প্রথম সাক্ষাতে তাঁদের মধ্যে ভাল লাগা বা প্রেমের নামগন্ধ ছিল না। কবে থেকে ডেটিং শুরু করেছেন, মনে পড়ে না সেটাও। ব্যক্তিত্বের দিক দিয়ে দু’জনে সম্পূর্ণ অন্য মেরুর। কী করে প্রেম হল, এখনও দুর্বোধ্য ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত এবং বরখা বিস্তের কাছে। তবে বিয়ের পরে প্রতিদিনই তাঁরা আরও রোমান্টিক হচ্ছেন, মনে করেন এই তারকা দম্পতি।
‘প্যায়ার কে দো নাম, এক রাধা এক শ্যাম’ এই টেলি শো-এর সেটে প্রথম আলাপ তাঁদের। প্রথম সাক্ষাৎ ছিল পুরোপুরি ফর্ম্যাল। কেউ কারও মনে বিশেষ রেখাপাত করতে পারেননি।
২০০৫ সালে সম্প্রচারিত ওই ধারাবাহিকে মূল ভূমিকায় ছিলেন ইন্দ্রনীল ও বরখা। শো চলাকালীন ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয় তাঁদের সম্পর্ক। কিন্তু সেই অন্তরঙ্গতা ছিল শুধুই পেশাদারি বন্ধুত্বের।
অবশেষে কোনও সম্ভাবনা না থাকলেও একে অন্যের প্রেমে পড়লেন। বন্ধুত্বের গণ্ডি পেরিয়ে অন্য দিকে মোড় নিল সম্পর্ক। দু’জনেই বুঝলেন সেটা যখন একে অন্যের থেকে দূরে থাকতেন। মিস করতে লাগলেন একে অপরকে।
অদর্শন কাটাতে দেখা করতে লাগলেন কফি-ডেটে। তার পর ক্রমে সেখান থেকে লাঞ্চ এবং শেষে ডিনার। নিজেদের অজান্তেই চলতে লাগল কোর্টশিপ।
বরখার কথায়, তাঁদের ব্যক্তিত্বের বৈপরীত্যই আকর্ষণ করেছিল দু’জনকে। তিনি প্রাণোচ্ছ্বল এবং বহির্মুখী। অন্যদিকে, ইন্দ্রনীল শান্ত এবং অন্তর্মুখী। কিন্তু অন্তর্মুখী ইন্দ্রনীলই প্রোপোজ করেছিলেন বরখাকে।
হাঁটু মুড়ে বসে আংটি দিয়ে ইন্দ্রনীল প্রোপোজ করেছিলেন প্রেয়সী বরখাকে। উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলতে সময় নেননি অভিনেত্রী। ২০০৮-এর ১ মার্চ উত্তরপ্রদেশে ঘরোয়া অনুষ্ঠানে সাতপাকে বাঁধা পড়েছিলেন তাঁরা। এর পর ৩০ মার্চ তাঁরা পার্টি দিয়েছিলেন। নিমন্ত্রিত ছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁদের বন্ধুরা।
বিয়ের পরে ইন্দ্রনীল আরও রোমান্টিক হয়েছেন আগের তুলনায়। সব সময় চেষ্টা করেন স্ত্রীকে ভাল রাখার। এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, স্বয়ং বরখা। দাম্পত্য তাঁদের কাছে ‘জয়রাইড’।
২০১১ সালে জন্ম হয়েছে তাঁদের একমাত্র সন্তানের। মেয়ের নাম তাঁরা রেখেছেন মেইরা।
ব্যস্ত সূচি থেকে সময় বার করে কিছু সময় মেয়ের জন্য আলাদা করে রেখে দেন বরখা। দরকার হলে মেয়েকে ডেকে নেন শ্যুটিং সেটেও।
বরখার পাশাপাশি কেরিয়ারে ব্যস্ত ইন্দ্রনীলও। তাঁর জন্ম ১৯৭৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। ১৯৯৯ সালে তিনি মডেল হান্ট প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্বে মনোনীত হন। সেই প্রতিযোগিতায় জয়ী হন জন আব্রাহাম।
মডেলিং দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেন ইন্দ্রনীল। বিভিন্ন ডিজাইনারের শো এবং পণ্যের বিজ্ঞাপনে তিনি ছিলেন মুখ্য আকর্ষণ। পরে ফাল্গুনী পাঠকের মিউজিক ভিডিয়ো ‘পল পল তেরে ইয়াদ সতায়ে’-এ অভিনয় করেন তিনি।
বড় পর্দায় ইন্দ্রনীলের প্রথম সুযোগ ২০০৪ সালে। অভিনয় করেন ‘শুক্রিয়া: টিল ডেথ ডু আস অ্যাপার্ট’ ছবিতে। এর পর ‘মুম্বই সালসা’ এবং ‘১৯২০’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
ইন্দ্রনীল অভিনীত বাংলা ছবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘অংশুমানের ছবি’, ‘অটোগ্রাফ’, ‘যদি একদিন’, ‘উড়ো চিঠি’, ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’, ‘অপরাজিতা তুমি’, ‘এলার চার অধ্যায়’, ‘চোরাবালি’, ‘মিশর রহস্য’, ‘সত্যান্বেষী’, ‘কিরীটী ও কালো ভ্রমর’, ‘নীলাচলে কিরীটী’ এবং ‘আসছে আবার শবর’।
বলিউডেও বেশ কিছু ছবিতে ইন্দ্রনীলের কাজ দর্শকদের নজর টেনেছে। ‘কহানি’, ‘সত্যাগ্রহ’ এবং ‘মুল্ক’ ছবিতে তাঁর অভিনয় মুগ্ধ করে সকলকে। ছবির পাশাপাশি ইন্দ্রনীল কাজ করে গিয়েছেন টেলিভিশন এবং ওয়েব সিরিজেও।
বরখাও জনপ্রিয় বিনোদনের বিভিন্ন মাধ্যমে। ‘কিতনি মস্ত হ্যায় জিন্দগী’, ‘কসৌটি জিন্দগী কে’, ‘কাব্যাঞ্জলি’, ‘ক্যায়সা ইয়ে প্যায়ার হ্যায়’, ‘তেনালি রামা’, ‘চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য’, ‘পরমাবতার শ্রীকৃষ্ণ’ ‘শ্রীমান শ্রীমতি ফির সে’-সহ বহু ধারাবাহিকের আকর্ষণ ছিল বরখার অভিনয়।
বলিউডের ছবি ‘রাজনীতি’, ‘গোলিয়ো কি রাস লীলা-রাম লীলা’-য় অভিনয় করেছেন তিনি। টলিউডও সাক্ষী থেকেছে বরখার অভিনয়ের। ‘দুই পৃথিবী’, ‘আমি সুভাষ বলছি’-সহ বেশ কিছু ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি অভিনয় করছেন ওয়েব সিরিজেও।
অনুরাগীদের মতে, ইন্দ্রনীল এবং বরখা দু’জনকেই আর ভাল সুযোগে ব্যবহার করতে পারত বিনোদন দুনিয়া। কিন্তু পাওয়া-না পাওয়ার দ্বন্দ্বে না গিয়ে এই তারকা দম্পতি উপভোগ করছেন তাঁদের রোমান্টিক দাম্পত্য।