কোয়েল মল্লিক।
প্র: এই নিয়ে পরপর তিন বছর পুজোয় আপনার ছবি মুক্তি পাচ্ছে। দেব, জিতের সঙ্গে বক্স অফিসের লড়াই কতটা জমবে এ বার?
উ: মন থেকে চাই, ‘বনি’র পাশাপাশি বাকি সবক’টা ছবিও যেন ভাল চলে। অতিমারিতে পুজো রিলিজ় কেমন হতে পারে, সে অভিজ্ঞতা গত পুজোয় ‘রক্ত রহস্য’র সময়েই হয়ে গিয়েছিল। ভালই চলেছিল ছবিটা। সেকেন্ড ওয়েভের সময়ে মুক্তি পেয়েছিল ‘ফ্লাইওভার’। তাই ধাক্কাগুলো ইতিমধ্যে সয়ে গিয়েছে (হাসি)! তবে পুজোয় ছবিমুক্তি সব সময়েই পেট গুড়গুড়, আলাদা একটা নস্ট্যালজিয়া বয়ে আনে। ছোটবেলায় মেজমা’র হাত ধরে ভাইবোনেরা মিলে পুজোর দুপুরে সিনেমা দেখতে যাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়।
প্র: পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কী রকম?
উ: ‘হাইওয়ে’ ছবিতে ওর পরিচালনায় একটা প্রোমোশনাল মিউজ়িক ভিডিয়োয় কাজ করেছিলাম। তা ছাড়া ছবির শুটের সময়েও দেখতাম, পরমব্রতর নানা পরামর্শে দৃশ্যগুলো আরও ভাল হয়ে যাচ্ছে। ওর পরিচালিত ‘হাওয়া বদল’, ‘সোনার পাহাড়’ আমার খুব পছন্দের। তবে ‘বনি’র সেটে পরমব্রতকে দেখে মাঝে মাঝে ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’-এর বোমান ইরানির চরিত্রটা মনে পড়ে যেত! রেগে গেলে যেমন প্রবল হাসত সেই চরিত্রটা, ঠিক তেমনই শুটিং চলাকালীন কখনও মাথা গরম হলে পরমও হেসে হেসে, বিনয়ের সঙ্গে খুব কঠিন কিছু কথা শোনাত (হাসি)! জোকস অ্যাপার্ট, ওর পরিচালনায় কাজ করে অসম্ভব ভাল লেগেছে।
প্র: শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কাহিনি ‘বনি’ অবলম্বনে ছবি, যে গল্পে একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে মাতৃত্ব। ‘রক্ত রহস্য’-এর কাহিনিও ছিল সারোগেসি ও মাতৃত্বকেন্দ্রিক। আপনি নিজেও মা হয়েছেন গত বছর। চরিত্রগুলির সঙ্গে নিজেকে কতটা রিলেট করেছেন?
উ: আমি ব্যক্তিগত ভাবে খুবই আবেগপ্রবণ। ক্যামেরার সামনে যদি নিজের আবেগকে বশে রাখতে না পারি, বেশ মুশকিল হয়ে যায়। মাতৃত্ব এমন একটা উপলব্ধি, যা পৃথিবীর সব মেয়েদের ভিতরেই নিহিত থাকে, সে সন্তানের জন্ম দিক বা না দিক। ‘বনি’তে আমার চরিত্র প্রতিভা অনেক দিন অপেক্ষার পরে সন্তানের জন্ম দেয়। তার পর জানতে পারে বাচ্চাটি ‘স্বাভাবিক’ নয় সেই অর্থে। তার দুনিয়াটা চুরমার হয়ে যায়। ওই দৃশ্যটা করার সময়ে সত্যিই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। আর শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় সৃষ্ট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়াটাই আমার কাছে অত্যন্ত সম্মানের।
প্র: নতুন ছবির শুটিং এখনও শুরু করেননি। আগামী পরিকল্পনা কী?
