এনা, নুসরত এবং যশ।
পাঁচতারা হোটেলে তিন তারার রোশনাই। পুজো রিলিজ ‘এসওএস কলকাতা’-র প্রচারের উদ্দেশ্যে। কথা শুরু হতেই মুড বদলে ৩৬০ ডিগ্রি! শুধু ছবির প্রচার নয়, আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে ব্যক্তিগত আড্ডায় মাতলেন নুসরত জাহান, যশ দাশগুপ্ত, এনা সাহা। আফসোস একটাই মিমি চক্রবর্তী যদি লন্ডনের বদলে আড্ডায় থাকতেন...
তিন জনের সাজেই পুজোর গন্ধ। টেনশন আর চাপা খুশি এনার চোখেমুখে। রানি কালারের পালাজো-কুর্তির সঙ্গে প্রিন্টেড সাদা লং শ্রাগ। প্রযোজক, অভিনেতা এনা ভীষণ উজ্জ্বল। টানা এক সপ্তাহেরও বেশি লন্ডনে শ্যুট সেরে নুসরত সদ্য ফিরেছেন কলকাতায়। তাঁকে দেখেও বোঝার উপায় নেই! হলুদ-সাদা লং কুর্তি আর সারারায় টোনড সাংসদ, অভিনেত্রী পুজো রিলিজের উত্তেজনায় ফুটছেন। যশের সাজেও খামতি নেই। সাদার উপরে সোনালি কাজের গুরু কলার পাঞ্জাবি আর চোস্ত।
কে বলবে এঁরাই নাকি জঙ্গি দমন শাখার এক এক জন দুঁদে অফিসার!
তবুও অতিমারির ভয় কেউ পেরিয়ে যেতে পারেননি।
প্রথম ছবি ‘এসওএস কলকাতা’তেই নুসরত, যশ, মিমি ট্রায়ো। এত সাহস কোত্থেকে পেলেন?
এনা: আমিও ভয় পেয়েছিলাম। কাজ ছাড়া চুপচাপ বাড়ি বসে থাকতে থাকতে অবসাদে ভুগেছি। সেই জায়গা থেকে নিজেকে টেনে তুলতেই ভাবনা, কী করতে পারি? তখনই মনে হল প্রযোজক হব। অনেকের সঙ্গে কথাও বললাম। শেষে রাজি হলেন অংশুমান প্রত্যুষ। এটাই ‘এসওএস কলকাতা’-র জন্ম কথা।
(বাকি দুই তারকা ভীষণ মনোযোগী শ্রোতা।
দু’জনেই মুখ খুললেন পরের প্রশ্নে।)
গোয়েন্দা, থ্রিলার ছেড়ে প্রথম ছবিতেই জঙ্গি দমন! তাও পুজোর আবহে?
এনা: (হাল্কা থমকে) অনেক বিষয়ের মধ্যে এটাই বেছে নেওয়া হয়েছিল।
নুসরত: নয় কেন? অ্যাকশন, রোম্যান্স, ড্রামার ককটেল ‘এসওএস কলকাতা’। পুজোয় আর কী চাই!
যশ: বাড়তি পাওয়া দেশপ্রেম। একটা ছবিতে এতগুলো উপাদান মেশানো বা পাওয়া মুখের কথা নয়।
‘প্রযোজক’ এনা সাহার অফারে চমকে গিয়েছিলেন সবাই?
প্রশ্ন শুনেই এনার মুখ ভরা হাসি।
নুসরত: শুরুতে জানতেই পারিনি এনা প্রযোজক। শোনার পর প্রথমে অবাক তার পরেই মনে হল হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। টানা লকডাউনে বাড়িতে বসে বোর। হাতে কাজ নেই। প্রচণ্ড মনখারাপ। এনা সেই জায়গা থেকে যেন বের করে আনল।
যশ: এনা তো সারা শ্যুটিং জুড়ে একের পর এক সারপ্রাইজ দিয়েই গিয়েছেন!
নুসরত (যশকে থামিয়ে দিয়ে): ছোট্ট মেয়ে প্রযোজক। শুনে যেমন তৃপ্তি তেমনি একজন মেয়ে হিসেবে প্রচণ্ড গর্বও হল। বুঝলাম, বাংলা ইন্ডাস্ট্রি আরও পোক্ত হচ্ছে। তখনও বুঝতে পারছিলাম না ছবিটা আদৌ সিনেমা হলে মুক্তি পাবে না ওটিটি-তে! তবে মন থেকে চেয়েছিলাম, সবাই যেন প্রেক্ষাগৃহে বসেই দেখেন ‘এসওএস কলকাতা’।
ছবিতে নুসরতের চরিত্রের নাম ‘ম্যান্ডি'
নতুন প্রযোজকের ছবিতে এমন কী রয়েছে যার আকর্ষণে আপনারা রাজি হলেন?
নুসরত: আমার চরিত্র ‘ম্যান্ডি’। যা আমি নিজে বেছে নিয়েছি। গতে বাঁধা চরিত্র করতে আর ভাল লাগছিল না। কাজ করতে গিয়ে প্রচুর শিখলাম।
যশ: আমিও একমত। ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পর এত বিশ্রাম চট করে কপালে জোটে না। ফলে, প্রথম প্রথম ভাল লাগলেও এক সময় বোর। তাই এনা যখন ডাক পাঠালেন বম্ব স্কোয়্যাড অফিসারের চরিত্রের জন্য, ‘না’ বলার কথা ভাবিইনি। প্রচণ্ড এনার্জি নিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছি।
আরও পড়ুন: তাঁর বদলি হয়েই সুপারস্টার, নিঃস্ব অসুস্থ সেই ফরাজের পাশে দাঁড়ালেন সলমন
চরিত্র ফোটাতে গিয়ে প্রচুর হোম ওয়ার্ক করেছেন? নুসরত যেন আরও রোগা হয়েছেন?
