রক্ষণশীল পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি অভিনয়ের জগতে এসেছিলেন। বেশ কিছু ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে পরিচিতি এবং খ্যাতিও পেয়েছিলেন। কিন্তু সে সবই অঞ্জলা জাভেরির জীবনে বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। যে রকম ধূমকেতুর গতিতে এসেছিলেন, সে রকমই তাঁর বিদায় ইন্ডাস্ট্রি থেকে। অঞ্জলার নাম আজ বিস্মৃত দর্শকমনে।
১৯৭২ সালের ২০ এপ্রিল অঞ্জলার জন্ম ইংল্যান্ডের পোর্টসমাউথের প্রবাসী গুজরাতি পরিবারে। মাঝে মাঝেই বাবা মায়ের সঙ্গে ইংল্যান্ড থেকে ভারতে আসতেন আত্মীয় পরিজনদের কাছে।
ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন হিন্দি ছবির পোকা। মনে মনে নিজেকে হিন্দি ছবির নায়িকা হিসেবে কল্পনাও করতেন। স্বপ্ন সত্যি হল এক অডিশনে। প্রায় দুশো জনের মধ্যে নির্বাচিত হলেন তিনি। বিনোদ খন্নার ছবি ‘হিমালয় পুত্র’-র নায়িকার ভূমিকায়।
‘হিমালয়পুত্র’ ছিল বিনোদের ছেলে অক্ষয় খন্নারও প্রথম ছবি। ছবিতে যখন অঞ্জলা অভিনয় করতে এসেছিলেন, তখন তিনি ছাত্রী। ইংল্যান্ডে এ লেভেল শেষ করার পরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মেডিক্যাল কোর্স করার। ভেবেছিলেন অভিনয়ের মাঝেই ফিরবেন পড়াশোনায়। কিন্তু তা আর হয়নি। অঞ্জলার মেডিক্যাল কোর্স আর করা হয়নি।
বাবার চূড়ান্ত অসম্মতি এবং মা নিমরাজি। এই অবস্থায় বলিউডে হাতেখড়ি অঞ্জলার। ‘হিমালয় পুত্র’-র পরেও বেশ কিছু ছবিতে তাঁর অভিনয় নজর কাড়ে। ‘বেতাবি’, ‘প্যার কিয়া তো ডরনা কেয়া’-র মতো ছবি তাঁর কেরিয়ারে উল্লেখযোগ্য।
দক্ষিণ ভারতীয় ছবিতেও তাঁর অভিনয় জনপ্রিয় ছিল। তামিল, তেলুগু, মালয়ালম এবং কন্নড় ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। নন্দমুরি বালকৃষ্ণ, চিরঞ্জিবী, নাগার্জুনের মতো প্রথম সারির নায়কের সঙ্গে তাঁর অভিনয় জয় করেছিল বক্স অফিস।
হিন্দির তুলনায় দাক্ষিণী ছবি তাঁকে নাম, যশ ও পারিশ্রমিক, সবই বেশি দিয়েছে। কিন্তু বলিউড বা দক্ষিণের টলিউড, দু’টি ইন্ডাস্ট্রিতেই তিনি ক্রমে পিছিয়ে পড়েন। প্রধান কারণ ছিল ভাষার সমস্যা।
অঞ্জলার মাতৃভাষা ছিল গুজরাতি। তার উপর তিনি বড় হয়েছেন ইংল্যান্ডে। ফলে হিন্দি বা দক্ষিণ ভারতীয় ভাষা, দু’টি ক্ষেত্রেই তা আয়ত্তে আনতে সমস্যা ছিল তাঁর। নবাগতাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়তে থাকেন তিনি।
পর্দায় তাঁর শেষ আবির্ভাব ছিল ২০১২ সালে, তেলুগু ছবি ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’-এ। চরিত্রের নাম ছিল ‘মায়া’।
ক্রমশ কম কাজ করতে থাকায় এমনও অবস্থা হয়েছে যে দর্শকের মনে হয়েছে, অঞ্জলা কি আদৌ জীবিত? তাঁকে নিয়ে এই প্রশ্নে ইন্টারনেটে সার্চও এসেছে। তবে সে সব কেবল রটনা মাত্র। মডেল-অভিনেতা স্বামী তরুণ অরোরার সঙ্গে তাঁর সংসার এখন মুম্বইয়ে। পর্দা থেকে দূরে হলেও ভালই আছেন অতীতের এই ইন্দো-ব্রিটিশ অভিনেত্রী। ছবি : সোশ্যাল মিডিয়া