দিতিপ্রিয়া রায়। ছবি-সংগৃহীত
রানি রাসমণির ‘পরীক্ষা’! গল্পে তো তিনি পরীক্ষা দিতে দিতেই এগোচ্ছেন। নিম্নবর্গের এক নারী এবং বিধবা। তাঁর যে কোনও মঙ্গলসূচক কাজেই তাই বাধার প্রাচীর। উচ্চবর্ণের মানুষেরা, বিশেষত ব্রাহ্মণরা প্রবল প্রতিপক্ষ তাঁর। এ তো গেল গল্পের রানির পরীক্ষা। কিন্তু বাস্তবে পরীক্ষা চলছে দিতিপ্রিয়ার। পরীক্ষা চললে কী হবে? শুটিং তো থেমে নেই।কীভাবে সামলাচ্ছেন তিনি পরীক্ষা ও শুটিং?টিমের সদস্যরাই বা কীভাবে তাঁকে সহযোগিতা করছেন?
এই মুহূর্তে ‘রানি রাসমণি’-র ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রূপক দে বলছেন, “সেটা দু’দিক থেকেই ম্যানেজ করা হয়। বেসিক্যালি ও আগেও এই সিচুয়েশনের মধ্য দিয়ে গেছে এবং দিতিপ্রিয়া দুটোকে সুন্দরভাবে ম্যানেজ করে। মানে ও ফার্স্ট হাফে পরীক্ষা দেয়, পরীক্ষা দিয়ে এসে আমাদের এখানে শুটিং করে। শুটিং শেষে আবার বাড়ি গিয়ে পড়াশোনা করে। পরের দিন পরীক্ষা না থাকলে প্রথমেই ফ্লোরে চলে এসে অনেকটা শুটিং করে দেয়। পরীক্ষার আগের দিন ওকে আমরা তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। সব সময় যে পারি তা নয়, অ্যাটলিস্ট চেষ্টা করি। দু’তরফেই অ্যাডজাস্টমেন্ট করা হয়। কিন্তু আমি বলব, ক্রেডিট গোজ টু দিতিপ্রিয়া। দুটোকে সুন্দরভাবে ব্যালান্স করে।”
আর কী বলছেন দিতিপ্রিয়া?তাঁর কথায়: “শুটিং এবং পরীক্ষা, পড়াশোনা সামলাচ্ছি, যেরকম অ্যাজ ইউজুয়াল আমি সামলাই। ক্লাস টেন-এও সামলেছি। এ বছর তো ক্লাস টুয়েলভের বোর্ড। এখন প্রি টেস্ট চলছে। তো শুটিং করে সারারাত ধরে পড়ে পরের দিন সকালবেলা পরীক্ষা দেওয়া আরকি। এইভাবেই চলছে।”
আরও পড়ুন- বন্ধ হয়ে গেল কপূর পরিবারের সত্তর বছরের গণেশ পুজো!
এ ভাবেই তিনি বরাবর অভিনয় ও পড়াশোনা চালিয়ে যান। কিন্তু অনেকেই অভিনয় করতে গিয়ে পড়াশোনা চালানোর সময় বা চাপ নিয়ে উঠতে পারেন না। অন্যদিকে শুটিং ইউনিট থেকেও সবসময় সহযোগিতা পাওয়া যায় না, কারণ এপিসোড ব্যাঙ্কিং-এরও চাপ থাকে। কিন্তু দিতিপ্রিয়া সেদিক থেকে বরাবর সহযোগিতা পেয়ে আসছেন।
দিতিপ্রিয়ার সহ-অভিনেতা রোশনি ভট্টাচার্য, যিনি রানির মেয়ে জগদম্বার চরিত্রে অভিনয় করছেন,তাঁকেও বেশ চাপ নিয়েই সামলাতে হয়েছে অভিনয় ও পড়াশোনা। তিনি তাই দিতিপ্রিয়ার পরিস্থিতি বুঝতে পারেন।
অন্য লুকে দিতিপ্রিয়া
দিতিপ্রিয়ার পরীক্ষা চলাকালীন ঠিক কী হয়? তিনি শেয়ার করলেন, “তখন দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে আমার ফ্লোরেই দেখা হয়। কারণও সব সময় ফ্লোরে থাকে না আর আমরাও ওকে খুব একটা ডিস্টার্ব করি না। বিকজ মোস্ট অব দ্য টাইম ও মেকআপ রুমে বসে পড়াশোনা করে। ওর যখন পরীক্ষা থাকে তখন আমরা সিন করি, ও পরে এসে সিন করে দেয়।ওরকম করে সিনগুলো শুট হয়। তো... হ্যাঁ, অবভিয়াসলি ওর সঙ্গে সবাই খুবই কোঅপারেট করে। এত বছর তো হয়ে গেল ও এই সিরিয়ালটা করছে। তো... ও ম্যানেজ করে নিচ্ছে।”
দিতিপ্রিয়ার এই এফোর্ট কেমন লাগে? রোশনি যোগ করলেন, “আমার মনে আছে যে আমার গ্র্যাজুয়েশনের শেষের দিকে আই স্টার্টেড ওয়ার্কিং ইন আ সিরিয়াল অ্যাজ আ লিড। আমি বুঝতে পারি, কোন প্রেশারের মধ্য দিয়ে দিতিপ্রিয়া যাচ্ছে। আমার এরকমও দিন গেছে... যেহেতু আমি জেভিয়ার্সে পড়াশোনা করতাম এবং আমাদের অ্যাটেন্ডান্সের খুব কড়াকড়ি... মানে আমাকে একটা সিনের গ্যাপ দিয়েছে যাতে আমি জাস্ট একখানা ক্লাস করতে পারি। মানে... মেকআপ চেঞ্জ করার, কস্টিউম চেঞ্জ করার কোনও সময় থাকত না। ওইভাবেই আমি কলেজে চলে যেতাম... মেট্রো করে হোক, যেভাবেই হোক। একটাক্লাস করে আবার শুটিংয়ে ফিরতাম। আমি বুঝতে পারি, ওর সিচুয়েশন। ও জানে যে এটা ওর ফার্স্ট গেটওয়ে টু আউটসাইড। মানে আফটার দিস তো কলেজ। আমি অনেককেই দেখেছি যারা এই প্রফেশনে আসার পর পড়াশোনাটাকে অনেকটাই নেগলেক্ট করে। দিতিপ্রিয়া সেটা একেবারেই করে না। সো আই অ্যাম ভেরি ভেরি প্রাউড অফ হার।”
আরও পড়ুন- মানসিক অবসাদে মুম্বইয়ে আত্মঘাতী উঠতি অভিনেত্রী
গত ২৭ অগস্ট পরীক্ষা শেষ হয়েছে দিতিপ্রিয়ার। তার মধ্যে বকেয়া পারিশ্রমিকএবং টিডিএস-এর জটিলতায় ‘রানি রাসমণি’র শুটিং বন্ধ হয়েছে। বকেয়া মেটানোর আশ্বাস পেয়ে বৃহস্পতিবার থেকে আবার শুরু হয়েছে ‘রাসমণি’-র শুটিং। সকাল ১০টায় ‘কল টাইম’ পেয়ে শুটিং ফ্লোরে এসেছেন দিতিপ্রিয়া। রানির নাতি ভূপালের বিবাহ পরবর্তী দৃশ্যাবলীর শুটিংও করেছেন।
অভিনয় ও শুটিং পাশাপাশি চালিয়ে দিতিপ্রিয়া প্রমাণ করে দিচ্ছেন, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়!