নুসরত: ( আপত্তি জানিয়ে) রোগা নয়! ফিট হয়েছি।
যশের টিপ্পনি: বাংলায় দুটো শব্দ হয়, হয় রোগা নয় মোটা। ফিট শব্দটা তো ইংরেজি!
নুসরত: (যশকে কটাক্ষে বিদ্ধ করে থামিয়ে দিলেন। তার পরেই) ফিট হয়েছি, টোনড হয়েছি বলতে পারেন। অবশ্যই চরিত্রের খাতিরে। অনেক টেকনিক্যাল কথা বলতে হয়েছে। যেগুলো কাজ করতে গিয়ে প্রথম জানলাম। আমরা সত্যি সত্যি তো আর এটিএস বা জঙ্গি দমন শাখার নই! খুব শক্ত স্ক্রিপ্ট। তাই অনেক বার পড়তে হয়েছে। এ ভাবেই কাজ করতে করতে নিজেকে ‘ম্যান্ডি’ বানিয়ে নিয়েছি।
যশ: নুসরত ঠিকই বলেছেন। কাজ করতে করতে শিখেছি সবাই। আমার চরিত্র ‘জাকির’ বাস্তব থেকে নেওয়া। ফলে প্রশ্ন জেগেছিল, এত বড় জঙ্গি হামলা সামলায় যে অফিসার তার শরীরী ভঙ্গি কেমন হবে? পরিচালক, প্রযোজক বলেছিলেন, আমাদের জীবনে অভিনয়টা যেমন রোজের ঘটনা এঁরাও ‘বোমা আছে’ শুনলে বিচলিত হন না।
নুসরত: হ্যাঁ, সাধারণ মানুষ বোমাবাজি হচ্ছে, বোমা রয়েছে বলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তখন আমরা মাথা ঠাণ্ডা রেখে ছক কষি কী করে নাশকতা রুখব।
এনা: বম্ব স্ক্যোয়াডের কর্মীরা কখনও ভাবেনই না, কী হবে! ওঁদের মাথায় একটাই ভাবনা কাজ করে কীভাবে, কী করতে হবে।
ছবি নিয়ে আশাবাদী এনা
অর্থাৎ ছবিতে প্রচুর অ্যাকশন...
নুসরত: হ্যাঁ, আমি অ্যাকশন করেছি। মেয়েরা কিন্তু এই ধরনের দৃশ্যে খুবই সাবলীল। বাড়িতেও ঝগড়াঝাঁটি, মাথার চুল ধরে টেনে দেওয়া, নখ দিয়ে খিঁমচে দেওয়া--- করে থাকেন তো? আমিও সেগুলোই বেশ ‘পলিশড’ ভাবে করেছি। (যশের দিকে তাকিয়ে হাসি)
যশ: যদিও অ্যাকশনের মধ্যমণি ছিলাম আমিই।
এটাই মারাত্মক কৌতূহল, দুই নায়িকাকে সামলালেন কী করে?
নুসরত: খুব বাজে প্রশ্ন! আমরা কি দরজা? যে হ্যান্ডেল করতে হবে! আমরা নিজেরাই নিজেদের সামলে চলতে পারি। (হেসে) যশ ভীষণ শান্ত ছেলে। এনাও তাই-ই। প্রযোজনার পাশাপাশি অভিনয়ও করেছে। নিজের সময়ে এসে চুপচাপ কাজ করে গিয়েছে। আসলে, এতদিন পরে সবাইকে দেখতে পেয়ে খুব খুশি প্রত্যেকেই। ফলে, চুটিয়ে এনজয় করেছি কাজ। আড্ডা মেরেছি অবসরে। আর হ্যাঁ, চিত্রনাট্য হাতে পেয়ে বেশ কিছুদিন লেগেছে ধাতস্থ হতে। লকডাউনে সব ভুলে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, সংলাপ বলতে পারব তো!
যশ: হ্যাঁ, তুমি তুতলিয়েছ ডায়লগ বলতে গিয়ে।
নুসরত: মাত্র দু’বার।
এনা: কেউ কাউকে সামলায়নি। আমরা সবাই এক জোট হয়ে কাজ করেছি রাত জেগে। শ্যুট করতে কলকাতার বাইরে যাইনি। প্রথম দিনের এনার্জি লেভেল বজায় ছিল শেষ দিন পর্যন্ত। আর প্যাম্পার করেছি একে অন্যকে।
আরও পড়ুন: দুবাইতে প্রকাশ্যে এল অনুষ্কার বেবি বাম্পের ছবি
বড় পর্দায় পুজো রিলিজ। কিন্তু দর্শক সংখ্যা মাত্র ৫০ শতাংশ। আপনারা খুশি?
নুসরত: একেবারে বন্ধ থাকার চেয়ে, ওটিটি-তে দেখানর চেয়ে তো ভাল! দর্শক আবার হলমুখী হবেন। এখন এর থেকে বেশি আর কিচ্ছু চাওয়ার নেই।
ছ’টি পুজো রিলিজের মধ্যে ‘এসওএস কলকাতা’ ভাল রেজাল্ট করবে?
নুসরত: আমরা ২০০ শতাংশ ‘কনফিডেন্ট’, ‘লক কর দিয়া যায়ে’!