কমলিকা
সম্প্রতি পুরুলিয়ায় ছবির শুটিং সেরে ফিরলেন কমলিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। একসঙ্গে চলছে তাঁর বড় পর্দা ও ছোট পর্দার শুটিং। ‘এক আকাশের নীচে’ ধারাবাহিকের ছুটকি চরিত্রটি তাঁকে জনপ্রিয়তা এনে দেয়। তবে তার পরে বহু ধারাবাহিক ও ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন।
সম্প্রতি টেলিভিশনে শুরু হয়েছে কমলিকার নতুন ধারাবাহিক ‘বসন্ত বিলাস মেসবাড়ি’। সিরিয়ালে মানদাসুন্দরীর ভূমিকায় রয়েছেন কমলিকা। ধারাবাহিকের মানদা সাজতে ভীষণ ভালবাসে। তার রূপরুটিন এ-দিক ও-দিক হওয়ার নয়। কিন্তু আসল জীবনে কমলিকা একদম বিপরীত। অত সাজগোজ পছন্দ নয় তাঁর।
ধারাবাহিকে কমলিকার বিপরীতে রয়েছেন তাঁর বহু বছরের বন্ধু কাঞ্চন মল্লিক। গল্প অনুযায়ী মেসবাড়ির মালিক কাঞ্চন, তার স্ত্রীর ভূমিকায় কমলিকা। ‘‘কাঞ্চন আমার দীর্ঘ দিনের বন্ধু। যখন কাজ শুরু করেছি ৯৮-৯৯ সালে, তখন থেকেই আমরা খুব বন্ধু। একসঙ্গে নন-ফিকশন করেছি। রবি কিনাগি, রাজা চন্দের ছবিতেও একসঙ্গে অভিনয় করেছি। তাই ওর সঙ্গে আমার রসায়ন খুব ভাল। কমেডি নির্ভর করে টাইমিংয়ের উপরে। আমাদের বোঝাপড়া এত ভাল যে, মাখনের মতো মসৃণ শুট হচ্ছে,’’ বললেন কমলিকা।
অফস্ক্রিনও খুব মজা করে সময় কাটছে সেটে। সিরিয়ালের অনেক শিল্পী নাটকের জগৎ থেকে এসেছেন। কমলিকার কথায়, “আমি, কাঞ্চনও যেহেতু থিয়েটার থেকে এসেছি,
তাই আমাদের মধ্যে বাঁধনটা খুব মজবুত। আমাদের মধ্যের হাসি-মজাই উঠে আসছে শটে, আলাদা করে অভিনয় করতে হচ্ছে না। যে আনন্দটা আমরা পাচ্ছি, সেটা দর্শকবন্ধুরাও পাবেন।”
কাজের জায়গায় যতই তাঁরা একমত হন, রাজনৈতিক দিক থেকে দু’জনের অবস্থান দু’দিকে। তবে রাজনীতিতে এখনই আসবেন না কমলিকা। অভিনেত্রীর স্পষ্ট জবাব, ‘‘তার জন্য লাল রংকে ফিরে আসতে হবে। এখন তো মধ্যবয়সে পৌঁছে গিয়েছি, জীবনের এই পর্যায়ে এসে যে যাঁর জীবনদর্শন অনুযায়ী চলাই ভাল। আমার বাবা হার্ডকোর কমিউনিস্ট। আমিও সেই পরিবারের মেয়ে। আমার ফিলোজ়ফি একেবারেই লেফটিস্ট। এ-পাল্লা ও-পাল্লা যাওয়ার কোনও ব্যাপারই নেই। যত দিন বেঁচে থাকব, বামপন্থীই থাকব।”
সদ্য ‘প্রজাপতি’ ছবির শুটিং সেরেছেন। মৈনাক ভৌমিকের ‘মিমি’তেও অভিনয় করেছেন তিনি। এ দিকে চলছে ধারাবাহিকের শুটিং। কিন্তু অতিমারি-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ওটিটির জমানায় টিভি কি পিছিয়ে পড়ছে? ‘‘একটা ঐতিহাসিক অতিমারি আমরা পার করেছি। সব ইন্ডাস্ট্রিতেই আঁচড় পড়েছে। ওটিটির কাছে ব্যাঙ্কিং ছিল। টিভিতে অতিমারির মধ্যে সেই ব্যাঙ্কিং করা সম্ভব হয়নি। মেকআপের পরে মুখে মাস্ক পরা সম্ভব হয় না, অভিনয়ের সময়ে দূরত্ববিধি মেনে চলা যায় না— এ রকম কিছু অসুবিধেও তো মাথায় রাখতে হয়েছে। কিন্তু অতিমারির পরে টিভির শিল্পীরাই সবচেয়ে আগে সেটে ফিরেছেন। সে দিক থেকে, টিভির শিল্পীরা দ্রুত সেই গতি ধরার চেষ্টা করছেন।’’ অভিনেতা, পরিচালক, টেকনিশিয়ানরা সকলে একযোগে কাজ করে টিভির সোনালি দিন আবার ফিরিয়ে আনতে পারবেন বলেই কমলিকার বিশ্বাস।
কিন্তু ওটিটির জগৎকেও পিছনের সারিতে রাখতে রাজি নন কমলিকা। তাঁর কথায়, ‘‘টেলিভিশনের অভিনেত্রী হয়েও বলব, আর্কাইভাল ভ্যালুর জন্য ওটিটি এগিয়ে। পুরনো সিরিয়াল ওটিটিতে দেখার সুযোগ পাচ্ছি। কত বছর আগে ‘এক আকাশের নীচে’ করেছি, ওয়েবের দৌলতেই তো সেটা আবার দেখতে পাচ্ছি। ফিল্ম বেশি গুরুত্ব পায় ঠিকই, কিন্তু আমরা স্বাভাবিক ভাবেই এই ডিজিটাল জগতে ঢুকে পড়েছি। ধারাবাহিক, সিনেমা... সবই ওটিটি মাধ্যমে থেকে যাবে। একশো বছর বাদেও আজকের কাজটা দেখা যাবে সেখানে।’’