উ: তাড়াহুড়ো করতে চাই না। এই বিরতিটা সচেতন ভাবেই নেওয়া। ছেলে বড় হয়ে ওঠার প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করতে চেয়েছিলাম। ওর প্রথম কথা বলতে শেখা, হাঁটতে শেখা— এগুলো মিস করতে চাইনি। কারণ এই মুহূর্তগুলো আর ফিরে আসবে না। এখন তো খুবই কথা বলতে শিখেছে। শুধু খেলনা দিয়ে আর বসিয়ে রাখা যায় না। জিনিস হাতে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়। হাত থেকে সেটা নিয়ে নিলেও ঠিক খুঁজে বার করে। আমরা বোকা বনে যাই! এর মধ্যেই টেলিভিশন রিয়্যালিটি শোয়ের শুটিং করেছি। এর পরে একটা থ্রিলার ও রোম্যান্টিক কমেডি ছবি করার কথা এগিয়েছে, তবে সেগুলির চিত্রনাট্য চূড়ান্ত নয়।
প্র: সুরিন্দর ফিল্মসের একগুচ্ছ ছবি মুক্তির অপেক্ষায়। সিনেমা হলের বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী সেগুলি রিলিজ়ের কী পরিকল্পনা?
উ: এই ব্যাপারটা পুরোটাই রানে (নিসপাল সিংহ, স্বামী) সামলায়। বাংলা ছবির বাজারেরও ভীষণ ক্ষতি করেছে অতিমারি। পরিস্থিতি একটু ভাল হলেই একে একে রিলিজ় করার পরিকল্পনা আছে।
প্র: ‘বনি’র ট্রেলারে কাঞ্চন মল্লিক, পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায়কে জুটি হিসেবে দেখা গিয়েছে। ওঁদের দাম্পত্য নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক কি ছবিতে আঁচ ফেলতে পারে?
উ: ওঁদের ব্যক্তিগত পরিসরে ঢুকে মন্তব্য করা কখনওই উচিত হবে না। তবে এটুকু বলতে পারি, দর্শক ছবিটা দেখার সময়ে ওঁদের চরিত্র হিসেবেই দেখবেন। ওঁদের ব্যক্তিগত জীবন দিয়ে বিচার করবেন না।
প্র: অভিনেত্রী নুসরত জাহানের মা হওয়া নিয়েও সম্প্রতি কম বিতর্ক হয়নি। নিজে একজন মা হিসেবে কী ভাবে দেখেছেন বিষয়টি?
উ: নুসরত যখন মা হয়েছিল, ওকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, একজন মা যখন সন্তানের জন্ম দেন, তাঁকে ঘিরে একটা পজ়িটিভিটি থাকা দরকার। ও নিজের জীবনে যেটা ঠিক বলে মনে করেছে, সেটাই করেছে। তার ফলাফলের মুখোমুখি ওকেই হতে হবে, অন্য কাউকে নয়। তাই বাইরে থেকে মন্তব্য করাটাও এ ক্ষেত্রে একেবারেই অনুচিত। নুসরতকে পরামর্শ দেওয়ার অধিকার তাঁদেরই রয়েছে, যাঁরা জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে ওর পাশে থাকেন, যাঁরা ওর সত্যিকারের শুভাকাঙ্ক্ষী। কোনও দায়িত্ব ছাড়াই বাইরে থেকে উপদেশ দিয়ে চলে যাওয়া খুব সহজ। কারও মূল্যবোধ বা আদর্শের সঙ্গে আমার না-ই মিলতে পারে, কিন্তু সেটা নিয়ে বিচার বা মন্তব্য করার কোনও অধিকার আমার নেই।
প্র: লাইমলাইট থেকে সন্তানকে আগলে রাখা নিয়ে চিন্তা হয়?
উ: আমি আর রানে দু’জনেই খুব প্রাইভেট পার্সন। পাবলিক ডিসপ্লে অফ অ্যাফেকশন আমাদের আসে না। আমার সন্তানেরও একটা ব্যক্তিগত জীবন আছে। তবে দর্শক-ফ্যানদের একটা আগ্রহ আছে, বুঝতে পারি। তাই মাঝে মাঝে ছবি দিই। তবে পেশা আর পরিবারের মধ্যে খুব স্পষ্ট একটা দেওয়াল তোলা রয়েছে আমার।
প্র: খুব তাড়াতাড়ি প্রেগন্যান্সি ফ্যাট ঝরিয়ে ছিপছিপে হয়ে গিয়েছেন...
উ: এর জন্য আমার চিকিৎসকদের ধন্যবাদ। নিয়মিত যোগাসন আর হাঁটার অভ্যেসটা ছিলই। কিছু দিন পরে জ়ুম্বাও শুরু করেছিলাম। ছেলে হওয়ার ছ’মাস পেরোনোর পরে জিমে ফিরেছিলাম। তবে আগের মতো ওয়েট ট্রেনিং করছি না। ফিট থাকাটাই আসল। এক আলমারি জামাকাপড় যদি ফিট না করে, কী হবে (হাসি)?