সুজান-হৃতিক।
হৃতিকই প্রস্তাবটা দিয়েছিলেন সুজানকে। অস্থির অবস্থায় তাঁদের দুই ছেলে রেহান এবং হৃদান যেন বাবা-মা দু’জনকেই কাছে পায়, সেই চেষ্টাই করেছিলেন তিনি।তাই সুজানকে বাড়িতে আসতে বলেছিলেন। সুজানও রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে এসেছিলেন প্রাক্তনের বাড়ি। নিন্দুকেরাও পরিস্থিতি বুঝে সরব! কী হতে চলেছে সে নিয়ে তাদের বিস্ময়ের অন্ত ছিল না। কিন্তু ঠিক কী বলেছিলেন সুজান?
“বুঝেছিলাম এই সাংঘাতিক সময়ে আমাদের প্রত্যকেরই প্রত্যেককে দরকার। সেই চিন্তা মাথায় নিয়ে, ভালবাসার জন্যই আমাদের ‘লকডাউন অ্যাডভেঞ্চার" শুরু হয়, বলেছিলেন সুজান।
আরও পড়ুন- মা হচ্ছেন শুভশ্রী
প্রথম দিনেই এই কোয়রান্টিন পিরিয়ড কী করে কাটান যায় তা নিয়ে চারজন মিলে বসে একটা লম্বা লিস্ট বানিয়েছিলেন। হৃতিক নিয়ম বানিয়েছিলেন সপ্তাহে পাঁচ দিন চারজনে মিলে একই ঘরে বসে অন্তত এক ঘন্টার জন্য তাঁদের প্রিয় প্রিয় বই পড়বে। সুজানের সবচেয়ে প্রিয় কাজ এটাই।হয়তো সে কথা মাথায় রেখেই হৃতিক এই প্রস্তাব দেন! অন্যদিকে রেহান গান ভালবাসে, স্কুলের মিউজিক ব্যান্ডের সদস্য সে, ভিডিয়ো কলে চলছে তার জ্যাম-সেশন। আর হৃদান আবার ভাল আঁকে। সে মন দিয়েছে সেই কাজেই।
সন্ধেবেলা হলেই মজা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ‘জিম ট্রেনার’ অর্থাৎ হৃতিকের কাছে ওয়ার্কআউট সেশন নেওয়ার বাড়তি পাওনা। হৃতিকের ওই ডাক সুজানের কাছে ছিল ‘ওয়েকআপ কল’, জীবনকে নতুন ভাবে চেনার আহ্বান। “লকডাউন পরবর্তী জীবন সবারই বেশ অন্যরকম হতে চলেছে। লকডাউনে নিজে থেকেই আসছে পরোপকার করার ইচ্ছে, শেখাচ্ছে দয়া, মায়া, মমতা। বুঝিয়ে দিচ্ছে আশেপাশের মানুষগুলোর প্রয়োজনীয়তা। একে অপরকে চেনা-জানার সবচেয়ে ভাল সময় এই লকডাউন। পরিবারের সদস্যদের কাছাকাছি আনার যে অভ্যেস লকডাউন করে দিল ভবিষ্যতেও এর রেশ থেকেই যাবে”, মনে করছেন সুজান।
আরও পড়ুন- কোয়েল, শুভশ্রীর পর এবার অঙ্কিতা, টলিপাড়ায় লাগাতার ‘গুড নিউজ’
A post shared by Hrithik Roshan (@hrithikroshan) on
লকডাউন কালে সুজান যখন প্রথম বার হৃতিকের বাড়িতে আসে তখন ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট করেছিলেন হৃতিক। সুজানকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি লিখেছিলেন, “এই কো প্যারেন্টিংয়ের জার্নিতে হাত মেলানোর জন্য থ্যাংক ইউ, সুজান”।
বিচ্ছেদ বা ঝগড়ার পরিবেশ সৃষ্টি হলেও আসলে সুজান এবং হৃতিক ছোটবেলার বন্ধু। একসঙ্গে বেড়ে ওঠা তাঁদের। কৈশোরে বন্ধুত্ব গড়ায় প্রেমে। চার বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর অবশেষে ২০০০ সালের ২০ ডিসেম্বর বিয়ে করেন তাঁরা। সে সময় হৃতিক সবে কেরিয়ার শুরু করেছেন, আর শুরুতেই তিনি খ্যাতির চূড়ায়। করিনার সঙ্গে তাঁর প্রেমের আভাস পাওয়া গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু সে সবকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে সুজান আর হৃতিক অচিরেই হয়ে উঠলেন বলিপাড়ার পাওয়ার কাপল। এর মধ্যেই জন্ম হয় তাঁদের দু’ই ছেলে রেহান এবং হৃদানের। ভরা সংসার। কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন। ‘কাইটস’ ছবিতে হৃতিকের কো-স্টার বারবারা মোরির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা পেজ-থ্রি হেডলাইন দখল করে নেয় অচিরেই।
সুজান বাপের বাড়ি চলে যান। যদিও কিছু দিন পর হৃতিক বাড়ি নিয়ে আসেন তাঁকে। কিন্তু চিড় ধরেই গিয়েছিল। আর জোড়া লাগেনি। ২০১৪ তে সবাইকে অবাক করে দিয়ে আলাদা হয়ে যান এই কিউপিড কাপল। এরই মধ্যে সুজানের পরকীয়ার গুঞ্জনও সামনে আসে। শোনা যায়, তিনি নাকি অভিনেতা অর্জুন রামপালকে ডেট করছেন। যদিও অর্জুন এবং তাঁর তৎকালীন স্ত্রী গোটা বিষয়টিকে গুঞ্জন বলে উড়িয়ে দেন। ও দিকে হৃতিকের জীবনে আসে কঙ্গনা ঢেউ। কঙ্গনার আর হৃতিকেত লড়াইয়ের জল আদালতে গড়িয়েছিল। কঙ্গনা দাবি করতে থাকেন হৃতিক তাঁর বয়ফ্রেন্ড ছিলেন আর হৃতিকে তা অস্বীকার করে যেতে থাকেন। ২০১৬ নাগাদ পেজ- থ্রির হেডলাইন দখল করে রেখেছিলেন ওঁরাই। এ দিকে সে সময় সুজান পাশে দাঁড়িয়েছিলেন হৃতিকে। ব্যাস, গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছিল, আবার ফিরতে চাইছেন তাঁরা। কিন্তু না, হৃতিক-সুজান দু’জনেই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন বন্ধুত্ব আছে, কিন্তু আবার একসঙ্গে ঘর করা, নৈব নৈব চ।
তারপর কেটে গিয়েছে অনেক গুলো বছর। মাঝে যদিও ছেলেদের নিয়ে একসঙ্গে ট্রিপে গিয়েছিলেন ওঁরা। তবে তার মধ্যে প্রেম ছিল না, কর্তব্য ছিল, খোলসা করেছিলেন দু’জনেই। কিন্তু লকডাউন যেন সব হিসেব কেমন তালগোল পাকিয়ে দিল। একসঙ্গে কাটান এতটা সময় যেন চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিল যাই হোক না কেন, ওঁরা অবিচ্ছেদ্য।
জুড়তে চলেছে ভাঙা মন? বলবে লকডাউন উত্তর পরিস্থিতি।