সঙ্গে নেচেছিলেন?
উ: গানটা বহুবার শুনেছি। তাল, ছন্দ, আবেগ রয়েছে। তবে গানটির সঙ্গে এখনও পর্যন্ত একবারও নাচিনি।
প্র: দু’দলের তারকাপ্রার্থীদের অনেকেই পরাজিত। সমালোচনার মুখে পড়েছেন তাঁরা। আপনার মতামত কী তাঁদের ব্যাপারে?
উ: নীতিগত বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী তারকাপ্রার্থীরা নিজের নিজের দল বেছেছিলেন। আমি যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানে দলে যোগ দিয়েছিলাম, জনগণের রায়ে জিতেছি। কিন্তু যদি হারতাম, মেনে নিতে হত। হার মেনে নিতে হয়। কিন্তু হারলেই যে তাঁরা বিচ্ছিরি ‘নগরনটী’ হয়ে গেল, বিশ্বাস করি না। আজ যদি তাঁরা জিততেন, তা হলে তাঁদের ‘নগরনটী’ বলা হত? মনে হয় না। এই কথা যাঁরা বলছেন, মহিলাদের সম্পর্কে তাঁদের ধারণাটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তাই আমার পাল্টা প্রশ্ন, তাঁরা যদি এতই খারাপ, দলে নিলেন কেন? প্রার্থী করার পরে নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় ‘নগরনটী’ বলছেন কেন তাঁদের? মহিলাদের প্রতি এমন মানসিকতা, এমন নোংরা ধারণা নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি? জিতলে আমার নেত্রী, আর হারলে ‘নগরনটী’! পাবলিক ফোরামে যাঁরা এই সব কথা বলেন, তাঁরা নিজেদেরই রুচির পরিচয় দেন।
প্র: আপনার বন্ধু রুদ্রনীল ঘোষও হেরেছেন। ট্রোলডও হয়েছেন অনেক। তাঁর সম্পর্কে কী বলবেন?
উ: নো কমেন্টস। সে তার নীতি অনুযায়ী, বুদ্ধি অনুযায়ী দল নির্বাচন করেছিল। জনসাধারণ উত্তর দিয়েছেন তাকে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না। ব্যক্তিগতভাবে ওকে ফোন করিনি। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে চাইনি বন্ধুত্বে।
প্র: রাজনীতির পাশাপাশি অভিনয়ে কতটা সময় দিতে পারবেন এর পরে?
উ: অনেকটাই সময় দিতে পারব বলে আশা করছি। যে রাঁধে, সে কি চুল বাঁধে না? আমিও রাজনীতির কাজের পাশাপাশি অভিনয় চালিয়ে যাব। দুটো ওয়েব সিরিজ়ের কাজ শেষ করেছি সম্প্রতি। একটা রিয়্যালিটি শোয়ে দু’দিন কাজ করেছি। তবে এই মুহূর্তে আর কোনও নতুন কাজ হাতে নেই আমার।