সৃজিত প্রায় ছ’মাস আগেই মৃণাল সেনকে নিয়ে ছবির জন্য যোগাযোগ করেছিলেন চঞ্চলের সঙ্গে। ছবি: সংগৃহীত
মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাবটা প্রথম শুনে ভয় করেছিল তাঁর। প্রথমে কিন্তু-কিন্তু করে সম্মতি দিলেও কিছু দিন ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ ভাব করেছিলেন। যদি পরিচালক তাঁর উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ছবি থেকে তাঁকে বাদ দিয়ে দেন! শুক্রবার বাংলাদেশ থেকে আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন চঞ্চল চৌধুরী। সদ্য পিতৃবিয়োগ হয়েছে চঞ্চলের। নইলে মৃণালের জীবনীচিত্রে শুটিং শুরুর জন্য জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই কলকাতায় আসার কথা ছিল তাঁর। অবস্থার প্রেক্ষিতে তা একটু পিছিয়েছে।
কিন্তু সৃজিত মুখোপাধ্যায় তো অত সহজে ছাড়ার বান্দা নন। ফলে রাজি করিয়েই ছেড়েছেন। শুক্রবার কিংবদন্তি পরিচালকের প্রয়াণবার্ষিকীতে ছবির প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসান সেই ঘোষণা করছেন। সেই সূত্রেই চঞ্চলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করা। যিনি বলছেন, ‘‘আমি তো প্রথমে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম! কিন্তু লোভও হচ্ছিল। সৃজিত’দা প্রায় ছ’মাস আগে আমাকে মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয় করার কথা বলেন। আমি মাঝখানে ধরি মাছ, না ছুঁই পানি ভাব করে এড়িয়ে যাচ্ছিলাম। যদি উনি রেগে গিয়ে আমায় বাদ দিয়ে দেন! কিন্তু উনি নাছোড়বান্দা। আমাকে বারবার অভয় দিয়েছেন। সাহসও দিয়েছেন। অনেক করে বুঝিয়েছেন যে, এই চরিত্রে আমিই ঠিকঠাক। আর আমিও ভাবলাম, যখন কাজটা করতেই হবে, তখন ডুব দিয়েই দিই। বাঁচি কী মরি, সেটা তার পর দেখা যাবে!’’
ঠিক সেই কারণেই এই ছবিকে মৃণালের ‘বায়োপিক’ বা ‘জীবনীচিত্র’ বলতে চান না চঞ্চল। তাঁর কথায়, ‘‘তা হলে আমার উপর চাপটা কম হবে। জীবনীচিত্রে অভিনয় করার সমস্যা হল, আপনি যতই খেটেখুটে নিজেকে তৈরি করে অভিনয় করুন না কেন, লোকে ছবি দেখতে বসে তুলনা করবেই। সেটা খুব চাপের। তাই আমি বলতে চাইছি, এটা মৃণাল সেনের জীবন থেকে ইন্সপায়ার্ড। অনুপ্রাণিত। সৃজিত’দাও তেমনই বলেছেন। পোস্টারেও এই শব্দটা লেখা হচ্ছে। সেজন্য আমার উপর চাপটা একটু কম আছে।’’
চঞ্চলের আরও বক্তব্য, ‘‘সৃজিত’দা নিশ্চয়ই একেবারে হুবহু বায়োপিক না-বানিয়ে নিজের সৃষ্টিশীলতা এবং কল্পনা মিশিয়ে ছবিটা বানাবেন। অন্তত আমাকে তো উনি তেমনই বলেছেন। নইলে একটা লোকের সঙ্গে আর একটা লোকের হুবহু মিল কী করে হবে! আর সেই মানুষ যদি মৃণাল সেনের মতো বিখ্যাত হন, তা হলে তো লোকে তাঁর চরিত্রে অভিনয়কারী শিল্পীকে আরও বেশি করে খুঁটিয়ে দেখবে।’’
কী ভাবে নিজেকে তৈরি করছেন মৃণালের চরিত্রের জন্য? চঞ্চল বলছেন, ‘‘চরিত্রটা করি বা না করি, বিষয়টা নিয়ে প্রথম থেকেই চিন্তাভাবনা শুরু করি। কারণ, সবচেয়ে আগে হল মগজ। মগজটা তো ঠিক করতে হবে। এই ছবিটা নিয়ে সৃজিত’দার সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা কথা হয়েছিল ছ’মাস আগে। তার পরে শেষ এক-দেড়মাস আরও অনুশীলন করেছি। সৃজিত’দা আমাকে চিত্রনাট্য পাঠিয়েছেন। মৃণালবাবুর প্রচুর ছবি, ফুটেজ পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেগুলো নিয়মিত দেখছি। আসলে এই ধরনের একটা চরিত্রে অভিনয় করার জন্য অন্তত ছ’মাসের প্রস্তুতি প্রয়োজন। কিন্তু আমার হাতে অতটাও সময় নেই। তবুও চেষ্টা করছি। যাতে লোকে অন্তত এটুকু বুঝতে পারেন যে, মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয়ের যোগ্যতা আমার আছে।’’