রোহন ভট্টাচার্য।
দীপনারায়ণ এই মুহূর্তে কী করছে?
গ্রামের মেয়ে টেঁপির সঙ্গে দীপনারায়ণের বিয়ে হয়ে গেছে। সাধারণভাবে টেঁপিকে দর্শক পাগল ভাববে... শিক্ষাদীক্ষা, সাধারণ জ্ঞান কম। এদিকে দীপনারায়ণ সায়েন্টিস্ট। টেঁপির মতো বোকা এক মেয়ের সঙ্গে সায়েন্টিস্টের বিয়ে একটু অস্বাভাবিক। ঘটনাক্রমে ছবি দেখেই টেঁপির প্রেমে পড়ে দীপনারায়ণ। দীপনারায়ণ এমন একচরিত্র যে, কাউকে ভালবেসে ফেললে উপেক্ষা করতে পারে না। তো দীপনারায়ণ ঠিক করেছে মাস তিনেক টেঁপিকে পড়াশোনা শিখিয়ে শিক্ষিত করে তুলবে। সেই সময় তার বানানো রোবট টেঁপির হয়ে বাড়িতে প্রক্সি দেবে। একদম টেঁপির মতো দেখতে একটা রোবট সে তৈরি করেছে। রোবট গল্পে এন্ট্রি নিয়েছে। দর্শক রোবটকে খুব পছন্দ করছে। সে কারণে সিরিয়ালের টিআরপি-ও বেড়ে গেছে।
তৃণা মানে টেঁপির সঙ্গে কাজ করতে কেমন লাগছে?
অ্যাক্টিংটা তো একটা আদানপ্রদানের ব্যাপার। তৃণা এক্সপিরিয়েন্সড আর্টিস্ট। ভাল কাজ করে। যেহেতু এখানে ওর কঠিন চরিত্র, কাজ করতে গিয়ে ওকে ভাবতে হচ্ছে। দুটো চরিত্র করছে... একদিকে টেঁপি, একদিকে রোবট। দেখেও ভাল লাগছে। সব মিলিয়ে ওর সঙ্গে কাজ করতে ভালই লাগছে।
আগে কী কী কাজ করেছেন?
২০১১ সালে আমার প্রথম মুভি রিলিজ করে, ‘বাজিকর’। তারপর ‘জাল’, ‘ব্ল্যাকমেল’, ‘ওঁম শান্তি’, ‘নীললোহিত’, ‘মন শুধু তোকে চায়’, ‘তুই যে আমার’—এরকম ১৩টা ছবিতে লিড করেছি। শতাব্দী রায়, স্বপন সাহা, হরনাথ চক্রবর্তী, এঁদের পরিচালনায় ছবি করেছি। কিন্তু যেহেতু এগুলো সেরকম কোনও বড় ব্যানারের ছবি নয়, বক্স অফিসেও তেমন সফল হতে পারেনি। কিন্তু ‘মন শুধু তোকে চায়’ বেশ ভাল হয়েছিল। এই ছবিটা দেখেই স্টার জলসা থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তার পরেই ‘ভজ গোবিন্দ’ সিরিয়ালে লিড করার জন্য ডাক পাই। তো এই সিরিয়ালটা একটা ব্রেক হল। আপনারা জানেন, ‘ভজ গোবিন্দ’ কত পপুলার। মাচা শো করতে গেলে এখনও গোবিন্দ বলে সবাই ডাকে আমাকে। আমার ডায়ালগ, ‘রান্না করা, বাসন মাজা, কাপড় কাচা, কুটনো কাটা, জুতো সেলাই, চণ্ডীপাঠ সব করতে পারি। নাম মনে রাখবেন গো...বি...ন্দ!’ এখনও সুপার ডুপার হিট। বাচ্চাদের একেবারে মুখস্থ। বাচ্চাদের সঙ্গে দেখা হলে রাস্তাঘাটে এই ডায়ালগটা শোনায় আমাকে, এত পপুলার হয়েছিল চরিত্রটা। আফটার ‘ভজ গোবিন্দ’ আমি বুঝতে পারলাম, আগের ভাবনাটা ঠিক ছিল না... আগে ভাবতাম সিরিয়ালে কাজ করব না, মুভিই করব। একজন অ্যাক্টরের সবসময় ভাবা উচিত যে আমি কত বেশি লোকের কাছে পৌঁছতে পারছি। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে এটা একমাত্র টেলিভিশনের মাধ্যমেই সম্ভব।
'কলের বউ' সিরিয়ালের দৃশ্য
তাহলে সিনেমা যে খ্যাতি আপনাকে দিতে পারেনি তা টেলিভিশন দিল?
