টাইট ফিটের সাদা শার্ট। চোস্ত সাদা ট্রাউজার। চকচকে পালিশ করা বুট জুতোও সাদা। নায়িকার আশপাশে ঘুরেফিরে স্মিত হাসি নিয়ে গাইছেন সৌম্যকান্তি নায়ক। না! যে সে নায়ক নন। তিনি ‘জাম্পিং জ্যাক’ জিতেন্দ্র। বলিউডে মশলা ফিল্মের চিরতরুণ নায়ক! কেরিয়ারের বেশির ভাগ ফিল্মেই তাঁকে দেখা গিয়েছে সাদা পোশাকে। কিন্তু কেন সাদা পোশাকই? এর রহস্যটাই বা কী?
জিতেন্দ্রর সাদা পোশাকের রহস্যভেদ করার আগে একটু পিছন ফিরে তাকানো যাক। কেরিয়ারে একেবারে গোড়ার দিকে সাদা পোশাকে দেখা যায়নি জিতেন্দ্রকে। বরং তখন বেশ রংচঙে পোশাকই পরতেন তিনি। তবে কখন থেকে সাদা পোশাকের প্রতি টান এল জিতুর?
সে কথা খোলসা করার আগে জিতেন্দ্র নিজের কেরিয়ারের শুরুর দিকটা তুলে ধরেছেন। বা বলা ভাল, তাঁর স্ট্রাগল করার সময়কালে ফিরে গিয়েছেন। জিতেন্দ্র বলেন, “পড়াশোনায় একেবারেই ভাল ছিলাম না। যাকে বলে একেবারে জিরো। অথচ সংসারের অবস্থাও তেমন ভাল না। কাকার সঙ্গে বলিউডের সেটে ইমিটেশন জুয়েলারি বিক্রি করতাম।” আর এ ভাবেই জীবনে প্রথম ব্রেক এসে গিয়েছিল জিতুর কাছে।
বলিউডে প্রথম ব্রেক এলেও তা কিন্তু নায়কের ভূমিকায় নয়। বরং ‘এক্সট্রা’ হিসেবে বলিউডে প্রথম কাজ জুটেছিল জিতেন্দ্রর। সালটা ১৯৫৯। সে কথা বলতে গিয়ে বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে যান তিনি। জিতেন্দ্র বলেন, “কিছু জুয়েলারি সাপ্লাই দিতে ভি শান্তারামের সেটে গিয়েছিলাম। বেশ কৌতূহল ছিল ফিল্মের ব্যাপারে। কোনও কিছু জানার আগেই শান্তারামের ফিল্মে এক্সট্রা-র কাজ পেয়ে গিয়েছিলাম।” ভি শান্তারামের পরিচালনায় সে ফিল্মটা ছিল ‘নবরং’।
এর পর থেকে টুকটাক ছোটখাটো বলিউড রোল আসতে থাকে জিতেন্দ্রর কাছে। গত শতকের ষাটের দশকে সে সময় তাঁর স্ট্রাগলিং পিরিয়ড। এক সময় তো একটা ফিল্মে বডি ডাবল হিসেবেও কাজ করতে হয়েছে জিতেন্দ্রকে।
কেরিয়ারের প্রথম দিকে রীতিমতো কাঠখড় পোড়াতে হলেও ১৯৬৭ সালে কপাল খুলে যায় জিতেন্দ্রর। তত দিনে তিন তিনটে ফিল্মে অভিনয় করে ফেলেছেন। তবে তেমন চোখে পড়েননি। ’৬৭-তে বক্স অফিসে এল ‘ফর্জ’। তাতেই কেল্লাফতে করলেন জিতেন্দ্র।
ববিতার সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘ফর্জ’-এ নায়ক। গুপ্তচরের রোল। তবে ফিল্মের একটি গানে একেবারে সাড়া ফেলে দিলেন জিতেন্দ্র।
