Parambrata Chattyopadhyay

দেশে কেন্দ্রীয় সরকার বলে আদৌ কিছু আছে! চারপাশ দেখে প্রশ্ন অভিনেতা পরমব্রতর 

‘‘টানা যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের সঙ্গে। তাঁরা ২৪ ঘণ্টা জেগে কাজ করছেন!’’ প্রশংসায় অভিনেতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২১ ১১:৫৭
Share:

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়

‘হেডস’, ‘বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ’ এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা মিলে শুরু করেছেন ‘সিটিজেন্স রেসপন্স’। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন চিকিৎসক দল, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন পূর্ণব্রত গুণ। পাটুলিতে একটি ক্লাবে সেই সব রোগীকে আনা হচ্ছে, যাঁদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকছে না। যত ক্ষণ না হাসপাতালে শয্যা পাওয়া যাচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁদের অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে সেখানে। উদ্যোগে রয়েছেন অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনুপম রায়, পিয়া চক্রবর্তী, তন্ময় ঘোষ, ঋদ্ধি সেন এবং ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়। অতিমারি প্রসঙ্গে পরমব্রতর সঙ্গে কথা বলল আনন্দবাজার ডিজিটাল।

Advertisement

প্রশ্ন: স্বাস্থ্য দফতরের উপর তো খুব চাপ এখন। অনেক সময় ফোনে যোগাযোগ করতে করতে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে…

পরমব্রত: গত ১৫ দিন ধরে কাজ করছি। টানা যোগাযোগ রেখেছি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের সঙ্গে। সেখানকার চিত্রটা জানি। তাঁরা যে ভাবে ২৪ ঘণ্টা জেগে রয়েছেন, তা অভাবনীয়। সবাই সবার মতো করে চেষ্টা করছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে শুরু করে ব্যক্তি মানুষ। রাজ্য সরকার থেকে বিশিষ্টজন।

Advertisement

প্রশ্ন: এত খারাপ সময়ের জন্য দায়ী কে?

পরমব্রত: সমস্যাটা হল, গোটা দেশে অক্সিজেনের ঘাটতি রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও পরিকল্পনা চাক্ষুষ করতে পারিনি। খারাপ সময়ের জন্য একটা দেশে যথেষ্ট অক্সিজেন মজুত করা নেই! ভাবা যায়? খারাপ পরিস্থিতি কেবল বাংলায় নয়। দিল্লিতেও তাই, মহারাষ্ট্রেও। উত্তরপ্রদেশ কিংবা কর্নাটকেও। তবু তো আমি বলব রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল নিজেরাই যতটা সম্ভব করছে। তাদের সাহায্য করতে তাই সকলের এগিয়ে আসা উচিত। গাফিলতি যে জাতীয় স্তরে, তা আমরা সকলেই জানি। উত্তরপ্রদেশে রাস্তায় শবদেহ পোড়ানো হচ্ছে। সেটা যাতে আমাদের এখানে না হয়, বা কম হয়, সেটার জন্যই প্রত্যেকে খাটছি।

প্রশ্ন: ভোটের পরে কয়েক জন নেটগরিকের দাবি, ভোট দেয়নি কেউ, তাই রেড ভলান্টিয়ারদের আর সেবা করা উচিত নয় কাউকে…

পরমব্রত: নির্বাচনের পরে এ সব তো হবেই। কিন্তু সেটা দেখার সময় এটা নয়। রেড ভলান্টিয়াররা কাজ করছেন নিঃসন্দেহে। তবে এখন যা অবস্থা, গাফিলতি তো থাকবেই। দু’এক জায়গায় দেখেছি কিছু নম্বর কাজ করে না। আবার এমন নজিরও আছে, তাঁরা চমৎকার কাজ করছেন। অনেক জায়গায় যদিও স্বেচ্ছাসেবীদের আটকানো হয়েছে বলা হচ্ছিল। যেই করে থাকুন, সেটা নিন্দনীয়। কিন্তু এখন রাজনীতি, পাল্টা রাজনীতি করাটা কাম্য নয়। ভোট দেয়নি বলে কাজ করব না বা ভোটে হেরেছে বলে কাজ করতে দেব না, কোনওটাই ঠিক নয়।

প্রশ্ন: কালোবাজারি নিয়ে চারদিক থেকে অভিযোগ আসছে। এর জন্য পদক্ষেপ করছে না কেন কোনও সরকার?

