প্রেম-সাফল্য-সংসার-দুর্ঘটনা-একাকিত্ব। বহু ফিল্মেই এক চরিত্রকে যে যে ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, বাস্তবে তাঁর জীবনেও ঘটেছিল সেগুলোই। সব অতিক্রম করে নিজের এই ‘ফিল্মি লাইফ’ নিয়েই জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। তিনি ভারতের প্রথম মিস্টার ইন্ডিয়া দীপক পারাশর।
১৯৫২ সালে পুণেতে জন্ম দীপকের। পড়াশোনা দিল্লিতে। পড়াশোনা করার সময় তিনি জানতেনও না তাঁর জন্য ঠিক কী অপেক্ষা করছে।
একবার বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বেড়িয়ে তিনি দেখতে পান এক জায়গায় মহিলাদের লম্বা লাইন। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন ‘মিস দিল্লি’ প্রতিযোগিতার জন্য ফর্ম পূরণ চলছে। তার পাশেই ছিল ‘মিস্টার দিল্লি’ হওয়ার জন্য পুরুষদের লম্বা লাইন।
বন্ধুদের জোরাজুরিতেই সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং ‘মিস্টার দিল্লি’ হন। পুরস্কারের সঙ্গে মুম্বই যাওয়ার একটি টিকিটও ছিল। মুম্বই গিয়ে জানতে পারেন ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতায় তাঁকে নামতে হবে। সেই প্রতিযোগিতাও জিতে যান তিনি।
১৯৭৬ সালে এই খেতাব পেয়েছিলেন দীপক। তাঁর সঙ্গে একই মঞ্চে ‘মিস ইন্ডিয়া’ হয়েছিলেন নাফিসা আলি। এর পরই তাঁর মডেলিংয়ে আসা। প্রচুর মডেলিং করেছেন। নানা ব্র্যান্ডের জন্য ফটোশ্যুট করেছেন। কিন্তু তখনও ফিল্মের অফার আসেনি।
১৯৮০ সাল থেকে তিনি ফিল্মে আসেন। তাঁর প্রথম ফিল্ম ‘ইনসাফ কা তরাজু’। এ ছাড়া ‘নিকাহ’, ‘পুরানি হাভেলি’-সহ একাধিক ফিল্ম করেছেন দীপক। ২০০০ সালে তাঁর শেষ ফিল্ম ‘চ্যাম্পিয়ন’। টেলিভিশনেও অভিনয় করেছেন তিনি।
১৯৮৫ সালে তিনি বিয়ে করেন। তাঁর এক মেয়ে রয়েছে। বিয়ের এক বছরের মধ্যেই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে যায় তাঁর জীবনে। ‘নিকাহ’ ফিল্মের জন্য পুরস্কার নিতে দুবাই গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে নৌকাডুবি হয়। সেই নৌকাতে তিনিও ছিলেন।
তাঁর পা চলন্ত ইঞ্জিনের মধ্যে ঢুকে যায়। নৌকার দুই যাত্রীর মৃত্যু হয়। দীপককে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর ওই পায়ে কোনও সাড় ছিল না। পা কেটে বাদ দেওয়া হবে, এমন ঘোষণা করে দিয়েছিলেন চিকিত্সকেরা।
শেষ পর্যন্ত তা করতে হয়নি অবশ্য। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন দীপক। পায়ের সাড়ও ফিরে পান। দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু দেশে ফিরে আসার পর তাঁর জন্য আরও কিছু অপেক্ষা করছিল।
কয়েক মাসের মধ্যেই একমাত্র সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। বিয়ের পর থেকেই তাঁদের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। পরে তা চরমে পৌঁছয়। কী নিয়ে তাঁদের মধ্যে অশান্তির সূত্রপাত তা কোনও দিনই খোলসা করেননি তাঁরা।
তবে পরে তাঁর এক মন্তব্যে দাম্পত্য কলহের কারণ নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়। ২০০৬ সালে ‘বিগ বস’-এর প্রতিযোগী ছিলেন তিনি। সেই রিয়েলিটি শোয়ে তিনি নিজেকে সমকামী বলেন। যদিও এই সত্য জানার জন্যই স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে দেন কি না তা স্পষ্ট করেননি। তবে বলিউডের বিভিন্ন মহল এই কারণকেই দায়ী করে।
সময়টা মোটেই ভাল যাচ্ছিল না তাঁর। নিজের অসুস্থতা এবং ব্যক্তিগত জীবনের অশান্তি, সব মিলিয়ে একাকিত্বে ভুগছিলেন। এর মধ্যে ১৯৯৮ সালে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়।
বাবার মৃত্যুর ১ বছরের মধ্যেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মায়েরও মৃত্যু হয়। এ সবে আরও ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। একটু একটু করে নিজেকে এই একাকিত্ব থেকে বার করেছিলেন তিনি।
তার মধ্যেই ফের অন্ধকার নেমে আসে তাঁর জীবনে। ২০১৬ সালে তিনিও ক্যানসারে আক্রান্ত হন। গলায় ক্যানসার হয়েছিল তাঁর।
চিকিত্সায় আপাতত সুস্থ তিনি। তবে ২০০০ সালে শেষ ফিল্ম এবং ২০১১ সালে শেষ টেলিভিশনে কাজ করেছেন দীপক। তার পর থেকে তাঁকে আর টিভির পর্দায় দেখা যায়নি।