‘ওয়েব সিরিজ’ শব্দটা তখনও অত জনপ্রিয় নয় ইন্ডাস্ট্রিতে। কিন্তু তিনি তখনই ইন্টারনেটের সেনসেশন। সময়ের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে থাকা জিতু ভাইয়া বহু দিন ধরেই পরিচিত নেটাগরিকদের কাছে।
‘শুভ মঙ্গল জ্যায়দা সাবধান’ ছবির অভিনেতা জিতু ভাইয়ার আসল নাম জিতেন্দ্রকুমার। রাজস্থানের আলোয়ারের এক ছোট্ট গ্রাম থেকে মুম্বই পাড়ি দিয়ে হয়ে উঠেছেন বিনোদন দুনিয়ার অন্যতম মুখ। নিজের ডাকনামেই পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। পর্দায় এখন ওটাই তাঁর নাম।
জিতেন্দ্রর জন্ম ১৯৯০ সালের ১ সেপ্টেম্বর। তাঁর বাবা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। বাবার পেশাতেই পা রাখবেন বলে ঠিক করেন তিনি। আইআইটি খড়গপুরের পড়ার সুযোগ পান তিনি।
কিন্তু সেখানে পড়তে গিয়ে বিপাকে পড়েন। হিন্দি মাধ্যমে পড়াশোনা করা জিতুর অসুবিধে হয় ইংরেজিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে।
কিন্তু সহপাঠীদের মন জয় করতে সমস্যা হল না জিতুর। কারণ তিনি দুর্দান্ত মিমিক্রি করতে পারতেন। অমিতাভ বচ্চন, নানা পটেকর-সহ বলিউড তারকাদের কণ্ঠস্বর ও বাচনভঙ্গি অনুকরণ করে তাক লাগিয়ে দিতেন তিনি।
কলেজফেস্টে দর্শকদের মন জয় করে জিতু এ বার যোগ দিলেন কলেজের নাটকের দলে। সিনিয়র সহপাঠী বিশ্বপতি সরকারের সঙ্গে জিতুর জুটি ছিল জনপ্রিয়। ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠের তৃতীয় বর্ষেই ইন্টার্নশিপ করতে জিতু গিয়েছিলেন তাইল্যান্ড।
পরে বন্ধু বিশ্বপতির ডাকে মুম্বই গিয়ে ইউটিউবের জন্য বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো করেছিলেন জিতু। কিন্তু কোনওটাই জনপ্রিয় হয়নি। হতাশ জিতু সব ছেড়েছুড়ে বেঙ্গালুরুতে বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি নিয়ে চলে যান।
কিন্তু সেই জাপানি সংস্থায় মন বসাতে পারলেন না জিতু। কাজের অবসরে কবিতা লিখতেন তিনি। গুলজারের ভক্ত জিতুর হতাশা কাটানোর পথ হয়ে উঠল কবিতা।
চাকরি যখন জীবনকে ক্রমশ দমবন্ধ করে দিচ্ছিল, আবার এক বার পরিবর্তনের মুখে জিতুর গতি। তাঁর একটা পুরনো ভিডিয়ো প্রকাশিত হল ইউটিউবে। হঠাৎই সেটি রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠল। এ বার জিতু ঠিক করলেন, তিনি অভিনয়কেই পেশা করবেন।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি ছেড়ে জিতু গেলেন বাড়িতে অনুমতি নিতে। কিন্তু বাড়ির লোক কিছুতেই তাঁকে অভিনয় করতে দিতে চান না। তাঁদের পরামর্শ, ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসা। কিন্তু জিতু তাঁর অভিনেতা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর।
অবশেষে বাবার অনুমতি পেলেন। তবে একইসঙ্গে প্রতিজ্ঞা করতে হল। তিনি কোনওদিন মাদক স্পর্শ করবেন না। সেই শর্তে অনুমতি পেয়ে পা রাখতে পারলেন মুম্বইয়ে।
জিতু ঠিক করেই নিয়েছিলেন। বাবার কাছ থেকে হাত পেতে টাকা নেবেন না। সপ্তাহে পাঁচদিন তিনি টিভিএফ-এর হয়ে ওয়েবসিরিজে কাজ করতেন। বাকি দু’দিন কোচিং করাতেন বিজ্ঞানশাখার ছাত্রদের।
২০১৪ সালে ইউটিউবে এল ‘পার্মানেন্ট রুমমেটস’। এখানে প্রতীক চরিত্রে জিতুর অভিনয় খুব জনপ্রিয় হয়। সংলাপ বলার সাবলীল ভঙ্গি বরাবরই তাঁর তুরুপের তাস।
ক্রমে ‘টিভিএফ পিচার্স’, ‘টিভিএফ ট্রিপলিং’, ‘ইমম্যাচিয়োর’, ‘কোটা ফ্যাক্টরি’, ‘চিজকেক’, ‘পঞ্চায়েত’-এর মতো সিরিজে নেটদুনিয়ায় নিজের জায়গা মজবুত করে নেন জিতু।
অনুরাগীরা তো বিশ্বাসই করতে চাননি জিতু কোনওদিন অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নেননি! জিতু এক বার ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় গিয়েওছিলেন। কিন্তু সেখানে তাঁকে ইন্টারভিউয়ে প্রশ্ন করা হয়, আইআইটি-র ইঞ্জিনিয়ার হয়ে তিনি কেন‘নৌটঙ্কি’ করতে চান?
অভিনয়কে ‘নৌটঙ্কি’ বলায় আহত হয়েছিলেন জিতু। ইন্টারভিউয়ে সফলও হতে পারেননি। তিনি আর কোনওদিন যাননি অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নিতে।
ডিজিটাল মাধ্যমে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা তাঁকে আয়ুষ্মান খুরানার সঙ্গে ‘শুভ মঙ্গল জ্যায়দা সাবধান’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ করে দেয়। প্রথমে রাজি না হলেও পরে এই ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
এছাড়াও ‘গন কেশ’, ‘শুরুয়াত কা ইন্টারভ্যাল’, ‘চমন বহার’ ছবিতে অভিনয় করেছেন জিতু। ইউটিউবার থেকেও যে হিন্দি ছবিতে সুযোগ পাওয়া যায়, দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি।
টিভিএফ-এর ভিডিয়োতে জিতুর সহঅভিনেত্রী আকাঙখা ছিলেন তাঁর বিশেষ বান্ধবী। কিন্তু পরে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
অভিনয়ের প্রশিক্ষণ বা কোনও গডফাদার ছাড়াই ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা করে নিতে পেরেছেন বহিরাগত জিতু।