বনি এবং অঙ্কুশ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
জয়দীপ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘এফআইআর’ ছবিতে প্রথম বার একসঙ্গে অভিনয় করছেন অঙ্কুশ এবং বনি সেনগুপ্ত। পুজোয় দেব-জিতের ছবির পাশাপাশি এই ছবি নিয়েও আগ্রহ রয়েছে। বাইপাসের ধারে অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলার ফ্ল্যাটে বসেছিল আড্ডা। ছবির অংশ না হলেও, অঙ্কুশের কথার সূত্র ধরেই ঐন্দ্রিলার (সেন) প্রতিক্রিয়া ও পর্যবেক্ষণ জমিয়ে দিল কথোপকথন।
কমার্শিয়াল থেকে কনটেন্ট
অঙ্কুশ এবং বনির উত্থান কমার্শিয়াল ছবির নায়ক হিসেবে। কিন্তু এখন তাঁরাও কনটেন্টভিত্তিক ছবির অংশ। ‘এফআইআর’-ও সেই গোত্রের ছবি। বাংলা কমার্শিয়াল ছবির ভবিষ্যৎ কী? অঙ্কুশের মত, ‘‘অন্য আঞ্চলিক ভাষার ছবি যখন বলিউড রিমেক করে, বাজেট অনেকটাই বেড়ে যায়। তার ফলে ছবির লুক ও ফিল দর্শক টানতে পারে। অতিমারির পরে বাংলায় বাজেটের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। দর্শকও চাইছেন, কম বাজেটের হলেও বাংলা ছবিতে নিজস্বতা থাকুক।’’ একই মত বনিরও, ‘‘দর্শক বদলাচ্ছেন। তাই তাঁদের চাহিদা মাথায় রেখেই ছবি তৈরি করতে হবে।’’
‘এফআইআর’ ছবিতে অঙ্কুশ সিনিয়র পুলিশ অফিসার অভ্রজিৎ দত্তের চরিত্রে, বনি জুনিয়র অফিসার নরেন দাসের ভূমিকায়। দু’জনের চরিত্রের রসায়ন নিয়ে অঙ্কুশের পর্যবেক্ষণ, ‘‘ওদের মধ্যে আদর্শের লড়াই, ঠান্ডা যুদ্ধ রয়েছে। আবার পারস্পরিক ভালবাসার জায়গাও রয়েছে।’’ বনি জুড়লেন, ‘‘অভ্রজিৎকে দেখে নরেনও নিজের কাজ সম্পর্কে সিরিয়াস হয়।’’
বৌ-প্রেমের একাল-সেকাল
বনি-কৌশানী জুটির বেশ কয়েকটি ছবি ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে। অঙ্কুশ এবং ঐন্দ্রিলাকে এ বছরই প্রথম একসঙ্গে দেখা গিয়েছে ‘ম্যাজিক’ ছবিতে। অফস্ক্রিন প্রেমিকার সঙ্গে অনস্ক্রিন রোম্যান্স করতে কেমন লাগে? এই বিষয়ে অঙ্কুশের চেয়ে সিনিয়র বনি। তিনি শুরু করলেন, ‘‘অন্য নায়িকাদের সঙ্গে কেমিস্ট্রি তৈরি করতে যতটা খাটতে হয়, কৌশানীর (মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে ততটা হয় না। ক্যামেরার অ্যাঙ্গল, টার্ন নেওয়ার বোঝাপড়াও তৈরি হয়ে গিয়েছে। তবে সেটে আমরা অভিনেতা। অনেকেই ভাবেন, এদের আলাদা করে বোঝাতে হবে না, নিজেরাই করবে। এটা আবার অসুবিধে।’’ সম্পূর্ণ বিপরীত অভিজ্ঞতা অঙ্কুশের, ‘‘অন্য নায়িকাদের সঙ্গে রোম্যান্স খুব উপভোগ করি। নতুন গাল, নতুন চুল...’’ বনি জুড়লেন, ‘‘নতুন শ্যাম্পুর গন্ধ...।’’ এই কথাগুলো শোনার সময়ে ঐন্দ্রিলার অভিব্যক্তি ছিল দেখার মতো! যদিও তা ক্যামেরায় তোলা যায়নি। অঙ্কুশ বলছিলেন, ‘‘আসলে আমি আর ঐন্দ্রিলা বন্ধু বেশি, একে অপরকে গালমন্দ করে কথা বলি। বাস্তবে রোম্যান্স তো অত ফিল্মি হয় না। রাজাদার (চন্দ) ছবি করতে গিয়ে আমরা দু’-তিনটে টেক করেছি। কারণ বাস্তবে ওই আলতো করে চুল সরিয়ে, চোখে চোখ রেখে প্রেম তো করি না!’’
প্রসঙ্গ যখন রাজনীতি
প্রস্তাব পেয়েও গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে কোনও রাজনৈতিক দলে নাম লেখাননি অঙ্কুশ। অন্য দিকে বিজেপিতে গেলেও ভোটে দাঁড়াননি বনি। অঙ্কুশের কথায়, ‘‘রাজনীতি মানেই খারাপ, সেটা নয়। আমি ওই জগৎটা সম্পর্কে বুঝি না। কখন কী বেফাঁস বলে ফেলব, কিছু বলতে বাধ্য করা হবে—সেই জন্য যাইনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অনেকের টুইট দেখে মনে হয়েছিল, তাঁদের দিয়ে কাজটা করানো হয়েছে। আদতে তাঁরা ওরকম নন।’’
আবার বনির বক্তব্য, ‘‘বিজেপিতে থাকলেও ওখানকার কিছু নেতাদের ‘রগড়ে দেব’ জাতীয় কথা তখনও সমর্থন করিনি, এখনও করছি না। যোগ দেওয়ার সময়ে বিজেপিতে যে সম্মানটা পেয়েছিলাম, এখন সেটায় একটু ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আমি মূলত রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর ক্যাম্পেনে ছিলাম। রাজীবদার সঙ্গে এখনও যোগাযোগ রয়েছে।’’
কে কৃপণ, কে-ই বা স্বার্থপর?
‘অঙ্কুশ কিপটে’—আনন্দ প্লাসের কাছে এই অভিযোগ বনি আগেও করেছেন, এ দিনও করলেন। অঙ্কুশের জবাব কী? ‘‘টাকা জমিয়ে আমি আগে নিজের জন্য কিছু কিনি। তার পরে অন্যরা উপহার চাইলে বলি, ‘টাকা শেষ! সরি!’ আমি কিপটে নই, স্বার্থপর।’’ ঐন্দ্রিলাকে উপহার দেন না? ‘‘ওকে দিতে হয় না, ও ছিনিয়ে নেয়!’’ অঙ্কুশের এই জবাবে ঐন্দ্রিলার মুখভঙ্গি অনুমেয়! যদিও ফোটোশুটের আগে অঙ্কুশের মেকআপ করে দিয়েছেন ঐন্দ্রিলা নিজে। ‘‘এক বার দামি মেকআপ প্রডাক্ট ব্যবহার করেছিল বলে, মেকআপ করার পরে চার হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছিল,’’ শোনালেন অঙ্কুশ। সদর্প সায় দিলেন ঐন্দ্রিলা!
খুনসুটির হাত ধরেই শেষ করতে হল আড্ডা। বনি-অঙ্কুশের বন্ধুত্বের রসায়ন যে ‘ওয়ান-উওম্যান ম্যান’-এর মন্ত্রে নিহিত, তা তাঁদের প্রেমিকারা না বললেও বেশ স্পষ্ট!