দেবলীনার মতে, ‘প্রেমিক, স্বামী, দাম্পত্য, সবেতেই তথাগত সেরা’
প্রশ্ন: ত্রিকোণ সম্পর্ক নিয়ে বিচ্ছেদ। এই নিয়ে তথাগত কলম ধরেছেন। বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়ও নিজের মতামত জানিয়েছেন। দেবলীনা একটা ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দিয়েই চুপ?
দেবলীনা: এর উত্তরে আমার একটি প্রশ্ন আছে। আমি কী এমন পোস্ট করেছি যার প্রেক্ষিতে তথাগতর কলম, বিবৃতির লেখার সঙ্গে আমার তুলনা করা হচ্ছে?
প্রশ্ন: ‘‘ঠিক পথ বেছে নাও। সেই পথ যতই কঠিন হোক, শেষে আশার আলো দেখতে পাবেই’’— বার্তায় কী বলতে চেয়েছেন?
দেবলীনা: এটাই সোশ্যাল মিডিয়ার গলদ। আমি বরাবর উদ্ধৃতি তুলেই কিছু না কিছু পোস্ট করি। হয়তো আমার বলা কিছু কথা। নয়তো বিশিষ্টদের। আজ হঠাৎ যদি সবাই একটি উদ্ধৃতি পড়ে আমায় বিচার করতে বসেন তা হলে তো মুশকিল! আমি বলতে চেয়েছি, একটি লম্বা সুড়ঙ্গ যতই ট্যাঁরাব্যাঁকা হোক, শেষে আলো থাকবেই। কিছু দিন আগেই আরও একটি পোস্টে আমি লিখেছিলাম, ‘শক্তিশালী নারী হতে চেয়ে কুণ্ঠিত হবেন না’! কারণ, সমাজ এই ধরনের নারীকে পছন্দ করে না। আমার পোস্টগুলো এ রকম ভাবেই জীবনবোধে জড়িত। পোস্ট দেখে দেবলীনাকে বুঝতে চাইলে ভুল করবেন সবাই।
প্রশ্ন: মুখ বন্ধ করতে আপনিও তা হলে আপনার মতো করে বলুন!
দেবলীনা: পোস্ট নিয়ে লোকের ভাবনা বুঝতে পারছি। এটা সত্যিই, আমি আর তথাগত এক ছাদের নীচে নেই। আমরা বিচ্ছিন্ন। তাই সবাই আমার পোস্টে এখন অন্য মানে খুঁজছেন। এটাই স্বাভাবিক। এর বাইরে আমি আর কিছুই বলব না। পাশাপাশি, এই বিষয়ের কারণ নিয়েও মুখ খুলব না। মানুষের জীবনের সব কিছুই কি সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের মতো চিরন্তন সত্যি? নয় তো! অবস্থা বা পরিস্থিতির কারণে অনেক কিছু বদলে যায়। তখন বদলে যায় সত্যি-মিথ্যের সংজ্ঞাও। এই সত্যিটা আমি জানি। তাই এই মুহূর্তে আমার প্রবন্ধ লেখার কোনও তাগিদ নেই। ইচ্ছেও করছে না বিরাট করে কিছু লিখে সবাইকে জানানোর। কারণ, পুরোটাই আমার চোখে যেন কৈফিয়ত দেওয়ার মতো মনে হচ্ছে। আমার কাউকে, কিচ্ছু কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজনই নেই। আমি নিজের কাছে ভীষণ স্বচ্ছ। কারণ, আমি জানি আমরা কেন আলাদা হয়েছি। এবং আমরা আলোচনা করেই বিচ্ছিন্ন হয়েছি।
প্রশ্ন: কেন ৮ বছর পরে আলাদা হলেন আপনারা?
দেবলীনা: বিষয়টি এতটাই ব্যক্তিগত যে বাইরের কারওর কাছে আমি এই নিয়ে একটি শব্দ খরচ করব না। আমার কিচ্ছু বলার নেই।
প্রশ্ন: টালিগঞ্জ বলছে, তথাগত-বিবৃতির রসায়নই নাকি তথাগত-দেবলীনার সম্পর্ক ভাঙার নেপথ্য কারণ?
দেবলীনা: এ বাবা! এটা তো ওদের দু’জনের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এটা ওরা দু’জনে উত্তর দেবে। ওদের জিজ্ঞেস করুন। আমায় কেন?
প্রশ্ন: আরও কারণ নিন্দকেরা খুঁজে বার করেছে। কেউ বলছে, আপনি বয়সে বড় তাই তথাগতর মোহ ভঙ্গ ঘটেছে। কেউ বলছেন, তথাগত চরিত্রহীন। কেউ বলছেন, পুরোটাই নাকি সাজানো! নাটক!
দেবলীনা: তা হলে তথাগতর আগের সম্পর্ক তো ভাঙাই উচিত ছিল না! বনিবনার অভাবে প্রথম বিচ্ছেদের সময় ওঁর স্ত্রী কিন্তু ওঁর থেকে ছোটই ছিলেন। তা হলে সম্পর্কটা ভাঙল কেন? তাই বয়স ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ছে না। আমরাও বয়সটাকে সংখ্যা হিসেবেই গণ্য করি। দ্বিতীয় কারণ, তথাগতর চরিত্রহীনতা। এটা আরও বাজে কথা। আমার জীবনের সেরা সময় তথাগতর সঙ্গে দাম্পত্য। সব স্ত্রী স্বামী ঘুমিয়ে পড়লে তাঁকে তুলে নিজে হাতে খাইয়ে দেন। আমি ঘুমিয়ে পড়লে তথাগত নিজে রান্না করে, আমায় তুলে খাইয়েছে। আমার মাকে পর্যন্ত কথা বলতে দেয়নি! বলেছে, ‘‘চুপ করুন। দেবলীনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে।’’ এমন পুরুষকে আমি চরিত্রহীন তকমা দিই কী করে? প্রেমিক, স্বামী, দাম্পত্য, সবেতেই ও সেরা, নিখুঁত। আর এক জনকে ভালবাসলে অন্য কাউকে দেখে হরমোন ক্ষরণ হবে না, হলে তাকে চরিত্রহীনতার তকমা দেব, এত অশিক্ষিত আমি নই। তবে এটা ঠিক, সেই ক্ষরণকে আমি সামলাব না তার টানে ভেসে যাব— এই সিদ্ধান্ত আমার মুঠোয়। হয়তো তথাগতর সে রকমই কিছু ঘটেছে। তৃতীয় কারণের উত্তর একটু উন্নাসিক ভাবে দিই? ২৫ বছর টলিউডে থাকার পরে আমার এই সস্তার প্রচারে আলো টানার বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন: আপনার যদি তথাগতর উপস্থিতিতে কাউকে দেখে হরমোন ক্ষরণ হত কী করতেন? এখন হলেই বা কী করবেন?
দেবলীনা: আমি একটু প্রাচীনপন্থী। তথাগত এতটাই আমায় ভরিয়ে রেখেছিল, আমি এতটাই সুখী ছিলাম যে সেই বৃত্ত ভাঙার কথা কোনও দিন ভাবিইনি। ফলে, তখনও হরমোন ক্ষরণ হলে নিজেকে সামলে নিতাম। নিরাপদে জীবন কাটাব বলে। যা এক জন সভ্য, শিক্ষিত মানুষের কর্তব্য। আর এখন? দেখুন, একটা সম্পর্ক থেকে বেরোতেও তো সময় লাগে! আমি এখনও আগের দাম্পত্যের অনুভূতি থেকেই বেরোতে পারিনি। সেই অনুভূতি থেকে বেরোতে পারলে অবশ্যই যাঁকে দেখে হরমোন নিঃসরণ হবে তাঁর কথা ভাবব। তাঁর সঙ্গে আমার মিললে জীবন আবার অন্য খাতে বইবে।
পোষ্যদের সঙ্গে দম্পতি
প্রশ্ন: বিবৃতির কিন্তু হরমোন নিঃসরণ হচ্ছে, তাঁর রিল ভিডিয়ো বলছে, ‘বেশ করেছি প্রেম করেছি’...
দেবলীনা: এই দেখুন, আমার সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও বিবৃতি আমায় ব্লক করে দিয়েছে! ফলে, আমি ওর কোনও পোস্ট দেখতে পাচ্ছি না। আর ও যদি এ রকম কোনও রিল ভিডিয়ো বানিয়ে থাকে তা হলে বেশ করেছে। আমি ওকে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। প্রেমে পড়ায় তো কোনও দোষ নেই! সেটা বুক বাজিয়ে বলার মতোই বিষয়। আমি হলে অন্তত তাই-ই করতাম।
প্রশ্ন: পোস্টে লেখা, ‘তোমার হৃদয়ের পর তোমার পোশাকের আলমারি চুরি করব’ এবং সেই অনুযায়ী বিবৃতি পুরুষের জিন্সের শার্ট পরেছেন--- এ সবও সমর্থন করবেন?
দেবলীনা: তাই লিখেছে বুঝি পোস্টে? তা হলে তো দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার, কোনও পুরুষের হৃদয় চুরির পর তার পোশাকও বিবৃতির গায়ে দেখা যেতেই পারে! আপনার মতো অনেকেই পোস্টটি নিয়ে আমায় প্রশ্ন করেছেন। তাঁদের মাধ্যমে ছবিটিও দেখেছি। এ ভাবে নারী-পুরুষের পোশাক মিলিয়ে পরে দারুণ সুন্দর সেজেছে বিবৃতি। আর শার্টটা আমার সত্যিই ভীষণ চেনা (অল্প হাসি)।
প্রশ্ন: ওঁরা নাকি এক ছাদের নীচে সুখী...
দেবলীনা: তাই? তথাগত সুখী হলে আমিও সুখী। কারণ, আমি তথাগতকে ভালবাসি।
প্রশ্ন: এই ভালবাসার টানে তথাগত যদি আবার ফিরে আসেন? মেনে নেবেন?
দেবলীনা: এই উত্তর সময় দেবে। কারণ, তথাগত যদি ফেরে তখনও আমারও কি ওর প্রতি আগের মতোই প্রেম রয়েছে? এটা সবার আগে বিবেচ্য। প্রেম থাকলে অবশ্যই ওকে গ্রহণ করব। দেরি করে ফিরলে আমাকেও ভাবতে হবে।
ঋষভ এবং বিবৃতির সঙ্গে তথাগত-দেবলীনা
প্রশ্ন: আমির খান-কিরণ রাও, অনুপম রায়-পিয়া চক্রবর্তী, তথাগত মুখোপাধ্যায়-দেবলীনা দত্ত যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে, একুশ শতকে বিচ্ছেদের পরেও কষ্ট, কান্না, যন্ত্রণা পেতে নেই!
দেবলীনা: ভুল কথা। সবার সবার মতো করে দুঃখ আছে। বিচ্ছেদের যন্ত্রণাতেও কষ্ট পাচ্ছেন সবাই। প্রত্যেকের বিচ্ছেদের কারণও এক নয়। সবাই নিজের মতো করে এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। শুধু এটা ঠিক, প্রকাশ্যে কষ্ট পেতে নেই। এগুলো পুরোপুরি ব্যক্তিগত।
প্রশ্ন: শক্ত থাকতে দেবলীনা কী করছে?
দেবলীনা: অভিনয়ের সঙ্গে আবার নতুন করে প্রেম করছি। মাঝে সেই প্রেমটা যেন ফিকে হয়ে গিয়েছিল। কালার্সের ‘ত্রিশূল’ ধারাবাহিকে চুটিয়ে অভিনয় করছি। ছবি পরিচালনার কথা ভাবছি। নিজের ইউটিউব ঢেলে সাজানোর আয়োজন করছি। মায়ের দেখাশোনা করছি। আর তিনটি সারমেয় সন্তান আমার। বাড়িতে পা রাখলেই ওরা আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে (হাসি)।
প্রশ্ন: তথাগত বলেছেন, দাম্পত্য ভাঙলেও বন্ধুত্ব অটুট! যে কোনও দিন আপনাদের দক্ষিণ কলকাতার কফিশপে আড্ডা দিতে দেখা যেতে পারে?
দেবলীনা: ভুল বলেছে। নিতান্তই কেজো কারণে দেখা হলেও হতে পারে। যেমন, পোষ্য নিয়ে কথা। যেমন, ব্যাঙ্ক বা অফিসিয়াল কোনও কাজ। ডাক এলে তথাগতর সঙ্গে পর্দা ভাগ করতেও আপত্তি নেই। আমার ছবিতে ওর মতো কোনও চরিত্র থাকলে অবশ্যই ডাকব। কিন্তু জীবনে কেউ আর কোনও দিন তথাগতর সঙ্গে দেবলীনাকে কোথাও আড্ডা মারতে দেখবেন না! ওর পরিচালনায় অভিনয়ও করব না।
প্রশ্ন: তথাগত আপনাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘ইউনিকর্ন’ ছবির ‘অপালা’র কথা লিখেছেন। যে নারী স্বাধীনতা খোঁজে নিজের মধ্যে, অন্যের মধ্যে নয়। তাই বিচ্ছেদ?
দেবলীনা: আমি বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি তথাগতর মুখ চেয়ে। নিজের জন্য নয়। আবারও বলছি, আমি তথাগতর সঙ্গে সবচেয়ে সেরা সময় কাটিয়েছি। ইদানীং, তথাগতর জীবনযাপনে আরও স্বাধীনতার দরকার হয়ে পড়ছিল। সেটা বুঝেই সরে এসেছি। ওকে স্বাধীন করতেই আমি ওকে মুক্তি দিয়েছি!