জিতুর লিপে ‘মস্ত বাহারোঁ কা ম্যায় আশিক’ গানটি সুপারডুপার হিট। সেই সঙ্গে হিট হল ফিল্মও। নজর কাড়লেন জিতেন্দ্র। সেই সঙ্গে ওই গানের সময় পরা তাঁর টাইট সাদা ট্রাউজারও। ওই গানে অবশ্য সাদা নয়, লাল টি-শার্ট পরেছিলেন জাম্পিং জ্যাক।
‘ফর্জ’ সুপারহিট হওয়ার পর জিতেন্দ্রর কেরিয়ারের মোড় ঘুরে যায়। এর পর তাঁর প্রায় প্রতিটি ফিল্মেই সাদা পোশাকে নাচগানের দৃশ্য থাকত। সে সব গানই সুপারহিট। ‘ঢল গ্যায় দিন, হো গয়ি শাম’, ‘নয়নো মে সপনা’, ‘তাকি ও তাকি’ থেকে শুরু করে শ্রীদেবীর সঙ্গে জুটিতে ‘তোফা তোফা’— একের পর এক ফিল্মি গানে জিতেন্দ্রকে দেখা গিয়েছে পুরোপুরি সাদা পোশাকে। গান তো বটেই সুপারহিট জিতেন্দ্রর ডান্সিং স্টাইলও। ‘জাম্পিং জ্যাক’ জিতেন্দ্র তকমাটা সে সময়ই তাঁর পাওয়া।
তবে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, বলিউডে তাঁর আসল নামটা কখনই ব্যবহার করেননি জিতেন্দ্র। তাঁর কথায়, “যতীন খন্না এবং আমি, দু’জনেই রুপোলি পর্দায় নামবদল করেছিলাম। যতীনকে লোকজন চেনে রাজেশ খন্না বলে। আর রবি কপূর থেকে আমি হয়ে গিয়েছিলাম জিতেন্দ্র! আর একটা কথা জানেন কি? আমরা দু’জনেই স্কুলের বন্ধু ছিলাম।”
সাদা পোশাকে শুরুটা কী ভাবে হয়েছিল, সে কথা তো জানালেন জিতেন্দ্র। তবে তাতে প্রায় সব ফিল্মেই পরার রহস্যটা কী? জিতেন্দ্র বলেন, “রংবেরঙের পোশাক পরলে আমাকে খুব বেঁটে দেখাত।”
শুধুমাত্র বেঁটে দেখাত বলেই কি ফিল্মে সাদা পোশাক পরতে শুরু করেন জিতেন্দ্র। না! এর আরও একটা কারণ রয়েছে।
জিতেন্দ্র তাঁর সাদা পোশাক পরা নিয়ে জানিয়েছেন, ফিটনেসও একটা কারণ। পোশাকের সঙ্গে ফিটনেস! সেটা কী ভাবে হয়? জিতেন্দ্র বলেন, “অনেকেই স্লিমট্রিম দেখানোর জন্য কালো পোশাক পরেন। তবে সাদা পোশাক পরাটা একটা চ্যালেঞ্জ।”
সাদা পোশাকের চ্যালেঞ্জ কেন? সে কথাও খোলসা করেছেন জিতেন্দ্র। তাঁর কথায়, “পুরোপুরি সাদা পোশাক পরলে সব সময় মনে রাখতে হয়, নিজেকে ফিট দেখাতে হবে। তাই নিজের ফিটনেস ঠিক রাখার জন্যও চ্যালেঞ্জ হিসেবে সাদা পোশাক পরতাম।”
নিজের সঙ্গে ফিটনেসের চ্যালেঞ্জটা জিতেন্দ্র নিয়েছেন। এবং বেশ ভাল রকম ভাবেই। ৭৮ বছর বয়সেও তাঁকে সাদা পোশাকে দেখা যায়। তেমনই ফিট, তেমনই সুদর্শন।
বলিউডি পর্দায় শুধুমাত্র জিতেন্দ্রই যে পুরোপুরি সাদা পোশাক পরে নাচগান করেছেন, তেমনটা কিন্তু নয়। জিতেন্দ্র ছাড়াও মিঠুন চক্রবর্তীকে দেখা গিয়েছে পুরোপুরি সাদা পোশাকে। তবে জিতেন্দ্রর মতো এত দীর্ঘ সময় তার ‘সাদা ইমেজ’ ধরে রাখেননি আর কোনও অভিনেতা! ছবি: সংগৃহীত।