দীপিকা পাড়ুকোন এবং শকুন বত্রা।
প্র: আপনার ছবির মাধ্যমে প্রথম বার ওটিটি-তে পা রাখছেন দীপিকা পাড়ুকোন...
উ: দীপিকা প্রথমত আমার বন্ধু। ওর সঙ্গে এর আগে দু’-একটা বিজ্ঞাপনী শুট করেছি। তবে শুধু দীপিকা নয়, ‘গেহরাইয়াঁ’ আমাদের সকলেরই প্রথম ওটিটি প্রজেক্ট। যেমন আনন্দ হচ্ছে, তেমনই নার্ভাস লাগছে। দর্শক কী ভাবে ছবিটা গ্রহণ করেন, তা দেখার অপেক্ষায় আছি।
প্র: ট্রেলারে আভাস মিলেছে, সম্পর্কের বাইরে তৃতীয় ব্যক্তির সঙ্গে জড়িয়ে পড়াকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে ছবির গল্প। ভাবনাটা কী ভাবে মাথায় এসেছিল?
উ: জটিল সম্পর্কের গল্প অনেক দিন ধরেই আমার মাথায় ঘুরছিল। আরও একটা জিনিস মনে হত যে, ভারতীয় সিনেমায় বরাবরই প্রেম ও সম্পর্কের অতিসরলীকরণ করা হয়েছে। চেনা ছকের বাইরে বেরিয়ে নারী-পুরুষের সম্পর্ককে দেখাতে চেয়েছিলাম। বেশির ভাগ সম্পর্কই যে আসলে সাদা-কালোর বাইরে ধূসর একটা জায়গা, সেটা তুলে ধরতে চেয়েছিলাম।
প্র: কাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে কী কী বিষয় মাথায় রেখেছিলেন?
উ: যখন গল্পটা প্রথম ভেবেছিলাম, তখন থেকেই দীপিকা ছিল প্রথম পছন্দ। তার পরে বাকি কাস্টিংও ধীরে ধীরে হয়ে যায়। ‘গাল্লি বয়’ দেখার পরে সিদ্ধান্তের (চতুর্বেদী) কাজ খুব ভাল লাগল। ওর সঙ্গে দেখা হওয়ার পরে বুঝেছিলাম, সিদ্ধান্তের অভিনয়ের রেঞ্জটা আসলে কত বড়! অনন্যার (পাণ্ডে) সঙ্গে আলাপের পরে ওর গুণগুলো আবিষ্কার করি। আর ধৈর্যকে (কারওয়া) আমরা অডিশনের মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছিলাম। তবে দর্শক যদি গল্পটা পছন্দ করেন, তার সঙ্গে নিজেদের রিলেট করতে পারেন, তা হলে অভিনেতাদের কাজও ভাল লাগবে।
প্র: অনেকে বলেন, আপনি নাকি বেশ কড়া পরিচালক। অনেক বার শট নেওয়ার পরেই ‘ওকে’ বলেন...
উ: (হেসে) কড়া কি না জানি না, তবে পরিচালক হিসেবে আমি বেশ উচ্চাকাঙ্ক্ষী। শিল্পীদের অভিনয়ক্ষমতা আরও বেশি করে খুঁড়ে দেখতে পছন্দ করি। এর আগে তাঁদের যে ভাবে দেখেছেন সকলে, তার চেয়ে আলাদা ভাবে দেখাতে চাই আমি। যাতে তাঁরা নিজেদের ছাপিয়ে গিয়ে পারফর্ম করেন। সেটা অনেক সময়ে পাওয়া যায় টেক ফোর বা টেক ফাইভে। কিংবা তারও পরে।
প্র: তার মানে আপনি পারফেকশনিস্ট...
উ: একেবারেই না। ‘পারফেকশন’ শব্দটা আমার পছন্দের নয়। আমরা বাস্তববাদী মানুষ। আর বাস্তবে ‘পারফেক্ট’ বলে কিছু হয় না। নিখুঁত অভিনয় নয়, বরং একটু-আধটু ভুল করলে তবেই তা সত্যি বলে মনে হয় ক্যামেরার সামনে। অন্য পরিচালকদের মতো আমিও দিনে ১০-১২ ঘণ্টা পাই শুট করার জন্য। কেউ শট নেওয়ার চেয়ে লাইট সেট করতে বেশি সময় নেন। আমি ক্যামেরা তাড়াতাড়ি ফিক্স করে নিই, শট বেশিক্ষণ ধরে নিই। যে যেটা প্রাধান্য দেয়।
প্র: অতিমারির মধ্যেই গোয়ায় শুট করেছিলেন আপনারা। তার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
উ: দেড় মাসের জন্য ক্যান্ডোলিমে বায়ো বাবলের মধ্যে শুট করেছিলাম আমরা। সকলে বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। মাঝে একবার তিন দিনের জন্য ঝড়বৃষ্টিতে শুট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই সময়টা গানবাজনা করে, উনো খেলে কাটিয়ে দিয়েছিলাম। একবার সারা রাত শুট করে ভোর ৫টায় সকলে সমুদ্রে নেমে পড়েছিলাম। কাজের চেয়েও বেশি হইহই করে কেটেছিল পুরো শুট।
প্র: ‘কপূর অ্যান্ড সনস’-এর পরে এটি আপনার তৃতীয় ফিচার ফিল্ম। এতটা সময় নিলেন কেন?
উ: সচেতন ভাবে নিইনি। তা ছাড়া কোভিডের কারণে অনেক পরিকল্পনাই পিছিয়ে গিয়েছে। অন্য একটা গল্প মাথায় ছিল, যেটা শেষ পর্যন্ত হয়নি। এই ছবিটা মুক্তির পরে একটা লম্বা ছুটি নেব। তার পরে আগামী গল্পটা নিয়ে শিগগিরই হাজির হতে পারব, আশা করছি।
প্র: ‘গেহরাইয়াঁ’ বড় পর্দায় মুক্তি পেলে কি বেশি খুশি হতেন?
উ: ছবিটা দর্শকের মন ছুঁয়ে গেলেই আমি খুশি। ওটিটি-র দর্শক, সিনেমা হলের দর্শক বলে আমরাই ভাগ করে দিই। কোভিড এসে সব বিভাজন মুছে দিয়েছে। আর ছোট পর্দাতেই তো ভাল ভাল ক্লাসিক দেখে বড় হয়েছি আমরা। তাই মাধ্যমটা তত গুরুত্বপূর্ণ নয় আমার কাছে। দর্শকের কাছে পৌঁছনোটাই বড় কথা।