হ্যাঁ, অবভিয়াসলি। সেটা তো দেখাই যাচ্ছে, প্রমাণিত সেটা। তাই না? প্রথমেই এরকম একটা স্টোরি পেয়ে যাবো, স্নেহাশিসদার মতো একজন প্রোডিউসার-রাইটার পেয়ে যাব সেটা কখনও ভাবিনি।‘ভজ গোবিন্দ’-র পরেঠিকই করেছিলাম যে আবার যদি স্নেহাশিসদার কোনও প্রজেক্ট পাই তো করব। তো তাঁর প্রজেক্টই করছি, ‘কলের বউ’। প্রথম সপ্তাহ থেকেই ভাল টিআরপি। আমার আর তৃণার জুটিটা আপাতত ভাল যাচ্ছে।
দীপনারায়ণ সায়েন্টিস্ট। ব্যক্তিজীবনে আপনি...
আমি সবকিছু করতে পারি। গোবিন্দ চরিত্রটাও সব করতে পারতো। এজন্যই বোধহয় এত ভাল করে চরিত্রটা করতে পেরেছিলাম। গান, ডান্স, পেন্টিং, রান্না... সব পারি। সবচেয়ে ভাল ব্যাপার হচ্ছে, আমি ভালবাসতে পারি।
এটা কে অ্যাপ্রুভ করল?
আমার গার্লফ্রেন্ড। ক’দিন আগে একটা বিদেশি চকোলেট উপহার দিয়েছিল। তাতে লেখা, ‘বেস্ট বয়ফ্রেন্ড’। আমার মা-ও বলে।
অন্য সাজে রোহন
রোবটও বানান?
ওটাই বলতে যাচ্ছিলাম... ইউটিউবে রোবোটিক্স দেখে ছোট রোবট বানানো বিষয়ে অনেককিছু শিখেছি। রিমোট গাড়িগুলোর মেশিন দিয়ে স্পাইডার রোবট বানিয়েছি। তো এরকম আরকি। যে চরিত্র করি সেটা হয়ে ওঠার চেষ্টা...
আপনি নাকি মার্শাল আর্টেও আছেন?
অ্যাকচুয়ালি আমি বেঙ্গল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলাম... মার্শাল আর্টে, ক্যারাটে। নিজে ক্যারাটে টিচার ছিলাম। এখন শেখানোর সময় পাই না। কিন্তু নিজে যখনই সময় পাই প্যাক্টিস করি। সপ্তাহে চারদিন অবশ্যই প্র্যাকটিস করি।
রাতবিরেতে শুটিং থেকে বাড়ি ফিরতে গিয়ে অভিনেতারা আক্রান্ত হচ্ছেন। আপনিও যদি...
এখনও পর্যন্ত লোকেরা সেলফি তুলে হাগ করে চলে যায়। মারপিটের দরকার হয়না... হা হা হা...
শুটিং ছাড়া আর কাকে সময় দেন?
আমার মা-বাবা আর গার্লফ্রেন্ড ছাড়া কাউকে সময় দেওয়ার নেই। কারণ আমার কোনও বন্ধু নেই। শুট করি আর বাড়ি যাই। কারণ, অন্য কোনও জায়গায় যাওয়ার থাকে না।
আপনার তরুণী অনুরাগীরা প্রপোজ করেন? আপনি ফেরার পরে কে কী বলছেন?
আমি কাম ব্যাক করাতে সবাই খুব খুশি। ‘ভজ গোবিন্দ’-র পর অনেকদিন ব্রেক নিয়েছিলাম। চাইছিলাম ওই ইমেজটা ব্রেক করতে... গোবিন্দ’র ইমেজ ব্রেক করা খুবই কঠিন কাজ। একটা রিয়েলিটি শো ‘এবার জমবে মজা’-য় অ্যাঙ্কারিং করছিলাম। সিরিয়ালে ফিরে আসার জন্য ফ্যানরা এনকারেজ করেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায়। কাম ব্যাক করলাম। ফ্যানরা খুশি। ভাল লাগছে।
কী বলেন ফ্যানেরা?
সেলফি তোলার পরেই অভিনয় করার সুযোগ চায়। সিক্সটি পারসেন্ট ফ্যান কাজ চায়। একবার এক বয়স্ক লোক বলেছেন, ‘আমার ছেলে আছে। অভিনয় করতে চায়। সুন্দর দেখতে। আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না, আপনার থেকেও সুন্দর দেখতে। একটা সুযোগ হতে পারে?’... হা হা হা... ওনারা বোঝেন না যে সুযোগ দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। যতটা সম্ভব গাইড করি। সবাই ইন্ডাস্ট্রিতে আসতে চায়... আমি মনে করি যারা আসতে চায় তাদের ট্রাই করা উচিত।
ছবি: সংগৃহীত