পরমব্রত: পদক্ষেপ তো করছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কালোবাজারি চলবে‌ই। আমাদের দেশের অমোঘ সত্য এটা। দিল্লিতে সাড়ে তিন লক্ষ টাকায় একটি রেমডেসিভির বিক্রি হচ্ছে। এখানেই আমার প্রশ্ন, দেশে কেন্দ্রীয় সরকার বলে কিছু আছে কি আদৌ? আমি জানি না। তারা তো মোটামুটি বলে দিয়েছে যে রাজ্যগুলিকে বুঝে নিতে হবে। তাদের তরফ থেকে না আছে কোনও উচ্চপদস্থ বৈঠকের ফলাফল, না আছে পরিকল্পনা। বরং রাজ্যগুলিই চেষ্টা করছে। কিন্তু এখন কালোবাজারি আটকাতে সময় নষ্ট করবে নাকি মানুষের প্রাণ বাঁচাবে! নিজেদের চেষ্টা করতে হবে, কালোবাজারি এড়িয়ে চলতে।

প্রশ্ন: কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কী কী গাফিলতির কথা বলছেন আপনি?

পরমব্রত: কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিরা তো টানা এখানে এলেন, গেলেন। তাঁদেরই জিজ্ঞেস করা যাক না। আমি শুনতে চাই তাঁদের যুক্তি।

প্রশ্ন: কঙ্গনার মতো অনেকেই বলছেন, এই ভাইরাস ততটাও ভয়াবহ নয়। বাড়াবাড়ি করছে মানুষ…

পরমব্রত: গত ১০-১৫ দিনে অনেকে কাছের মানুষকে হারিয়েছেন। আমিও। তাই কেউ যদি বলেন, শুধু শুধু আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে, সেটা মেনে নিতে পারছি না। যে পরিমাণ রোগীর ফোন আসছে, তাতে পরিস্থিতিটা টের পাচ্ছি। যাঁরা এই কথা বলছেন, তাঁরা সেই মানুষগুলোর মতোই মূর্খ, যাঁরা এই সময়ে ‌ধর্মীয় জমায়েতে অনুমতি দিচ্ছেন। তাঁদের নিয়ে ভাবার সময় নেই আমার।

প্রশ্ন: নিজের নম্বর দিচ্ছেন নেটমাধ্যমে, কাঞ্চন মল্লিকের মতো অকথ্য ভাষায় মেসেজ আসছে না তো?

পরমব্রত: আমি অনেকের ফোন ধরছি। গত ১০ দিনে অন্তত ২৫ জনকে নিজে থেকে ফোন করে শয্যা এবং অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেছি। কখনও অসুবিধা হয়নি। সাধারণ মানুষ এতই অসহায় যে, কেউ অন্য রকম প্রতিক্রিয় দেখাচ্ছেন না। কাঞ্চনদার মতো ঘটনা ঘটেনি। ঘটবেও না হয়তো। কাঞ্চনদার সঙ্গে এ রকম হওয়ার কারণ কেবল মাত্র রাজনীতি। তবে এ কথাটা বলতেই হয়, আমার রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কেও মানুষ এখন অবগত। কেউ যদি মনে করেন, নেটমাধ্যমে আমার নম্বর ছড়িয়ে দেবেন। যাতে আমাকে রাজনৈতিক আক্রমণ করার জন্য, সেটা অন্য ব্যাপার। এখনও সে রকম কিছু হয়নি। শুধু আমি কেন, রাজদাও তো কত জনকে ফোন করছেন।

প্রশ্ন: স্বাস্থ্য দফতর হোক বা হাসপাতাল, আপনি পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেই কি একটু সহজ হচ্ছে কাজ করতে?

পরমব্রত: সে তো বটেই। নিজের জায়গাটাকে ব্যবহার করতে জানতে হবে। এখন সাধারণ মানুষের জন্য নাম ব্যবহার করব না তো কখন করব?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement