ব্রাত্য বসু।
নতুন নাটক লিখেছেন। ছবির পরিকল্পনাও রয়েছে। সদ্য বাংলার শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন ভার্চুয়াল মাধ্যমে। করোনা আক্রান্ত হয়ে আপাতত নিভৃতবাসে ব্রাত্য বসু। একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজার ডিজিটালে।
প্রশ্ন: নতুন ছবির ঘোষণা করলেন এমন সময়ে যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসে পড়েছে প্রবলভাবে। সব কিছুই বন্ধ। কী ভাবে কী হবে?
ব্রাত্য: এটা আগামী ছবির পরিকল্পনা। কিন্তু এ বছরে ছবিটা শুরু করা যাবে বলে মনে হয় না। স্ক্রিপ্টের কাজ চলছে। চরিত্র নির্বাচন ইত্যাদি যতটুকু এগিয়ে রাখা যায়, ততটুকুই করতে পারব।
প্রশ্ন: আপনার ঘোষণার পর এই ছবির বিষয় খুব চাঞ্চল্য তৈরি করেছে।
ব্রাত্য: সে আপনারা জানেন। তবে একসময় হুগলি জেলার ত্রাস, হুগলি জেলার দাউদ ইব্রাহিম বলা হত যাঁকে, সেই হুব্বা শ্যামলের বিষয়টা এই ছবির মূল ভিত্তি। নয়ের দশকের শেষে তাঁর উত্থান। তিনবার গ্রেফতার করা হলেও জামিনে মুক্ত হন। ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে সল্টলেকের একটা মাল্টিপ্লেক্সের সামনে থেকে তাকে প্রথমবার পুলিশ তোলে। তখন বামেরা ক্ষমতায়। সারা বিশ্বে একটা পরিবর্তন আসছে। ইন্টারনেট, মোবাইল, সোশ্যাল মিডিয়া এসে গিয়েছে। শুনেছি, সেই সময় হুব্বা শ্যামলের সত্তরটা মোবাইল ছিল! এক সময় তিনি নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়াতে চান, কিন্তু কোনও কারণে নাম তুলে নেন শেষমেশ। তারপর খুনও হয়ে যান।
প্রশ্ন: অ্যাকশন ছবি?
ব্রাত্য: না। আমি বানাতে চাই রাজনৈতিক ছবি।
প্রশ্ন: কেন বলছেন রাজনৈতিক ছবি?
ব্রাত্য: এটার মধ্যে একটা টাইম স্প্যান, অর্থাৎ একটা সময়খণ্ড আছে। তার মধ্যে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অন্ধকার জগৎ— সবই মিলেমিশে রয়েছে। ফলে এটাকে আমি এক রকম রাজনৈতিক ছবি বলতে চাই। যেমন, ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’।
প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছে আবির, নুসরত, পৌলমী, মোশারফ, অর্ণ— সকলেই এই নতুন ছবিতে আছেন?
ব্রাত্য: না না। ছবির প্রয়োজনে মোশারফ করিম আর পৌলমীই থাকছে শুধু।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
প্রশ্ন: আপনার ‘ডিকশনারি’ চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেল। অভিনন্দন! কেমন লাগছে?
ব্রাত্য: বেশ কিছু দেশের ভাল মানের ছবির মধ্যে আমাদের ছবিটি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করায় খুবই ভাল লেগেছে। বিদেশের ফেস্টিভ্যালে ইউরোপীয় জুরিদের সঙ্গে আমাদের ছবিটি যে যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছে এটাই বড় ব্যাপার। সিনেমা তো এমনই। অনেক জায়গায় লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে চলে যেতে পারে। স্থানিক বৈশিষ্ট ছাপিয়ে আন্তর্জাতিকতাকে ধারণ করা ভাল চলচ্চিত্রের বৈশিষ্ট্য। আমার চিন্তা ও বিশ্বাস জোর পেয়েছে। বুদ্ধদেব গুহর দু’টি গল্প অবলম্বনে এই ছবি। জনপ্রিয় এই সাহিত্যিকের লেখা অবলম্বনে এটাই প্রথম সিনেমা। তাঁরও নিশ্চয়ই ভাল লাগবে এই সংবাদ।
প্রশ্ন: নতুন নাটকের কী খবর?
ব্রাত্য: নতুন একটা নাটক লেখা শেষ করেছি। ‘রোল, অ্যাকশন, কাট’। এই সময়ের বলিউড এবং ক্রিকেট এখানে বিষয়। ‘মিটু আন্দোলন’ থেকে স্বজনপোষণ, রাজনৈতিক দল— সব আছে। ক্ষমতা, মায়াজগৎ, ক্রিকেট রাজনীতি হাত ধরাধরি করে আছে, তেমন একটা জগৎ। নাটকটা লিখেছি, এই পর্যন্ত। এখন যা অবস্থা, নাটক নামানোর কথা ভাবাই যাচ্ছে না।
প্রশ্ন: নাটকের তাহলে ভবিষ্যৎ কী? সিনেমা তাও অনলাইন প্লাটফর্মে বিকল্প ভূমি খুঁজে নিতে চাইছে। কিন্তু এই করোনা-কালে নাটকের কী হবে?
ব্রাত্য: নাটকের কিছু করা যাবে বলে মনে হয় না। কারণ থিয়েটারের মূল কথা স্পর্শ। স্পর্শ খুব জরুরি। তা সে হৃদয়ের স্পর্শই হোক, আর পরস্পরকে শারীরিক স্পর্শ। কিন্তু সেই স্পর্শই তো এখন সবার আগে বারণ। স্পর্শ থেকে সাবধান হতে হয়েছে আমাদের। অল্প জমায়েত হয় এ রকম স্টুডিও থিয়েটার বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে। কিন্তু সেখানেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর ভয়ে মানুষ যাচ্ছেন না। সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আশাবাদী থাকতে হবে। সুসময়ের অপেক্ষায় থাকতে হবে। লড়াই চলছে।
প্রশ্ন: আপনি নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। খুশির খবর যে আপনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। এই অসুখটা সম্পর্কে আপনার নিজের অভিজ্ঞতা যদি জানান।
ব্রাত্য: আমার কোভিড টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ার খবরে প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তার পর চিকিৎসকরা আমাকে আশ্বস্ত করেন। গৃহবন্দি অবস্থায় দিন কাটছে। ওষুধ খাচ্ছি। নিয়ম মেনে চলছি। এখন ভাল আছি। তবে চতুর্দিকে নানা মৃত্যুর খবর। একটা অনিশ্চয়তা তো কাজ করেই। আমার মনে হয়েছে যে এই অসুখটা শরীরের ভেতরের যে শৃঙ্খলা রয়েছে, সেটাকে নষ্ট করে দেয়। যখন তখন অনেক কিছুই হতে পারে। গা-ছাড়া ভাব দেখালে চলবে না। সকলকেই খুব সাবধানে থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি পশ্চিমবঙ্গের নতুন শিক্ষামন্ত্রী। এই করোনাকালে শিক্ষাব্যবস্থা খুব সমস্যায়। আপনার কিছু পরিকল্পনা নিশ্চয়ই আছে?
ব্রাত্য: আশা করি কয়েক দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাব। বাইরে বেরোতে পারব। এখনও কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে নিশ্চয়ই আলোচনা হবে।
প্রশ্ন: শিক্ষক হিসেবে বলুন, ছাত্রছাত্রীদের একটা প্রজন্ম কি ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না?
ব্রাত্য: পৃথিবীই এখন ভয়ানক সংকটের মুখোমুখি। সমাজের সব পরিকাঠামোই ক্ষতিগ্রস্ত। তবে লড়াই চলছে। পথ একটা বেরোবেই। সন্ততিও রক্ষা পাবে।