দিব্যেন্দু
বিয়েবাড়ির মণ্ডপ সাজাচ্ছে কয়েকটি ছেলে। ‘মনসুন ওয়েডিং’ ছবির সেই দৃশ্যে প্রথম বার বড় পর্দায় দেখা গিয়েছিল দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যকে। শ্যামবর্ণ, টানা টানা বাঙ্ময় দু’টি চোখ। দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার এই ছাত্রটিকে চিনে নিয়েছিল মীরা নায়ারের মতো জহুরির চোখ। মঞ্চাভিনয় থেকে সিনেমায় পা রাখা তখনই। কলকাতার ছেলের মুম্বইয়ে থিতু হওয়ার সিদ্ধান্তও সেই সময়েই। সপ্তাহখানেক আগে কলকাতা থেকে ঘুরে গেলেন দিব্যেন্দু। এসেছিলেন রানা সরকার প্রযোজিত, রাজদীপ ঘোষ পরিচালিত ‘বনবিবি’ ছবির শুটিং করতে। ছবিতে তিনি দক্ষিণরায়ের ভূমিকায়। ‘‘আমি বেহালার ছেলে। জোকার কাছে আমার বাড়ি। অথচ এই প্রথম বার সুন্দরবনে গেলাম! খুব মজা করে শুটিং করেছি ওখানে,’’ বললেন অভিনেতা।
এক সময়ে কলকাতায় ‘শৈলুষিক’ নাট্যদলে অভিনয় করতেন দিব্যেন্দু। সে দলে নাটক লিখতেন, নির্দেশনা দিতেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ও। দিব্যেন্দু বরাবরই চাইতেন, জাতীয় স্তরের নাট্যব্যক্তিত্বদের সঙ্গে কাজ করতে। সেই কারণেই এনএসডি-তে পাড়ি দেওয়া, যেখানে সহপাঠী হিসেবে তিনি পেয়েছেন রাজপাল যাদবকে। মনোজ বাজপেয়ীকে পেয়েছেন সিনিয়র হিসেবে। ছবির দুনিয়ায় আসার পর থেকে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’, ‘দেব ডি’, ‘লুটেরা’র মতো বহু ছবিতে কাজ করেছেন। তবে স্বল্প দৈর্ঘ্যের চরিত্রে। দিব্যেন্দু আরও বেশি করে দর্শকের চোখে পড়তে শুরু করলেন ওয়েব দুনিয়ায় পা রাখার পর থেকে। ‘সেক্রেড গেমস’, ‘ক্রিমিনাল জাস্টিস’, ‘জামতারা’, ‘মির্জ়াপুর টু’ এবং সাম্প্রতিক সময়ের ‘রে’ সিরিজ়ে তাঁর কাজ প্রশংসা পেয়েছে দর্শক-সমালোচকের কাছে। তবে বাঙালি দর্শক কি তাঁকে একটু দেরি করে চিনলেন? ‘‘ও ভাবে আলাদা করে দেখি না আমি। শিল্পী হিসেবে নিজেকে কোনও দিনই গণ্ডিতে আবদ্ধ করে রাখতে চাইনি। বাংলাতেও অল্প কাজ করেছি। ‘ধানবাদ ব্লুজ়’ বলে হইচই-এর একটা সিরিজ় করেছি। এটা ঠিক যে, মুম্বইয়ে কাজ করার ফলে আমি মা-বাবা-বোনকে ততটা সময় দিতে পারিনি। মা মারা গিয়েছিলেন যখন, তখন আমি বিদেশে শুটিং করছিলাম। কাজ ফেলে আসতে পারিনি সে সময়ে। মা খুবই চাইতেন, আমি কলকাতায় এসে কাজ করি। আমার সমসাময়িক কিছু অভিনেতার উদাহরণ দিয়ে বলতেন, ‘এরা এখানে কাজ পেলে তুই কেন পাবি না?’ মায়ের এই ইচ্ছেটা আর পূরণ করা হয়নি,’’ আক্ষেপ ঝরে পড়ল অভিনেতার গলায়।
কলকাতা থেকে মুম্বই ফিরেই ঋভু দাশগুপ্তের ছবির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন অভিনেতা। সঙ্গে রয়েছে ‘জামতারা টু’, ‘খুদা হাফিজ়’-এর সিকুয়েল, ‘আনদেখি টু’, ‘গন গেম টু’র মতো একাধিক প্রজেক্ট। হাতভর্তি কাজে সারাক্ষণই ব্যস্ত থাকে দিব্যেন্দুর ক্যালেন্ডার। তবে মনেপ্রাণে বাঙালি এই অভিনেতার এ শহরে আসা হয় কমই। ‘‘বাংলায় যদি মনের মতো প্রস্তাব পাই, নিশ্চয়ই করব সময় বার করে। সেটা হলে সবচেয়ে খুশি হবে আমার বাবা আর বোন। কলকাতায় এসে ওদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে যেতে পারব বলে,’’ অকপট দিব্যেন্দু।