রাজ চক্রবর্তী
প্র: কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারম্যান হওয়ার পরেই প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। নেহাত সৌজন্য, না কি অন্য কারণও আছে?
উ: একটাই কারণে গিয়েছিলাম। ওই মানুষটা সকলকে নিয়ে চলতে ভালবাসে। বিপদআপদে সবচেয়ে আগে এগিয়ে আসে। একটা গুরুদায়িত্ব পেয়ে ওর সঙ্গে দেখা করার কথাটাই প্রথম মাথায় এসেছিল। বোঝার চেষ্টা করেছিলাম, মান-অভিমানের জায়গাটা কোথায়।
প্র: বুঝতে পারলেন, প্রসেনজিৎকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানোর আসল কারণটা?
উ: এ ব্যাপারে বিন্দুবিসর্গও জানি না। এটুকু বলতে পারি, চেয়ারম্যান হিসেবে আমি কোনও ভেদাভেদ রাখব না। এই কাজটা সামলানোর জন্য বুম্বাদাকে আমাদের প্রয়োজন।
প্র: আপনার চেয়ারম্যান হওয়া নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির মধ্যেই তো নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে...
উ: যে দিন থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছি, বিরোধিতা সামলেছি। চলচ্চিত্র উৎসবে আমাকে কেউ দেখতে আসবে না। সকলে সিনেমা দেখতে আসবে।
প্র: আন্তর্জাতিক সিনেমা নিয়ে রাজ চক্রবর্তী কতটা ওয়াকিবহাল, এই প্রশ্ন কিন্তু আপনার ইন্ডাস্ট্রির অন্দরেই ঘুরছে...
উ: এটা নিয়ে আমাকে পরীক্ষা দিতে হবে? কারা পরীক্ষা নেবেন সামনে আসুন। বিশ্ব সিনেমা নিয়ে আমার জ্ঞান যাঁরা জানতে চাইছেন, তাঁদের জ্ঞানের বহরটা জানার ইচ্ছে আমারও আছে। একটা জিনিস বলতে চাই, ফেস্টিভ্যাল সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত কিন্তু রাজ চক্রবর্তী নেবে না। আমাদের শেষ মিটিংয়ে গৌতম ঘোষ ছিলেন। তাঁর বিশ্ব সিনেমা সংক্রান্ত জ্ঞান নিয়ে নিশ্চয়ই কারও সন্দেহ নেই! মাধবী মুখোপাধ্যায়, সন্দীপ রায়, রঞ্জিত মল্লিক, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল ছিলেন। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। আর কাকে রাখলে এই ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল বিশ্বমানের হবে বলে মনে হয়? কারও সাজেশন থাকলে প্লিজ় জানাবেন।
প্র: এর আগেও প্রযোজনা করেছেন। কিন্তু ‘পরিণীতা’র ডিস্ট্রিবিউশন, মার্কেটিং সবটা নিজে করলেন। আগে অন্যদের রিলিজ়ের দায়িত্ব দিয়ে পস্তেছেন বলে?
উ: না, শেখার জন্য। নিজের মতো ছবি বানাতে চাইলে সব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। অন্য কারও উপরে নির্ভর করলে তাঁর মতে চলতে হবে।
প্র: ‘পরিণীতা’ মূলত মাল্টিপ্লেক্সে রিলিজ় করছে। অথচ আপনার উত্থানের পিছনে সিঙ্গল স্ক্রিনের দর্শকের অনেকটা অবদান। যে ঘরানার ছবি বানাতেন, সেখান থেকে কি সরে আসতে চাইছেন?
উ: গত ন’-দশ বছরে দর্শকের মানসিকতা, ছবি দেখার ধরন বদলে গিয়েছে। আগে ওয়েবের এত দাপট ছিল না। আইডিয়া, এগজ়িকিউশনে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। দর্শক কিন্তু ভাল জিনিস দেখার জন্য বসে রয়েছেন। ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘প্রেম আমার’ এখন আনলে চলবে না। বরং ‘লে ছক্কা’, ‘বোঝে না সে বোঝে না’ একটু ঘুরিয়ে অন্য ভাবে প্রেজ়েন্ট করা যায়। কমার্শিয়াল সিনেমা বানানো খুব কঠিন হয়ে গিয়েছে এখন। অনেক কিছু মাথায় রাখাতে হয়।
প্র: ‘শেষ থেকে শুরু’ কেন চলল না বলে মনে হয়?
উ: হ্যাঁ ছবিটা চলেনি। তবে যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের ভাল লেগেছে।
প্র: দর্শক তো দেখতেই গেলেন না?
উ: সেটাই তো। মানুষ আগেই ধরে নিয়েছে, নিশ্চয়ই খারাপ হবে। তার পর ভেবেছে, এক-দেড় মাসের মধ্যে টিভিতে তো দিয়েই দেবে। হিন্দিতে পরের পর রিমেক ছবি হয়ে যাচ্ছে। সেগুলো নিয়ে কত হইচই! ‘কবীর সিং’ ছবিটির কথাই ধরুন। সব দোষ বাংলার বেলায়? এই যে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল নিয়ে আমার এত সমালোচনা হচ্ছে, তাতে আমি অবাক হইনি। যাঁরা সমালোচনা করছেন তাঁরা জানেনই না আমি কেমন, কী করি! আমার জ্ঞান কম থাকতে পারে, সাহসের অভাব নেই। শেখায় অনীহা নেই। না জানলে শিখে নেব। (একটু উত্তেজিত হয়ে) আমার ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুদের জন্য একটাই কথা, যা বলার সামনে এসে বলো। আড়াল থেকে নয়। আমি জানি আমি কী ডিজ়ার্ভ করি। আমি জানি আমি কী অ্যাচিভ করতে চাই। কাউকে ছোট করে দেখবেন না। কাউকে আন্ডার এস্টিমেট করবেন না। সময় ঘুরতে সময় লাগে না...