অনির্বাণ ভট্টাচার্য এবং শঙ্কর দেবনাথ।
ধাঁধা নয়! অনির্বাণ ভট্টাচার্যের প্রথম পরিচালনা আপাতত এই প্রশ্নই তুলে দিয়েছে। এমন ধাঁধা আরও আছে। যার জেরে প্রচারের আলোয় উঠে এসেছেন এমন এক দল অভিনেতা যাঁরা মঞ্চ এবং পর্দায় সমান দক্ষ হয়েও এত দিন পিছনের সারিতে ছিলেন। তাঁদেরই অন্যতম শঙ্কর দেবনাথ। সংবাদমাধ্যম যখন ‘ম্যাকবেথ’-এর সার্থক নব্য সংস্করণ ‘মন্দার’-এর তিন ডাইনির প্রশংসায় পঞ্চমুখ তখন দূরে দাঁড়িয়ে গোটা বিষয় উপভোগ করছেন শঙ্কর। সিরিজে যিনি ‘লর্ড ব্যাঙ্কো’ ওরফে ‘বঙ্কা’!
শঙ্করের বক্তব্য শোনার আগে তাঁর পূর্ব পরিচয় প্রয়োজন। শঙ্কর দেবনাথের ঝুলিতে রয়েছে ‘আকাশ অংশত মেঘলা’, ধারাবাহিক ‘কালী’, হরনাথ চক্রবর্তীর ‘চলো পাল্টাই’, ‘ভূত চতুর্দশী’, ‘ন হন্যতে’, ধারাবাহিক ‘কাদের কুলের বউ’, ‘হার্বার্ট’, ‘আবর্ত’, পাভেলের ‘কলকাতা চলন্তিকা’ এবং ‘মন খারাপ’-এর মতো ছবি। নিজে পরিচালনা করেছেন ‘পাকারাম’।
পর্দায় তিনি প্রথমে ভেড়ি মাফিয়া মন্দারের বন্ধু। পরে তিনিই তিন ডাইনির সহযোগী। নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে যাকে খুন করবে মন্দার। শুরুতে আনন্দবাজার অনলাইন যখন তাঁকে যোগাযোগ করেছে তখন তিনি আর পাঁচজনের মতোই অটোযাত্রী! অনির্বাণের কথা উঠতেই উচ্ছ্বসিত শঙ্কর, ‘‘ছেলেটি নিঃসন্দেহে মেধাবী অভিনেতা। তার থেকেও শত গুণ ভাল পরিচালক। ওর দেখার দৃষ্টি রয়েছে। প্রথম কাজেই দর্শকদের স্বাদ বদলে দিয়েছে। আমি অভিনেতার থেকেও পরিচালক অনির্বাণকে এগিয়ে রাখব। চাইব, ও শুধু পরিচালনা নিয়েই থাকুক।’’
‘মন্দার’ নিয়ে এটাই ছিল ‘বঙ্কা’ ওরফে শঙ্করের প্রথম কথা।
এই উদ্দীপনা তাঁর শুরু থেকেই। অভিনেতা জানিয়েছেন, অনির্বাণ তাঁকে চিত্রনাট্য শোনানোর পরেই তিনি নির্দ্বিধায় রাজি হয়ে যান। টানা তারিখ দেন অনির্বাণকে। এবং এই একটি কাজের সঙ্গে তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন। কিসের তাগিদে?
প্রথম দিন থেকে চিত্রনাট্য তাঁকে টেনেছিল। মনে হয়েছিল, এত দিনের সহ-অভিনেতার পাশে দাঁড়ানো দরকার। কারণ, অনির্বাণ পরিচালনার মাধ্যমে বাংলা বিনোদন দুনিয়ায় পালাবদল ঘটাতে চলেছেন। এবং কাজ করতে করতে তিনি দেখেছেন, কী ভাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অভিনেতা-পরিচালক চিত্রনাট্য ঠোঁটস্থ রেখেছিলেন! ফলে, যেমন শুরু থেকে শেষ কোনও বদল ঘটেনি চিত্রনাট্যে।
শঙ্কর এর আগেও সিরিজে অভিনয় করেছেন। অনির্বাণের সিরিজে কাজ করতে গিয়ে তাঁর বিশেষ কোনও অভিজ্ঞতা? সাফ জবাব তাঁর, ‘‘আমরা কেউই একে সিরিজ হিসেবে দেখিনি। আমাদের কাছে ‘মন্দার’ বড় পর্দার ছবি। সে ভাবেই আমরা কাজ করেছি। দর্শকদের জন্য এটিকে পাঁচটি পর্বে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ফলে, বড় এবং ছোট পর্দায় কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকায় আলাদা কোনও অনুভূতি হয়নি।’’ তাঁর দাবি তিনি একা নন, প্রায় প্রত্যেক অভিনেতাই মঞ্চের পাশাপাশি ছোট, বড় পর্দা, সিরিজে কাজ করেছেন বা নিয়মিত করেন। যেমন, তিন ডাইনির এক জন ‘পেদো’ ওরফে সুদীপ শুভম ধাড়াকে দেখা গিয়েছিল ‘মন্টু পাইলট’ সিরিজে। সজল মণ্ডল ওরফে ‘মঞ্জু বুড়ি’শ্যামল কর্মকারের ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন। দেবাশিস মণ্ডল ওরফে ‘মন্দার’ দিল্লিতে নিয়মিত অভিনয় করেন।
তার পরেও কেন তাঁরা এত দিন প্রচার থেকে দূরে? ‘মন্দার’-এ অভিনয় করার পরেই সবাই এক সঙ্গে জনপ্রিয়।
শঙ্করের গলায় তৃপ্তি, ‘‘এত দিন ধরে পরিচালকেরা দর্শকদের একঘেয়ে শহরের ছবি দেখিয়ে ক্লান্ত করে দিয়েছিলেন। অনির্বাণ সেখানে মাটির গন্ধ ছড়িয়ে দিয়েছে। হাতেগোনা কিছু অভিনেতার মুখ দেখতে দেখতে সবার চোখ, মন বিরক্ত। কিন্তু বাজার হারানোর ভয়ে কেউ অন্য কিছু ভাবতেই ভয় পান! অনির্বাণ সেই সাহসও দেখিয়েছেন।’’
রাজ পরিবার বা অভিজাত বংশের কথা নয়, একুশ শতক মানুষের গল্প শুনতে চায়। ‘মন্দার’ এর অভিনেতার দল এক জোট হয়ে দেখিয়ে দিলেন, শহর এখনও মাটি সোঁদা গন্ধ পেলে আর কিচ্ছু চায় না।